রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৫৪ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে ৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চতুর্থ শ্রেণির ৬ জন কর্মচারী নিয়োগে মাইনুল ইসলাম স্বপন ও আবুল বাসার সুজন আবারও প্রায় কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলে আ.লীগের ত্যাগী নেতারা অভিযোগ তুলেছেন। মাইনুল স্বপন হলেন- তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান।
আর সুজন পেশায় হাট-ইজারাদার সুবিধাবাদী নব্য আওয়ামী লীগ স্থানীয় এমপির আস্থাভাজন ব্যক্তি তিনি। বাড়ি রাজশাহী নগরীতে। তবে, তানোর পৌরসভায় মেয়রপদে প্রার্থী হতে চাপড়া মহল্লায় গড়ে তুলেছেন পাঁকা ফ্রাল্ট বাড়ি ও গরুর খামার।
সম্প্রতি ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ও ৪ নভেম্বর শনিবার উপজেলার সরনজাই হাইস্কুল, দেউল ও গোকুল মথুরা দাখিল মাদ্রাসায় আয়া আর পিওন পদে ৬ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একেক পদে নিয়োগে এমপির নামে সংশ্লিষ্টরা ১৪ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা করে নেয় বলে তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে।
এরআগে এভাবে পুরো উপজেলার ৮৯টি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সেই সাথে ৩টি কারিগরী কলেজও রয়েছে। তবে, এসব সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। শুধু ৭০ জন প্রার্থী নিয়োগে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সরকারি নিয়মানুযায়ী প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর হতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও ডিজির প্রতিনিধি নিয়োগ বোর্ড গঠন করে থাকেন।
জানা গেছে, পুরো উপজেলায় মাধ্যমিক স্কুল ৫৫টি, কলেজ ১২টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৩টি আর মাদ্রাসা রয়েছে ২২টি। প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে প্রার্থীরা বিভিন্ন নেতাকর্মীর মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করে নিয়োগ নিচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ পেতে ১৪ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা ঘুস দিতে হচ্ছে। আর প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, সহকারী অধ্যক্ষ, নিয়োগ পেতে হলে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিনের।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষকরা জানান, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৪ জন করে তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান ছাড়াও কম্পিউটার এবং ল্যাব এসিট্যান্ট মিলে ৬টি পদের জন্য উপজেলায় ৫৫২ জন প্রার্থী নিয়োগ হবে। অবশ্য সব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে গেছে। আর কিছু প্রতিষ্ঠানে ৭০ জন প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অর্থনৈতিক সমঝোতা হলেই সেই ব্যক্তিগুলো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেয়ে যাবে। অভিযোগে প্রকাশ, এরআগে সুজনের দ্বারা এভাবে প্রায় শতকোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করা হয়েছে।
সম্প্রতি ২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সরনজাই হাইস্কুলে আয়া-পিয়ন পদে নিয়োগ দেন সভাপতি আবু সাইদ ও প্রধান শিক্ষক আব্দুল হান্নান। আর ৪ নভেম্বর শনিবার গোকুল মথুরা দাখিল মাদ্রাসায় একই দুইপদে নিয়োগ দেন সভাপতি আবুল বাসার সুজন ও সুপার আব্দুল হামিদ। ওই একই দিনে দেউল মাদ্রাসায় আয়া আর পিওন পদে নিয়োগ দেন সভাপতি মো. আব্দুল আজিজ ও সুপার শরিফুল ইসলাম।
সুজন এক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হলেনও প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের টাকা তার কাছে জমা হয়। সেই অনুযায়ী তিনি এমপির নামে একেক পদে ১৪ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা নেন বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যেক ম্যানেজিং কমিটির সংশ্লিষ্টরা জানান। তাকে টাকা না দিলে কারও নিয়োগ হয় না এমন অভিযোগ সবার। এমন নিয়োগ বাণিজ্যের সঙ্গে শুধু সুজন নয়, জড়িত রয়েছেন মাইনুল ইসলাম স্বপন ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সিদ্দিকুর রহমান। তবে, জড়িত থাকার বিষয়টি তারা অস্বীকার করেছেন।
এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের বেশ কয়েক নেতা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো দেওয়া হচ্ছে চুপিচুপি সাড়ে। যেন তাদের পছন্দ বাদে অন্য কেউ বুঝতে না পারে। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে অর্থ বিনিময় হওয়ার জন্য, যোগ্যতা বাছাই করা হচ্ছে না এবং অন্য মতাদের্শের বেশিভাগ মানুষদের চাকরি দেওয়া হচ্ছে।
আবুল বাসার সুজন বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ড হচ্ছে, তা ঠিক আছে। কিন্তু নিয়োগের টাকা এমপিকে নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নে ব্যবহার করা হয়ে থাকে বলে এড়িয়ে গেছেন সুজন।
এব্যাপারে মাইনুল ইসলাম স্বপন বলেন, এতো টাকা নয়, দল চালাতে খরচ হয়। তাই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা ইচ্ছা করে কিছু টাকা দিয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। রা/অ