শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:১৮ am
নিজের উন্নতির জন্য আমাদের যতটা প্রয়াস, পরের ক্ষতি শুনলে তার অধিক উল্লাস। নিজের ভালো না হলেও আমাদের ক্ষতি নাই কিন্তু পরের ভালো সহ্য করার মানসিক শক্তি নাই। আমার একচোখ অন্ধ হয়ে যাক তবুও অপরের দুই চোখ বন্ধ হোক-এই হচ্ছে আমাদের প্রবণতা। কারো ভালো শুনলে মন খারাপ হয়, কারো উন্নতিতে ঈর্ষা হয়, কারো গুণ দেখলে হিংসা হয়। আমাদের নিজের ভালো যেভাবে উদযাপন করি তারচেয়ে অপরের মন্দতে বেশি উৎসব করি। উৎসাহ তালাশ করি। কেউ আমাকে ছাড়িয়ে গেলে, ছাপিয়ে গেলে তার সাথে গোপন শত্রুতায় নামি অথচ আত্মোন্নতির কোন প্রচেষ্টা করি না। ওর এটা হলো কেন, সে সেটা পেল কেন, তার ওটা আছে কেন-এই হিংসায় নিজেকে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করি।
কারো কোন শুভ সংবাদ শুনলে আমাদের মন খারাপ হয়, কেউ ভালো চাকুরি পেয়েছে জানলে তার সাথে গোপন শত্রুতা স্থাপিত হয়। কারো কোন ভালো অর্জন জানলে তার দিকে বাঁকা চোখে তাকানো আরম্ভ হয়। নিজের এই দীনতায় মানসিক অসুস্থতা বাসা বাঁধে। সমাজ থেকে এড়ানোর কৌশল অন্তরে আবাস গড়ে। আমরা কেন যেন পরের ভালো দেখতে পারি না। নিজের কিছু না হোক, নিজে কিছু না পাই তবুও অপরের কল্যাণ না আসুক-এই কামনায় মশগুল থাকি। বিশ্বের অন্যকোন জাতি এমন কি-না সেটা গবেষণার বিষয়। আমাদের অধিকাংশের মধ্যে এই রিপু কোথা দিয়ে প্রবেশ করলো? কেন এই অসুখ বাঁধলো?
যারা পরের ভালো সহ্য করতে পারে না তারা নিজের উন্নতি ঘটাতে পারে না। যা বাড়ায় তা অসুস্থতা। হিংসা-লোভ-ঘৃণা। এক শ্রেণির মানুষ দীর্ঘশ্বাস ফেলে অপরের অর্জন, সম্ভাবনা ভস্ম করে দিতে চায়। কারো ভালো না হোক, কেউ না দাঁড়াক-সেই কামনা নিয়ে রবের মুখোমুখি দাঁড়াতে চায়! নিজের লোভ, নিজের জন্য ভোগ যাদের না ফুরায় তারা অন্যের স্বার্থের জন্য, কারো মঙ্গলের কথা ভাবতেও পারে না, পরের জন্য কিছু করতেও পারে না। নিজের অসুখ দিয়ে সমাজ বিষাক্ত করে দেয়ার মিছিলে মানুষ সংখ্যা বাড়িয়ে চলে। ভালোর ছিঁটেফোঁটা যা এখনো অবশিষ্ট আছে তাও তারা ঘিরে ধরে তাদের দলে ভিড়িয়ে নেয়।
শিক্ষাও এ পাপ মোচন করতে পারছে না। সমাজে দূষণের মাত্রা বাড়ছে। অসুস্থ লড়াই আরও প্রকট হচ্ছে। ইচ্ছা না থাকলে কেউ উদার হতে পারে না। স্বার্থ না ছাড়লে কেউ স্মরণীয় হবে না। পরের ভালো মানতে পারলে তবেই তো নিজের উন্নতি হবে। কলিজার পরিসর বাড়াতে হবে, মস্তিষ্কের আবর্জনা দূর করতে হবে। ভালো সহ্য করার জন্য উদার চিন্তনের চর্চা দরকার। কোন সরকার চাপ দিয়ে এটা পারবে না। নিজ উদ্যোগ খারাপ থেকে একটু একটু করে বের হয়ে আসতে হবে। মন্দকে প্যাকিং করে দূর বনবাসে তাড়াতে হবে। আমি পরের হলে আমার তরে সবাই হবে। একজনের ভালো যেদিন সবার আলো হয়ে ফিরে আসবে সেদিন সবার ভেতর-বাহির দ্যূতিময় হবে। চিন্তা ও চেতনার অঙ্গে অঙ্গে শোভা বাড়াবে। কলাম লেখক, [email protected]