রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:৪৫ pm
আশরাফুল ইসলাম রনজু :
রাজশাহীর তানোরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সাবেক মেম্বার আব্দুল্লাহ পলাশের মাড়াইয়ের জন্য রাখা ৫ বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের চিমনা পূর্বপাড়া গ্রামে রোববার দিবাগত গভীর রাতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে।
ওই রাতেই ফায়ার সার্ভিস ও প্রতিবেশিদের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই ৫ বিঘা জমির ধানসহ খড় পুড়ে শেষ। ধান খড় পুড়িয়ে ক্ষান্ত হননি প্রতিপক্ষরা। পরদিন সোমবার সকালের দিকে পলাশের বাড়িতে হামলা করে অবরুদ্ধ করে রাখেন পলাশসহ তার পরিবারের সদসদের।
পরে ৯৯৯-এ কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে ওই পরিবারকে মুক্ত করেন। এঘটনায় সাবেক মেম্বার পলাশ ইজুবুল্লাহকে প্রধান করে ১৬ জনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেন। এতে করে উভয়ের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন মূহুর্তে উভয়ের মধ্যে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ীর মত সংঘর্ষ বলে আশঙ্কা গ্রামবাসীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আব্দুল্লাহ পলাশের বাড়ির পূর্ব উত্তরে পুড়িয়ে দেয়া ধান খড় এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। পোড়ার গন্ধ বের হচ্ছিল। ধানের সোনালী শীষগুলো পুড়ে কালো হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে ধোয়া বের হচ্ছে।
সেখানে ছিলেন পলাশের স্ত্রী রফেদা বেগম। তিনি বলেন, রবিবার সারাদিন জমি থেকে ট্রলিতে করে ধান তুলছিল শ্রমিকরা। সন্ধ্যার আগে একট্রলি ধান প্রতিপক্ষের সীমানা দিয়ে আনার জন্য ট্রলির ডাইভারকে মেরে পুনরায় ট্রলিসহ জমিতে নিয়ে যায়। পরে অন্য রাস্তা দিয়ে ধান নিয়ে আসে খৈলানে।
তিনি আরো বলেন- প্রতিপক্ষ হাবিব, আজিজুল ও জনিসহ কয়েকজন ডাইভারকে মেরে ধান পুনরায় জমিতে নিয়ে যায়। রোববার সন্ধ্যা থেকে সন্ধ্যার পরও চলে এসব ঝামেলা। ওই রাত ২টার দিকে মড়াইয়ের জন্য রাখা ধানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আগুনের ফুলকি উপরে উঠা মাত্রই পার্শ্বের শ্রমিকরা আগুন আগুন বলে হইচই শুরু করে। বেরিয়ে দেখি আমাদের ধানে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। প্রতিবেশিদের সহযোগিতায় ও ফায়ার সার্ভিসের একান্ত প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই সব ধান ও খড় পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
আমার এতোবড় সর্বনাশ করেছে যারা আল্লাহ দেখেছেন তিনিই বিচার করবেন। পরদিন সোমবার সকালের দিকে বাড়ির ভিতরে এসব কথা বলা হচ্ছে এমন সময় আল-আমিন, আলমগীর, বাবলু ও মুরসালিনসহ কয়েকজন বাড়ির টিনে লাঠি সোটা দিয়ে হামলা শুরু করে এবং বের হলেই মেরে ফেলবে বলে বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকেন। বাধ্য হয়ে ৯৯৯-এ কল করা হলে পুলিশ এসে আমাদেরকে মুক্ত করেন। দীর্ঘদিন ধরে তাদের সাথে জায়গা জমি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে।
সাবেক মেম্বার আব্দুল্লাহ পলাশ বলেন, রোববার কোন রকমে মাড়ায় করার জন্য ধান নিয়ে আসা হয়েছে। রাত ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ধানগুলো মাড়ায়ের জন্য গুছিয়ে রাখা হয়। আমি বাড়িতে গিয়ে ঘুমাতে অনেক রাত হয়। রাত ২টার পর আগুন আগুন হইচই শুনে বের হয়ে দেখি আমার ধানেই আগুন জলছে। সাথে সাথে ফায়ার সার্ভিস অফিসে খবর দেয়া হয়। সংবাদ পেয়ে দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসে এবং পার্শ্বের দুটি বাড়ির মটর লাগিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এর আগেই ধানগুলো পুড়ে শেষ হয়ে যায়। ৫ বিঘা জমির ধান পুড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষতি হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তিন মাস পরিশ্রম করে মাড়াইয়ের আগ মুহূর্তে এভাবে আগুন দিয়ে ধান পুড়িয়ে দিল। আমার সাথে শত্রুতা থাকতে পারে, কিন্তু ফসল কি অপরাধ করেছে যে পুড়িয়ে দিতে হবে। এঘটনায় আমি আদালতে মামলা করেছি।
প্রতিবেশিরা বলেন, একজন মানুষের সাথে আরেক জনের শত্রুতা থাকতে পারে। তাই বলে ধান পুড়িয়ে বাহাদুরি এটা অমানবিক। এত কষ্ট করে চাষাবাদ করার পর এভাবে পুড়িয়ে দিলে কি হয় যার পুড়ে সে জানে। এমন অমানবিক ঘটনার জন্য চরম শাস্তি হওয়া দরকার। তাহলে এধরণের কাজ করতে সাহস পাবে না। কিন্তু এসবের সঠিক বিচার না হলে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতেই থাকবে। রাতে দেখতে না পেলে বাড়িঘর পুড়ে শেষ হয়ে যেত। রা/অ