রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৫৮ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে ভূমিহীনপল্লীর বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন প্রটেকশান ওয়াল গুড়িয়ে দেবার অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার তানোর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত অনুমতি ব্যতিত খাসপুকুরে প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণের অভিযোগে এই প্রটেকশান ওয়াল ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিয়েছেন।
উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রকাশনগর জাটভাঙ্গী মহল্লায় এই ঘটনা ঘটেছে। এদিকে প্রত্যন্ত পল্লীর একটি পুকুরপাড়ের প্রটেকশান ওয়াল গুড়িয়ে দেবার খবর ছড়িয়ে পড়লে জনমনে মিশ্রপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে, উঠেছে সমালোচনার ঝড়।
সচেতন মহলের ভাষ্য, যেখানে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাস সম্পত্তি, হাট ও জেলা পরিষদের জায়গা বেদখল, পুকুর জবর-দখল, পুকুর খনন, ফসলি জমির টপসয়েল বাণিজ্যে, ভিপি সম্পত্তিতে পুকুর খননের মতো ঘটনা ঘটছে, সেখানে প্রত্যন্ত পল্লীর পুকুরের প্রটেকশান ওয়াল গুড়িয়ে দিয়ে ১৫টি বসতঘর হুমকিতে ফেলা কতটা যুক্তিযুক্ত ? সেটা অবশ্যই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্তের দাবি রাখে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রত্যন্ত পল্লীর প্রকাশনগর জাটডাঙ্গী মহল্লায় সরকারি খাসপুকুর রয়েছে। এদিকে পুকুর পাড়ের চারদিকে প্রায় দুইযুগ ধরে ১৫টি ভুমিহীন পরিবার বসতঘর নির্মাণ করে বসবাস করছেন। তবে, পুকুরপাড় ভেঙে এসব বসতঘর হুমকির মুখে পড়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পৌর মেয়রের দুয়ারে ধর্ণা দিয়েও পুকুরপাড়ে প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণ করতে পারেননি কেউ। এতে তাদের বসতঘর হুমকির মুখে পড়েছে।
ফলে বসতঘর রক্ষায় ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দারা বাধ্য হয়ে সকলে চাঁদা তুলে পুকুরপাড়ে প্রটেকশান ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ২২ জানুয়ারি সোমবার থেকে তারা প্রটেকশন ওয়ালের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু গত ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার কোনো পুর্বঘোষণা ব্যতিত, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত এসব প্রটেকশন ওয়াল গুড়িয়ে দিয়েছেন। অথচ একই পুকুর পাড়ের খাস জায়গা দখল করে প্রকাশনগর মহল্লার বাসিন্দা ও মেয়র সাইদুর রহমানের অনুগত আব্দুল আলিম ফ্ল্যাট বাড়ি করছেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটা বহাল রাখা হয়েছে।
এনিয়ে ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম অসন্তোষের পাশাপাশি উদ্বেগ-উৎকন্ঠা দেখা দিয়েছে। এঘটনায় ভুমিহীন পল্লীর অসহায় বাসিন্দারা সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ওই ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম (৫৫), রফিকুল ইসলাম (৫০), মোস্তাফিজুর রহমান(৪৫) আনু বেওয়া ও (৬০) গোলেনুর (৫০) জানান, পুকুর পাড়ের চারপাশে ১৩টি ভুমিহীন ও ২টি ব্যক্তি মালিকানাধীন বসতঘর রয়েছে। তারা বলেন, এদের মধ্যে বিষা ও তার পুত্র মেহেদী মাদক ব্যবসা করে। তারা পিতা ও পুত্রসহ আব্দুর রহিম ও আলমগীর মেয়র সাইদুর রহমানের অনুগত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা প্রকাশ্যে আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী কাঁচি প্রতিকের ভোট করেছেন। তাদের কথা মতো কাঁচি প্রতিকে ভোট না দেয়ায় তারা সংঘবদ্ধ ভুমিহীন পল্লীর বাসিন্দাদের ওপর নানা জুলুম-নির্যাতন শুরু করেছেন। আনু বেওয়া বলেন, আব্দুর রহিম ও মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে তাকে মারপিট ও তার লাগানো দুটি গাছ কাটাসহ পুকুরের মাছ লুট করা হয়েছে।
এবিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আবিদা সিফাত তাঁর সরকারি মোবাইল ফোন রিসিভ না করায় তাঁর কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। এনিয়ে আব্দুল আলিম বলেন, তার ওটা কেনা জায়গা, তবে অল্প কিছু খাস তার ভেতর পড়েছে বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শরিফ খাঁন বলেন, ভুমিহীনদের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে সেটা দুঃখজনক। আমরা বিষয়টি নিয়ে এমপি ফারুক চৌধুরী মহোদয়কে অবগত করে ভূমিহীনদের বসবাসের সুব্যবস্থা করা হবে বলে জানান এই নেতা। রা/অ