শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৪১ pm
আশরাফুল ইসলাম রনজু, ইমরান হোসাইন :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনটি অন্যান্য আসনের চেয়ে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে রয়েছে। রাজশাহীর সংসদীয় ৬টি আসনের মধ্যে এই আসনটিতে যেমন প্রার্থী সংখ্যা বেশি, তেমন রয়েছে আলোচনা-সমালোচনাও। এ আসনে ১১ জন প্রার্থীদের মধ্যে একজন চলচিত্র নায়িকা ভোটে অংশ নিয়েছেন। যার কারণে এ আসনের দিকে নজর সবার। অনেক আগে থেকেই এ আসনটির মাঠ গরম করে রেখেছেন প্রার্থীরা।
বিশেষ করে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থীদের মধ্যে তিনজনকে ভোটে অংশ নিতে আদালত পর্যন্ত দৌঁড়াতে হয়েছে। আবার কেউ অনেক দেরিতে প্রার্থীতা ফেরত পেয়েছেন। তারপরও সব প্রার্থী আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছেন জয়ের মালা গলায় পরায় আশায়। তবে এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র ৪ প্রার্থীর মধ্যে একজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এখনো মাঠে আছেন তিন স্বতন্ত্র প্রার্থী। বলা যায়, এ আসনে নৌকার প্রার্থীকে তিনদিক থেকে ঘিরে ধরেছে এসব স্বতন্ত্র তিন প্রার্থী। তবে, এসব স্বতন্ত্র প্রার্থীর চেয়ে এখনো নৌকার পালে বাতাস বেশি বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী (নৌকা), মাহিয়া মাহি (ট্রাক) ও গোলাম রাব্বানী (কাঁচি), বিএনএম’র শামসুজ্জোহা বাবু (নোঙর), বিএনএফের আল-সাআদ (টেলিভিশন), তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু (সোনালী আঁশ), এনপিপির নুরুন্নেসা (আম), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের বশির আহমেদ (ছড়ি), জাতীয় পার্টির শামসুদ্দীন (লাঙ্গল), আয়েশা আক্তার ডালিয়া (বেলুন), আখতারুজ্জামান আক্তার (ঈগল) প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
গত ১৫ বছর ধরে এ আসনে জনগণের ভোটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন বর্তমান এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি। এই আসন থেকে তিনি শিল্পপ্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। দলীয় দূর্নীতিবাজ কিছু নেতাকর্মী, শিক্ষক ও জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি অবস্থান নেয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হয়। এছাড়াও তিনি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন না এমনটাও ধারণা করেছিলেন অনেকেই। যার কারণে এই আসনে নৌকা প্রত্যাশির সংখ্যা বেশি ছিল। এতেও লাভ হয়নি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুনরায় নৌকা উঠেছে ওমর ফারুক চৌধুরির হাতেই। তিনি নৌকা পেলেও আওয়ামী লীগেরই সুবিধাবাদী স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, মাহিয়া মাহি, আয়েশা আক্তার ডালিয়ার মত প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসনটি উদ্ধার করতে সক্ষম হবে ফারুক চৌধুরি। এমনটি বলছেন তৃণমুল ভোটাররা।
জানা গেছে, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রভাবশালী ক্যাবিনেট মন্ত্রীর ভাইকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিন হন আ.লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। ফলে গত ১৫ বছর ওমর ফারুক চৌধুরি এই আসনে জনগণের ভোটে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী ছাড়া তানোর ও গোদাগাড়ীর আ.লীগকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করেছেন তিনি।
এই আসনে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন সুবিধাবাদী গোলাম রাব্বানী। ফারুক চৌধুরী বিরোধীরাই এখন গোলাম রাব্বানীর নিজস্ব ভোটার। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এ আসনটি বাগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলেও পারেননি। মুন্ডুমালা পৌরসভা গিলে খেয়েও দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনেও নৌকা প্রত্যাশি ছিলেন রাব্বানী। কিন্তু নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোট করছেন তিনি। গোলাম রাব্বানী একজন সুবিধাবাদী আ.লীগ বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। বর্তমান তার সাথে যোগ হয়েছে অপর আরকে সুবিধাবাদী স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তারুজ্জামান। আক্তার নির্বাচন থেকে সরে গিয়ে সুবিধুবাদী প্রার্থী গোলাম রাব্বানীকে সমর্থন দিয়েছেন। এতে গোলাম রাব্বানী ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
আওয়ামী লীগেরই অপর স্বতন্ত্রপ্রার্থী চিত্র নায়িকা মাহিয়া মাহি। তিনি বেশ কয়েক বছর ধরে তানোর গোদাগাড়ীতে আসা-যাওয়া করেছেন। মাহি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার আবেদনকারী ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি নৌকা পাননি। নৌকা না পেলেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবার মাহিকে নিয়েই মূলত এই আসনে আলোচনা-সমালোচনা বেশি হচ্ছে। মাহিকে সাধারণ মানুষ সিনেমার পর্দায় দেখেছেন। কিন্তু এবার সামনে থেকে দেখার আশায় লোকজন তার গণসংযোগে হাজির হচ্ছেন। মাহিকে যারা ভোট দেবেন তারা তো বটেই, যারা ভোট দিবেন না তারাও তাকে দেখার জন্য উপস্থিত হচ্ছেন গণসংযোগে।
সেই জায়গা থেকে মাহি অল্প সময়ের মধ্যে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। এখন মাঠ পর্যায়ে দেখা যাচ্ছে, ফারুক চৌধুরির বড় শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বি বলতে মাহি ও ডালিয়া। ফারুক চৌধুরিকে জয়ী হতে হলে এসব প্রার্থীকে পেছনে ফেলে জয়ী হতে হবে। যদিও ভোটাররা বলছেন, ফারুক চৌধুরি পুনরায় এ আসনে নির্বাচিত হবেন। কারণ তিনি এলাকার অনেক উন্নয়ন করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যাও বেশি। তিনি ও তাঁর পুরো পরিবার নির্বাচনী মাঠে নেমে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করে ভোটারদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। যার কারণে ফারুক চৌধুরির উপর যারা ক্ষিপ্ত ছিলেন তারাও তার সাথে কাজ করছেন। রা/অ