রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৬ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার উল্টো চিত্র বিরাজ করছে রাজশাহীর তানোরে। এখানে বিজয়ী নয়, পরাজিত প্রার্থীর কর্মী সমর্থকরা একের পর এক হামলা ভাংচুর চালিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ালেও ঘটনার ৭দিনেও মামলা নেয়া হয়নি। এড়িয়ে গেছে থানা পুলিশ। ফলে ওই এলাকার স্থানীয় আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যেকোন মুহুর্তে ঘটতে পারে আবারও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে তানোর উপজেলা আ.লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী কাঁচি প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিযোগীতা করে তানোর উপজেলায় ৪৯ হাজার ১০৯ ভোট আর গোদাগাড়ীতে ৪৩ হাজার ৩১০ ভোট মিলে ৯২ হাজার ৪১৯ ভোট পান। কিন্তু আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী নৌকা প্রতীকে তানোরে ৪৩ হাজার ৩১০ ভোট আর গোদাগাড়ী উপজেলায় ৬০ হাজার ১৭৩ ভোট মিলে ১ লক্ষ ৩ হাজার ৫৯২ ভোট পান। নিকটতম প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর চেয়ে ১১ হাজার ১৭৩ ভোট বেশি পেয়ে চতুর্থ বারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ফারুক চৌধুরী।
তবে, ফারুক চৌধুরীর বিজয় তানোরে হয়নি। তাহলে এমপি কিভাবে হয় ইত্যাদি বিষয়ে রাব্বানীর কর্মী সমর্থকরা বিভিন্ন চায়ের দোকানে ও পাড়া মহল্লায় তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে হামলা চালাচ্ছে এমপি ফারুক চৌধুরীর নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর। এমনই ঘটনা ঘটেছে অহরহ।
সম্প্রতি ৪ ফেব্রয়ারী রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তানোর পৌর এলাকার কাশিম বাজারস্থ তানোর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের সামনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী গোলাম রাব্বানীর কর্মী সমর্থকরা এমপি ফারুক চৌধুরীর নেতাকর্মীদের পাঁকড়াও করে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এতে গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয় আকচা ফকিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কুতুব আলীর পুত্র মো. নিশি উদ্দিন (২৩), নাসির উদ্দিন (২৮) ও ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. সালাউদ্দিন (২৮)। পরে স্থানীয়রা চিকিৎসার জন্য তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এনিয়ে মো. নয়ন আলী বাদী হয়ে ঘটনার পরদিন ৫ ফেব্রুয়ারী ৯ জনের বিরুদ্ধে তানোর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এরআগে নৌকার বিজয়ে কর্মী সমর্থকদের শুভেচ্ছা জানাতে ভোটের পরদিন ৮ জানুয়ারী বিকেল ৪টার দিকে কাশেম বাজারে যান তানোর পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সুজন, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রামিল হাসান সুইট ও দপ্তর সম্পাদক নাইম উদ্দিন। এসময় এমপি ফারুক চৌধুরীর জায়গায় দোকানপাঠ করে যারা কাঁচি প্রতীকে ভোট দিয়ে বেইমানি করেছেন। আপনারা এ মাসের মধ্যে সবাই এমপির জায়গা থেকে দোকানপাঠ তুলে নিয়েন ইত্যাদি বলায় হামলা তাণ্ডব চালায় রাব্বানীর সমর্থক আরব আলী, মাসুদ (৩৫), মাজেদ (৩০) সালাম আর্মি (৪৫), আসলাম উদ্দিন (৫০), দুলাল হোসেন (৩৫) ছাড়াও বেশ কয়েকজন। এতে অনেক কর্মী-সমর্থকরা আহত হন। ঘটনাটি নিয়ে উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের দপ্তর সম্পাদক নাইম উদ্দিন বাদী হয়ে ঘটনার দিন থানায় অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে এএসআই ফরিদ ঘটনা তদন্ত করে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান ৭ নম্বর ওয়ার্ড সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সালাউদ্দিন। তবে, সম্প্রতি ৪ ফেব্রুয়ারী নিশি, নাসির, সালাউদ্দিন ও নয়নের ওপর হামলার অভিযোগ ১০ ফেব্রুয়ারী থানার এসআই মিজান ঘটনাস্থল তদন্ত করেছেন। কিন্তু এরির্পোট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
অপরদিকে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভাস্থ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। পরে ভোট গণনা শেষে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা জনস্বাস্থ্য সহকারী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন প্রাপ্ত ভোটের রেজাল্ট প্রকাশ্য স্থানে শুনানী করেন। এসময় প্রিজাইডিং অফিসার নৌকা প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৭৬৩। আর কাঁচি প্রতীকের প্রাপ্ত ভোট ৬৬৩ বলে ঘোষণা দেন। তখন কাঁচি প্রতীকের সমর্থকরা উত্তেজিত হয়ে প্রিজাইডিং অফিসারকে পূনরায় ভোট গণনার জন্য চাপ দেন। পরে পূনরায় ভোট গণনা করা হলেও একই ফলাফল পাওয়া যায়।
এতে আ.লীগের বিদ্রোহী কাঁচি প্রতীকের প্রার্থী গোলাম রাব্বানীর ছোট ভাই শরিফুল ইসলাম (৫০) সহ বিপুল সংখ্যক বখাটে ক্ষিপ্ত হয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসার অবরুদ্ধ ও আনসার, পুলিশ আর বিজিবির উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এঘটনার পরদিন ৮ জানুয়ারী সোমবার দিবাগত রাতে মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইন্সপেক্টর মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে এক মেয়রপুত্র ও ভাইসহ নামধারী ২৮ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তানোর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। যার মামলা নম্বর-৬। ওই মামলার সূত্রধরে সোমবার রাতেই মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমানের পুত্র সাদসহ ৭ ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
এদিকে, আ.লীগের দলীয় অফিস ভাংচুর ও হামলার ঘটনা নিয়ে উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিল মুহাম্মাদ হোসেন মন্টু বাদী হয়ে ঘটনার দিন ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তবে, এই মামলা হতে সবাই বিজ্ঞ আদালত হতে জামিনে মুক্ত আছেন। এছাড়াও ভোটের পরে প্রত্যেক ইউনিয়ন পৌরসভায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। কিন্তু পুলিশ অজ্ঞাত কারণে এড়িয়ে গেছে। তবে, নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী গোলাম রাব্বানীর মোবাইলে ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি।
এব্যাপারে তানোর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহিম বলেন, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় থানায় দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। তবে, কাশিম বাজারে নৌকার কর্মী সমর্থকদের উপর হামলা ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত করেছে বলে জানান ওসি। রা/অ