শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৫১ am
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট পাল্টে গেছে। ক্ষমতা বদলের ইঙ্গিত আসছে। কিন্তু খাসপুকুরের দখল ছাড়া যাবে না। এ নিয়ে দুই পক্ষই ক্ষমতার কাছে ভিড়তে চায়। তাই নিয়ে সংঘর্ষে দুই পক্ষের ছয়জন আহত হয়ে হাসপাতালে। এক পক্ষের বাড়ি ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনা বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৭টায় উপজেলার সিন্দুরী গ্রামে।
এদিন দুপুরে এক পক্ষকে শহরের এনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। তাদের মদদ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর এক সমর্থকেরা। এভাবে নির্বাচনী ডামাডোল শুরুর আগেই সহিংসতা শুরু হয়েছে রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলা সিন্দুরী গ্রামে। মোহনপুর থানার পুলিশের পর্যবেক্ষণ এমনটিই।সিন্দুরী গ্রামের দুটি পক্ষ। এক পক্ষে রয়েছেন আমজাদ হোসেন নামের একজন মৎস্য চাষি। অপর পক্ষে রয়েছেন কৃষক হবিবুর রহমান হবি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১০-১৫ বছর ধরেই দুই পক্ষের ভেতরে এই দ্বন্দ্ব চলে আসছে। দুই পক্ষের মধ্যে আবার আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। গ্রামের ১০টি খাস পুকুর রয়েছে। এর সাতটিই আমজাদ ও তার পক্ষের। আর একটি হবিবুর রহমানের পক্ষের। এর জের ধরে যে কোনো ইস্যুতে তাদের মধ্যে গন্ডগোল বেধে যায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, তারা সরকারের কাছ থেকে টেন্ডারের মাধ্যমে সাতটি পুকুর ইজারা নিয়েছেন।
তারা এই পুকুর করে পার্টির ছেলেদের হাত খরচ দেন, মসজিদে দেন গরিব মানুষের বিয়েসাদিতে খরচ দেন। আর সবচেয়ে ভালো পুকুরটি হবিবুরের লোকজনকে ছাড় দিয়েছেন। তারপরেও গত বছর হবির লোকজন তার একটি পুকুরের মাছ লুট করে নিয়ে গেছে। এই খাস পুকুর থেকে পানি দেওয়াকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয়েছে। তিনি বলেন, তারা আজীবন আওয়ামী লীগ করেন। নৌকার ভোট দেন। গত দুইবার আয়েন উদ্দিন নৌকা প্রতীক পেয়েছিলেন। তারা আয়েন উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন। এবার আসাদুজ্জামান (রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক) নৌকা পেয়েছেন। এবার তারা তার পক্ষে কাজ করছেন। তারা সব সময় নৌকার পক্ষে থাকেন। তার মতে হবিবুরের পক্ষে চার-পাঁচজন ছাড়া সব বিএনপির লোক। তাদের হামলায় তার চাচা নহির (৭০), চাচাত ভাই সাইফুল ইসলাম, ভাগ্নে লতিফ ও আত্মীয় মুরাদ এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছেন। এর মধ্যে নহির এখন মৃত্যু শয্যায়। তার একটি হাতও ভেঙে গেছে।
প্রতক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে সিন্দুরী গ্রামের পশ্চিমপাড়ায় একটি চায়ের দোকানের হবিবুরের পক্ষের শামীম (৩৬) নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছিলেন। এই নিয়ে আমজাদের চাচাত ভাই সাইফুলের সঙ্গে বিতর্ক শুরু হয়। এ থেকে মারামারি সূত্রপাত হয়। এতে শামীম ও সাইফুল ইসলাম ( ৪২) আহত হন। সাইফুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শামীমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এই ঘটনার জের ধরে বুধবার সকালে আমজাদের পক্ষের লোকজন খেতে পটল তুলতে গেলে হবিবুরের পক্ষের লোকজন সেখানে গিয়ে হামলা করেন। এতে আমজাদের ভাগ্নে আব্দুল লতিফ (৭০) চাচা নহির উদ্দিন (৭০) ও পাশের সইপাড়া গ্রামের আত্মীয় মুরাদ (৪০)আহত হন। এতে হবিবুরের পক্ষের এরশাদ (৪০) ও মুরাদ (৩০)আহত হন।এদের সবাইকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এরপরে হবিবুরের লোকজন আমজাদের চাচা লতিফের বাড়িতে হামলা চালিয়ে জানালা ভাঙচুর করেন।
এই ঘটনা নিয়ে বুধবার বিকেলে রাজশাহী-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী আসাদুজ্জামানের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোহনপুর উপজেলার ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এনামুল হক সংবাদ সম্মেলন করেন। তারা দাবি করেন রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আয়েন উদ্দিনের লোক দিদার হোসেন ওরফে ভুলুর ইন্ধনে আমজাদেরা হবিবুরের লোকজনের ওপরে হামলা চালিয়েছে।
এ ব্যাপারে আয়েন উদ্দিন বলেন, খাসপুকুর নিয়ে আমজাদ ও হবিবুরদের দ্বন্দ্ব দীর্ঘ দিনের। তিনি কয়েকবার মীমাংসাও করে দিয়েছেন। তবে এখন তিনি এসবের কিছুই জানেন না। তারা দুই পক্ষই তার লোক বলে দাবি করেন এই সংসদ সদস্য।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, খাস পুকুর দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। যে কোনো ইস্যুতেই তারা বিভক্ত হয়ে মারা করে। এটা রাজনৈতিক কোনো ঘটনা না। এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়েই তাদের এই মারামারি। বুধবার বিকেল পর্যন্ত কোনো পক্ষই মামলা দিতে আসেনি। রা/অ