রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৩২ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
অসময়ে দিন রাতের গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে রাজশাহীর তানোরে আলু চাষিদের মাথায় হাত পড়েছে। রোপনকৃত প্রায় জমিতে প্রচুর পানি জমে রয়েছে। আর জমে থাকা পানি বের করতে কোমর বেধে নেমে পড়েছেন চাষিরা। কিন্তু পানি বের করার কোন উপায় নেই। সব জমিতেই পর্যাপ্ত পানি। তবে, দুয়েক দিনের মধ্যে এসব পানি দ্রুত বের করা না গেলে পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে ক্ষেত। এতে করে আলু চাষিদের কপালে পড়েছে চিন্তার ভাজ। তবে, এমন বৃষ্টিতে সরিষার ক্ষেতে উপকার হয়েছে এমনটি বলছেন কৃষি অফিস।
এনিয়ে উপজেলার সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর গ্রামের কৃষক জামিল, সেলিম ও রেজাউলসহ আরও চাষিরা জানান, বৃষ্টির পানি আলুর জমি থেকে বের করার জন্য সকাল থেকে চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোন মতেই সম্ভব হচ্ছে না। কারণ সমতল আলুর ক্ষেত। কোন ভাবেই পানি বের করা সম্ভব নয়। তারা জমিতে আলু রোপন করে গত মঙ্গল ও বুধবারে সেচ দেয়। কিন্তু বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার দিনে ও রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়। বৃষ্টির কারণে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে গেছে। বের করার কোন উপায় নেই। শুক্রবার ও শনিবারের মধ্যে পানি বের না হলে রোপিত আলু পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে।
রেজাউল নামের আরেক কৃষক বলেন, তিন বিঘা জমিতে আলু রোপন করে প্রথম সেচ দেয়ার পর এমন মড়কে পড়েছি। সেলিম নামের আরেক কৃষক বলে, তার ৭ বিঘা আর ভায়ের ১২ বিঘা আলুর জমিতে থইথই করছে পানি। প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। তবে, লীজ নিয়ে যারা রোপন করেছেন তাদের খরচ আরও বেশি হবে।
উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির কৃষক লুৎফর রহমান বলেন, ৪৫ বিঘা জমিতে সেচ দিয়েছিলাম। জমিতে প্রচুর পানি বের করার কোন উপায় নেই। আর হাবিবুরের ৩০ বিঘা, সেহেরুলের ১০ বিঘা ও সারোয়ারের ৪০ বিঘাসহ প্রায় প্রতিটি কৃষকের আলুর জমিতে একই অবস্থা। তারা বলেন, যে সব চাষিরা সেচ দিয়েছিল তাদের সমস্যা। এমনকি দ্রুত জমি থেকে পানি বের না হলে পঁচে যাবে এবং ফলনও কম হবে। বিঘায় এখন পর্যন্ত নিম্মে ৫০ হাজার টাকা থেকে ঊর্ধ্বে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
কৃষকরা জানান, আলু রোপনে এবার সব চেয়ে বেশি খরচ হয়েছে। কারণ বেশি দামে জমি লীজ। সার কীটনাশকের বাড়তি দাম গুনতে হয়েছে। গত বুধবার সারাদিন সূর্যের আলোর দেখা নেই। রাত থেকে ও বৃহস্পতিবার দিনে রাতে গুড়িগুড়ি বৃষ্টির কারণে জমিতে প্রচুর পরিমাণে পানি জমে আছে। শুক্রবার সকালের দিকে মাঝে মাঝে সূর্যের আলো দেখা গেলেও দুপুরের পর থেকে মেঘলা আকাশ। প্রচন্ড খরতাপ হলে দ্রুত পানি সুখিয়ে যাবে। আর এরকম আবহাওয়া থাকলে আলু পঁচে নষ্ট হবে যেমন। ঠিক তেমনিভাবে ফলনের চরম বিপর্যয় ঘটবে। তবে, আলুর সর্বনাশ হলেও সরিষার জন্য উপকার হয়েছে।
মাহাম নামের এক কৃষক তার জমির ছবি ফেসবুকে দিয়ে লিখেন, বৃষ্টিতে কারও সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস। আট বিঘা জমিতে আলু রোপন করার পর চারদিনের মাথায় সেচ দেয়া হয়। সেচ দেয়ার পরেই বৃষ্টিতে সর্বনাশ হয়ে গেছে। একবার জমিতে গিয়ে এমন অবস্থা দেখে আর যেতে ইচ্ছে হয়নি। আট বিঘায় প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। গত মৌসুমের লাভ দেখে আলু রোপন করে যেন পথে বসতে হল।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ বলেন, এবারে আলু রোপনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এপর্যন্ত রোপন হয়েছে ১১ হাজার হেক্টর। যেসব জমিতে সেচ দেয়া হয়েছিল ওই সব আলুর জমির ক্ষতি হতে পারে। তবে, জমি থেকে দ্রুত পানি বের করতে পারলে ক্ষতির পরিমাণ কম হবে। পানি বের করতে না পরলে লোকসানের মুখে পড়বে চাষিরা। আর যারা সেচ দেননি তাদের তেমন ক্ষতি হবে না। তবে, এই বৃষ্টিতে সরিষার ক্ষেতে উপকার হবে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। রা/অ