রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:১১ pm
আশরাফুল ইসলাম রনজু :
রাজশাহীর তানোরে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচির (ইজিপিপি) প্রকল্প বাস্তবায়নে চেয়ারম্যানদের পুকুর চুরির অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিভিন্ন প্রকল্প কাজ পরিদর্শনে নেমেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। বেশ কয়েকটি কাজে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ইউএনও।
সম্প্রতি বাঁধাইড় ইউনিয়নের একান্নপুর সাদিকুলের বাড়ি হতে হরিশপুর ফিরোজের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন ইউএনও। এই প্রকল্পে ২১ জন শ্রমিকের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ১১ জন। প্রকল্পের সভাপতি ইউপি মেম্বার সচিন্দ্রনাথ মাহাতো।
তিনি জানান, ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমানের দেয়া শ্রমিকরা কাজে আসে না ওরা ভিআইপি শ্রমিক। তবে, তিনি যাদের নাম দিয়েছেন সবাই এসেছেন। এছাড়াও বাঁধইড় মিশনপাড়া পাকা রাস্তা হতে বাঁধাইড় প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার কাজে ২৭ জন শ্রমিকের মধ্যে মাত্র ১৬ জন উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত নারী মেম্বার আক্তারা বেগম। তিনি জানান, চেয়ারম্যানের এবং মেম্বারের দেয়া ভিআইপি শ্রমিকেরা অনুপস্থিত আছে, তারা কাজ করে না। এদিকে ৭টি ইউনিয়নের ১৬টি প্রকল্পের কোথাও কোনো ট্যাগ কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি।
জানা গেছে, উপজেলায় চলতি অর্থবছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ উদ্বোধন করা হয়েছে। গত শনিবার তানোর ইউএনও বিল্লাল হোসেন তালন্দ ইউনিয়নের লালপুর সাবেরের বাড়ি থেকে চাত্রাপুকুর পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার কাজ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এটিএম কাউসার আলী, ইউপি চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু ও প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত নারী মেম্বার খালেদা বেগম। এই প্রকল্পেও ৪৩ জন শ্রমিকের মধ্যে অনুপস্থিত ছিলেন ১৪ জন। সেখান থেকে ইউএনও যান পাঁচন্দর ইউপির কোয়েল গোয়াল পুকুর জব্বারের মটরের ঘর হতে নোনাপুকুর হয়ে মাসনা কুড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার কাজ দেখতে। এই প্রকল্পেও ২৬ জন শ্রমিক থাকার কথা থাকলেও উপস্থিত ছিলো মাত্র ১৫ জন।
প্রকল্প সভাপতি ইউপি মেম্বার মফিজ উদ্দিন। তিনি জানান, উদ্বোধনের দিন এজন্য সব শ্রমিক আসেনি। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এটিএম কাউসারী আলী বলেন, প্রতিটি প্রকল্পে যে পরিমান শ্রমিক আছে সবাইকে উপস্থিত থেকে কাজ করতে হবে। যারা অনুপস্থিত থাকবেন তাদেরকে টাকা দেয়া হবে না।
এদিকে প্রতিটি কাজ পরিদর্শনে অসন্তোষ প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিল্লাল হোসেন বলেন, একজন শ্রমিক অনুপস্থিত থাকলে প্রকল্প সভাপতিকে জবাব দিতে হবে। কোন ভাবেই অনুপস্থিত থেকে টাকা দেয়া হবে না এবং রাস্তার মাটি দিয়ে রাস্তা সংস্কারও করা যাবে না। জমি থেকে মাটি নিয়ে রাস্তা সংস্কার করতে হবে। কেউ যদি মনে করে কাজে না এসে টাকা পাবে এটা হবে না। অতীতে কি হয়েছে সেটা দেখার বিষয় নয়া।
বর্তমানে শতভাগ কাজ বুঝিয়ে নেয়া হবে। তিনি প্রকল্প সভাপতির কঠোর নির্দেশ দিয়ে আরো বলেন, আমি কখন কিভাবে কাজ দেখতে আসব কেউ জানতে পারবেন না। কাজে এসে যদি শ্রমিক কম পাওয়া যায় তাহলে সে ভাতা পাবে না। শতভাগ কাজ বুঝে নেয়া হবে। এছাড়াও দিব্যস্থলী সাত্তারের বাড়ি হতে দিব্যস্থলী রাজ্জাকের জমি পর্যন্ত সংস্কার। এই প্রকল্পে শ্রমিক ২৫ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার অজেদুল। কলমা ইউপির মালবান্ধা এরশাদের বাড়ি হতে দায়মা পুকুর পর্যন্ত ড্রেন খনন। শ্রমিক সংখ্যা ২৫ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার শহিদুল। একই ইউপির অমৃতপুর সাধুর মোড় হতে মজিবরের দোকান পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৫ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার কালাম। ওই ইউপির পিপড়া রেনুলের বাড়ি হতে শেষ মাথা পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৫ জন। প্রকল্প সভাপতি মহিলা মেম্বার সাজেনুর বেগম। মাড়িয়া সুমনের বাড়ি হতে সইবুরের দোকান পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৩ জন। প্রকল্প সভাপতি আসগর আলী।
পাঁচন্দর ইউপির সিদপুর হতে কুন্দাইন চারকুড়া পুকুর হয়ে গুড়ইল ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ৩৩ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার গাফফার। ওই ইউপির চককাজিজিয়া হাজেরের বাড়ি হতে মোহনপুর কচুয়া পুকুরের শেষ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৮ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার মাইনুল ইসলাম।
সরনজাই ইউপির শুকদেবপুর পাকা রাস্তা মোড় হতে মান্নানের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ৩২ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার আলিম। কামারগাঁ ইউপির ভবানিপুর গোরস্থানে মাটি ভরাট। শ্রমিক সংখ্যা ২৬ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার আনিরুল। কিন্তু রোববার পর্যন্ত এক ডালি মাটিও পড়েনি গোরস্থানে।
একই ইউপির শ্রীখন্ডা পালপাড়া আইয়ুব মাস্টারের বাড়ি হতে ষষ্ঠী পালের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৬ জন। প্রকল্প সভাপতি সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার বেলী বেগম। রোববার পর্যন্ত রাস্তায় এক ডালিও মাটি পড়েনি। প্রকল্প সভাপতি বেলী বেগম বলেন, চেয়ারম্যানকে বলে উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোনীয়া সরদার তার বাড়ির পুকুর পাড়ে কাজ করাচ্ছেন। উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান সোনীয়া সরদার বলেন, ওই প্রকল্পের শ্রমিক ২০ দিন তার ওখানে বাঁকি ২০ দিন বেলীর ওখানে কাজ করবে।
একই ইউপির ধানোরা খাজেম আলীর চাতাল হতে জহিরের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ২৬ জন। প্রকল্প সভাপতি মেম্বার লুৎফর রহমান। গত রোববার প্রকল্পে ১১ জন শ্রমিকে কাজ করতে দেখা গেছে। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির জুড়ানপুর পাকা রাস্তা হতে আফাজের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা সংস্কার। শ্রমিক সংখ্যা ৩৫ জন। প্রকল্প সভাপতি নিজাম উদ্দিন। গত রোববার দুপুরে ১২ জন শ্রমিককে কাজ করতে দেখা গেছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) এটিএম কাউসার আলী বলেন, প্রকল্প এলাকা সরেজমিন তদন্ত করা হচ্ছে। বিধিমতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রা/অ