শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩৩ pm
আমার মনের মত, আমাদের চাওয়া মত অনেক কিছুই পাই না। মন খারাপ হয়, মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। যিনি জুড়ে দেন তিনি কী ভেবে দেন? আচ্ছা ধরুন, সব যদি পছন্দ মত পেতাম, ইচ্ছামত সাজিয়ে নিতে পারতাম তবে কি সুখী হতাম? গ্যারান্টি দিতে পারেন? অনেক চড়াই-উতরাই পেড়িয়ে প্রেমকে বিয়েতে রূপ দিয়ে সব প্রেমিক-প্রেমিকা সুখী হয়েছে? বিচ্ছেদ কি কম ঘটেছে? খুনোখুনি কি কম হয়েছে?
পছন্দের পোশাকের জন্য, পছন্দের জায়গার জন্য, পছন্দের চাকুরির জন্য কত শ্রম দিতে, ত্যাগ করতে হয়েছে। স্বপ্ন পূরণের জন্য কতরাত জাগতে হয়েছে। সব কি ভোগ করা গেছে? সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নেয়া গেছে? পছন্দও কি চিরকাল পছন্দের জায়গায় থাকে? রুচি কি এক বস্তুতে, এক মানুষে স্থায়ী হয়?
আমরা সাময়িক হতাশ হতে পারি। আকাঙ্ক্ষিত মানুষ/বস্তু পাইনি বলে মন খারাপ হতে পারে। অথচ সেটাতে নিজের জন্য অকল্যাণও যে থাকতে পারে, সেটা নিয়ে দুঃখের রাত কাটাতে হতে পারতো-সেটা ভাবনায় রাখি না। যা আমার হয়েছে সেখানে একটু আঘাত পেলেই, একটু অপূর্ণতা ছুঁলেই, চাহিদার কিছু অপ্রাপ্তি ঘটলেই আমরা ছেড়ে আসা মানুষ/বস্তুর জন্য আফসোস করি! মনে ভাবি, সেটাই সর্ব সুখ দিতে পারত বলে আমার বিশ্বাস! কিন্তু সেটাতে যে আরও কাঁটা থাকতে পারত, আরও বিষ ধরে রাখত না-সে নিশ্চয়তা একটু নাই! কল্যাণ-অকল্যাণের সবরুপ খালি চোখে দেখা যায় না!-এ বিশ্বাস দৃঢ় রাখতে হবে।
আমার মন খারাপ, আমার অপ্রাপ্তিতে আমার সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষকে, আমার সাথে আটকে থাকা ভাগ্যকে কষ্ট দিতে পারি না, বঞ্চিত করতে পারি না কিংবা দোষারোপ করতেও পারি না। যিনি কেন্দ্রীয় পরিকল্পনাকারী তিনি উৎসের মধ্যের শ্রেষ্ঠ কল্যাণটুকুই বরাদ্ধ করেছেন! সাময়িক অসুবিধা, সাময়িক অসঙ্গতি দিয়ে সমগ্র জীবনকে পরিমাপ করা চলে না। অল্প দুঃখের পরে লম্বা সুখ অপেক্ষা করে। একটু আঁধার কাটার পরেই ঝকঝকে আলো জীবনে আসে। ধৈর্য ধরতে হবে। খোদার কাছে চাইতে হবে।
পৃথিবীতে যে মন্দ মানুষ নাই, ব্যথা দেয়ার, আঘাত করার মানুষ নাই সেটা সত্য নয়। অনেক আছে। আমার সাথেই আছে, আমার পাশেই আছে। তাদের সাথে এমন সম্পর্ক হোক যাতে আঘাত করার বদলে ফুল দিতে, ব্যথা দেয়ার বদলে আগলে রাখতে বাধ্য হয়! মানুষের দু’টো রূপ! একজনের কাছে যিনি চরম বাজে সেই মানুষই আরেকজনের কাছে খুব ভালো! আপনার সাথে যে থাকবে, আপনার পাশে যে বসবে, আপনাকে নিয়ে যে হাঁটবে তাকে আপনার জন্য ভালো হতে বাধ্য করুণ। পরিবর্তন না হলে জীবনে থেকে দূরে রাখুন। অশান্তি নিয়ে চলার থেকে একলা চলা ভালো!
আমরা একজীবনে যা পাই তাতে সম্পূর্ণ প্রশান্তি পাই না বলেই জান্নাতের আবেদন জীবনে থাকে। সব সুখ পাওয়া, সব আশা পূরণ হওয়ার ক্ষেত্র দুনিয়া নয়। এখানে সব পেয়ে গেলে মানুষ অকৃতজ্ঞ হবে। বাঁচার আশায় অকৃপণ হবে। যদি আমার সাথে একটুকু অবিচার না হয়, একটুকু আঘাত কেউ না দেয়, একটুকু বিশ্বাস কেউ না ভাঙে তবে আর জনমে পুরস্কার কেমনে পাব? কিছুকিছুর হিসাব ওপারের জন্য, কিছুকিছু হিস্যা ওখানের আলোর জন্য তোলা থাক। নয়তো যে বিশ্বাস ভেঙেছে, যে অধিকার হরণ করেছে তার থেকে নিয়ে আমার ক্ষতিপূরণ কীভাবে পাব? তার মুখোমুখি উচ্চ শিরে কী করে দাঁড়াব!
যেন হতাশ না হই, ভেঙে না পড়ি। বেহিসাব কিছুই যাচ্ছে না। বেখাপ্পা কিছুই হচ্ছে না। সবকিছুর মূলে মহৎ পরিকল্পনা ক্রীড়নকের ভূমিকায় চলছে। কাজেই আশা করেও অনেক কিছু পাওয়া হবে না আবার না চেয়েও অনেক ভালো কিছু জীবনের সাথে জুড়ে যাবে। কত অনাকাঙ্ক্ষিত পালক যোগ হবে জীবনের শাখে। ধৈর্য সবকিছুর মহৌষধ। সবরের পরীক্ষায় যারা উত্তীর্ণ হয় তারা ব্যথা পায়নি, দুঃখ থাকেনি। সবকিছুতে আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারলে, শুকরিয়া জ্ঞাপন করতে পারলে তবেই জীবন সুখের প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ হবে। কৃতজ্ঞরাই সবার প্রিয় হয়; রবেরও। কলাম লেখক, সূত্র : [email protected]