রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:২৬ pm
ডেস্ক রির্পোট :
রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) রিজার্ভ অফিসার (আরও) এসআই অমর কুমার সরকারের বিরুদ্ধে নানা বিষয়ে শতাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। বদলি পদায়ন থেকে শুরু করে মাদক গ্রহণের অভিযোগে বেশ কিছু চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল ও কর্মকর্তাকে পুনর্বহালের প্রলোভন দেখিয়ে তিনি কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
প্রতারিত পুলিশ সদস্যরা সম্প্রতি তার রাজশাহী নগরীর ভাটাপাড়ার বাসা ঘেরাও করে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। তাকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তারা। আÍগোপনে থাকার পর তিনি কয়েকদিন আগে রাজশাহী ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জে আছেন।
এদিকে নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ নভেম্বর রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে রিজার্ভ অফিসার অমরকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগগুলো তদন্ত করছেন মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (সিটি-এসবি) উপকমিশনার (ডিসি) ও আরএমপির গণমাধ্যম শাখার মুখপাত্র জামিরুল ইসলাম। পুরো তদন্ত প্রক্রিয়াটি তত্ত্বাবধান করছেন আরএমপির উপকমিশনার (সদর) সাইফুদ্দিন শাহীন।
উপকমিশনার সাইফুদ্দিন জানান, অমর সরকারের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি ইতোমধ্যে স্বেচ্ছা অবসরের আবেদন করেছেন। কিন্তু কমিশনার সেটি মঞ্জুর করেননি। তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরএমপির সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, অমর কুমার দীর্ঘদিন পুলিশ লাইন্সের রিজার্ভ অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। আরএমপিতে বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের বদলি, পদায়ন, পদোন্নতি, শাস্তি ও চাকরিচ্যুতি সংক্রান্ত সব ফাইল সংরক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে চলতি বছরের প্রথমদিকে পুলিশ সদস্য ও কর্মকর্তাদের মাদক সংক্রান্ত ডোপ টেস্টের নির্দেশ আসে।
এতে আরএমপির অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য মাদকাসক্ত হিসাবে চিহ্নিত হোন। অক্টোবরে বেশ কিছু পুলিশ কনস্টেবলকে চূড়ান্তভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। তারা চাকরি ফিরে পেতে অমর সরকারের শরণাপন্ন হলে তাদের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে আদায় করেন। কিন্তু কয়েকমাস পার হলেও কেউ আর চাকরি ফিরে পাননি। তারা শেষে টাকা ফেরত পেতে আরএমপির কমিশনারকে লিখিত অভিযোগ দেন। এছাড়া তিনি বদলি ও পদোন্নতির জন্য অনেক পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে বিভিন্ন অংকের টাকা নেন।
আরও জানা গেছে, এর আগে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের রিজার্ভ অফিসার থাকাকালে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ায় অমর সরকারকে একবার সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল। কেএমপির অনিয়মের বিষয়ে বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে।
জানা গেছে, অমর কুমার সরকারের বাড়ি খুলনায়। চাকরিচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় সে গত ৪ ডিসেম্বর চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসরের জন্য আরএমপি কমিশনার বরাবর দরখাস্ত করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো গুরুতর ও পুলিশের শৃঙ্খলা পরিপন্থি হওয়ায় কমিশনার তা গ্রহণ করেননি।
জানা গেছে, যেসব পুলিশ সদস্য তাকে টাকা-পয়সা দিয়েছিলেন তারা প্রতিদিন অমর কুমার সরকারের নগরীর ভাটাপাড়ার বাসার সামনে ধরনা দিচ্ছেন টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য। এ কারণে অমর সরকার কয়েকদিন আগে রাজশাহী ছেড়ে নিজ বাড়ি খুলনায় অথবা শ্বশুরবাড়ি গোপালগঞ্জে গিয়ে অবস্থান করছেন। প্রতারিত পুলিশ সদস্যরা প্রতিকারের আশায় আরএমপির বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছেও যাচ্ছেন।
অমর কুমার দুর্নীতি করে খুলনা ও গোপালগঞ্জ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় বিপুল স্থাবর সম্পদ গড়ে তুলেছেন। রাজশাহীতেও কিনেছেন একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। আরএমপির তদন্ত কর্মকর্তারা রাজশাহীসহ বিভিন্ন স্থানে থাকা তার সম্পদেরও খোঁজ করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে অমর কুমার সরকার বলেন, কিছু ভুল বোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। ইতোমধ্যে অনেকের টাকা তিনি ফেরত দিয়ে দিয়েছেন। চাকরি ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে বাকি টাকা মিটিয়ে দিয়ে যাবেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ। দেশের বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সূত্র : যুগান্তর