শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৫৭ am
শহিদুল ইসলাম (নিজস্ব প্রতিবেদক) নাচোল :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা করছেন কৃষক ও নাচোল উপজেলা কৃষি অফিস।
৪ টি ইউনিয়ন, কসবা, ফতেপুর, নাচোল সদর, নিজামপুর ও ১টি পৌরসভা নাচোল, নিয়ে গঠিত এই উপজেলা। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা করছেন কৃষক ও কৃষি অফিস।
উপজেলার মাঠ জুড়ে যেন হলুদের সমাহার। তাকালেই দুই চোখে দেখা যায় হলুদ আর হলুদ। যেন অলংকারে সেজেছে প্রকৃতি। বাতাসে হেলে দুলে সরিষার ফুলগুলো সুভাষ ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিদিকে। আর মৌমাছি দল বেঁধে সরিষার ফুল থেকে মধু আহরণ করছে।
এ বছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১০০ মেট্রিক টন জমিতে। ১০৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে অর্জিত হয়েছে ৯০৫০ হেক্টর জমি। নতুন জাতের বিনা-৯, বারি-১৪,১৭ এবং ১৮ জাতের সরিষা।
তৈল জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমন মৌসুমের শুরু থেকেই নাচোল উপজেলা কৃষি অফিস সরিষার আবাদের কার্যক্রম শুরু করেন। কৃষকরা জানান, সরিষা চাষে দ্বিগুন লাভ। সরিষার ফুল ও পাতা ঝরে জমিতে জৈব সার তৈরি হয়। এ ছাড়া সরিষা কাটার পর অল্প সার প্রয়োগ করে বোরো ধানের চাষ করা যায় ভালো।
সরজমিনে সরিষার মাঠ ঘুরে দেখা গেছে সরিষা খেতে ফুল ফুটেছে, সুন্দর বীজও আসতে শুরু করেছে। এতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন চাষীরা। লাভের আশায় তাদের মুখে এখন হাসি।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়াই এবারও সরিষার চাষে আগ্রহী হয়েছেন কৃষকরা। সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় বিনামূল্যে বীজ ও সার পাওয়ায় সামান্য খরচে জমি চাষ করে সরিষা চাষে কৃষি অফিস সার্বিক সহযোগিতা করছেন। বাজারে সরিষার নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয় এ দাবি জানান কৃষকরা।
নাচোল উপজেলা কৃষি অফিসার সলেহ্ আকরাম জানান, এবছর সরিষার আবাদ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০৫০ হেক্টর জমি বেশি আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১০০ হেক্টর এবং অর্জিত হয়েছে ৯০৫০ হেক্টর জমি।
কৃষি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সরকারি প্রণোদনার আওতায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৭ হাজার কৃষকদের মাঝে সরিষা আবাদের লক্ষ্যে প্রত্যেক কৃষককে এক বিঘা জমিতে চাষের জন্য, সরিষার বীজ ১কেজি, রাসায়নিক সার ১০ কেজি করে ডিএপি ও পটাশ বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা। এ বছর সরিষার উৎপাদন ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৫৭৫ মেট্রিক টন।
সরিষা চাষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। সরিষা গাছের পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করে, জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতীয় সরিষা আবাদের পরপরই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই কৃষকদের সরিষা চাষের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা সরকার বলেন, কৃষি বান্ধব সরকার কৃষকদের দুখ- দুর্দশার কথা চিন্তা করে এই কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিভিন্ন সময়ে সার, বীজ বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন।
কৃষি অফিস ও নাচোল উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কৃষির উন্নয়নে বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ ও মতবিনিময় করে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, নিজের ফসল নিজেরাই উৎপাদন করতে হবে। যতটুকু জমি আছে বাসাবাড়ির আঙ্গিনা সহ সবপতিত জায়গায় কৃষি কাজ করতে হবে। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করে খাদ্যে পরিপূর্ণ হতে হবে।
চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় কৃষি প্রণোদনার আওতায় বিনামূল্যে ৭ হাজার কৃষকের মাঝে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এর সুফল পেতে চলেছে কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশাতীত সরিষার ফলন ঘরে উঠবে।
কৃষি ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানকে সাধুবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার সব সময় কৃষকদের কল্যাণে কাজ করে চলেছেন। রা/অ