রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৫৮ am
ডেস্ক রির্পোট :
রাখাইন রাজ্যে চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সীমান্তরক্ষীদের (বিজিপি) ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ পর্যন্ত ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। একেই বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন নিয়ে জটিলতা কাটছে না। এমতাবস্থায় নতুন করে সীমান্তরক্ষীদের আশ্রয়দানের পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে করে বাংলাদেশকে বুঝেশুনে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। এসব বিষয় যত দ্রুত সম্ভব আন্তর্জাতিক ফোরামে তুলে ধরারও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। আমাদের সময়ের সঙ্গে আলাপচারিতায় এমন পরামর্শ দিয়েছেন বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
রাখাইনে গত কয়েকদিন থেকে চলছে বিরামহীন গুলির আওয়াজ। বুধবার পর্যন্ত মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি ও সেনাসদস্যসহ মোট ৩২৮ জন বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গার বোঝা মাথায় নিয়ে চলা বাংলাদেশের সামনে তাই স্বাভাবিকভাবে নতুন সংকট তৈরি হয়েছে। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, আর একজনকেও বাংলাদেশে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
মিয়ানমারের সেনাদের পালিয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা নতুন নয় বলে জানালেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ। তিনি বলেন, ভারতের সীমান্তে এর আগে এমনটা হয়েছে। গত বছরও দেশটিতে আশ্রয় নেয়। ভারত সরকার দ্রুত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। চীনও তাই করেছে।
ড. ইমতিয়াজ জানান, পশ্চিমা সমর্থিত মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপ পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) জান্তা সরকারের ওপর হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে। তবে চীন চায় না পিডিএফ একক ক্ষমতা কাঠামো তৈরি করুক। সে কারণে তারা আরাকান আর্মিসহ বিভিন্ন গ্রুপকে সহায়তা দিচ্ছে। তিনি বলেন, আরাকান আর্মি সব দিক থেকে তাদের ক্ষমতা শক্তিশালী করেছে। অনেক জায়গা দখলও করেছে। যার প্রভাবে মিয়ানমারের জান্তা সেনারাও অনেক সময় পিছু হটছে। যাদের অনেকে বাংলাদেশে আশ্রয় পর্যন্ত নিয়েছে। যত দ্রুত পারা যায় তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো দরকার। তার আগে দেখে নিতে হবে ভারত ও চীন কীভাবে বিষয়টি সমাধান করছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. ইমতিয়াজ বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর নতুন করে হামলা হলে গণহত্যা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এ কারণে তাদের ওপর হামলার ঘটনা দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগ নেই বলে মনে করেন এই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক।
রাখাইনে সংঘর্ষ চলতে থাকলে তা ভারত ও চীনের জন্যও হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে জানান ড. ইমতিয়াজ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উচিত বড় আকারে এ দুই দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতে যাওয়ার আগে ইতোমধ্যে জানিয়েছেন তিনি ভারতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। সেই আলোচনায় ভারতকেও কথা বলতে হবে। আর যদি বাংলাদেশের দিকে হতাহত আরও বেড়ে যায় এবং মর্টারশেল বন্ধ না হয়, তা হলে আন্তর্জাতিকীকরণ আরও বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি জাতিসংঘে যদি বিষয়টি উঠাতে হয়, তা হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। বিভিন্ন ফোরামকে কাজে লাগাতে হবে।
রাখাইন পরিস্থিতির ভবিষ্যৎ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ওপর প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, রাখাইনের সংঘাতের ওপর এ অঞ্চলে চীন-ভারতের দ্বন্দ্বও নির্ভর করবে। পালিয়ে আসারা কোনো বন্দি নয়, আবার শরণার্থীও নয়। তারা একটা পক্ষ ত্যাগ করে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। এখন বিজিবির হেফাজতে রাখা মানে হচ্ছে, তারা যে এখানে এসে আত্মসমর্পণ করেছে, সেটা গৃহীত হয়েছে।
এই নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, রাখাইন অঞ্চলে ভারত, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বলয় তৈরি হয়েছে। কাজেই রণক্ষেত্র না হলেও বাংলাদেশ একটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক আঙ্গিকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সীমান্ত এবং সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পথ খোঁজা জরুরি। পরিস্থিতি কীভাবে সামাল দেবে, সেটা সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। রা/অ