রবিবর, ১০ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:২১ pm
ডেস্ক রির্পোট :
বিএনপিসহ বিরোধীরা বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে, প্রস্তুতিও নিচ্ছে। দেশের বাইরে থেকে বিশেষ করে পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে চাপের সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার হুমকিও আছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করার সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, আগামী ৬ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তার আগে ১৩ বা ১৪ নভেম্বর ঘোষণা করা হতে পারে ভোটের তফসিল।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল রোববার বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি ঘোষণা করা হবে। কেউ আসুক আর না আসুক, তার জন্য অপেক্ষা করা হবে না।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হচ্ছে ১ নভেম্বর। সংবিধান অনুযায়ী, ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায় নির্বাচন আয়োজনকারী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানায়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে সব বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক এবং জেলার পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচনী মালামাল কেনাকাটায়ও পিছিয়ে নেই। স্ট্যাম্প প্যাড ছাড়া বাকি প্রায় সব মালামাল নির্বাচন কমিশনে আসতে শুরু করেছে। এ ছাড়া গতকাল থেকে ভোটের ব্যালট বাক্স মাঠপর্যায়ের কার্যালয়গুলোতে পাঠানো শুরু করেছে ইসি। এর বাইরে ৩০ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং ১ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
সংবিধান মেনে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই নির্বাচন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর হলেও বিএনপিসহ তাদের সমমনা বিরোধী দলগুলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় অবস্থানে আছে। এতে করে স্বাভাবিকভাবেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে যেমন ক্ষমতাসীন দল এবং তাদের সমমনা দলগুলো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি বিরোধী দলগুলো নির্বাচন সামনে রেখে আরও জোরালো আন্দোলনে নামছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, ২৮ অক্টোবর থেকেই সেই কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ২৮ অক্টোবরের কর্মসূচি ব্যর্থ হবে।
রাজনীতির মাঠের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে দেখা করেছেন। এ সময় ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ নিয়ে তাঁদের মধ্যে আলোচনা হয়। পিটার হাস মন্ত্রীর কাছে জানতে চান, ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সরকার ঢাকায় প্রবেশের সব রাস্তাঘাট বন্ধ করবে কি না।
এদিকে রাজনৈতিক মহলে জোর আলোচনা চলছে যে সব দলের অংশগ্রহণ ছাড়া নির্বাচন হলে ভিসা নীতির মতো নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তার ইঙ্গিতও দেওয়া হচ্ছে। যদিও সরকার এসব ইঙ্গিতকে তোয়াক্কা করছে না। সরকার নিজের মতো করেই ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা করে এগোচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এর আগে বলেছেন, রাজনৈতিক মহলে সমঝোতার জন্য কাউকে মুরব্বিয়ানা করতে হবে না। ভোটাররা যদি আসেন, তাঁরা যদি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, তাহলে নির্বাচনে একটা বড় সফলতা অর্জিত হয়ে যাবে।
ইসি ও রাজনৈতিক সূত্র জানায়, সরকারের অনেক বড় উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন হতে যাচ্ছে আগামী কয়েক সপ্তাহে। এগুলো শেষ করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। কারণ, তফসিল হওয়ার পর এ ধরনের প্রকল্প উদ্বোধন করা যায় না।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কমিশন যখনই তফসিল ঘোষণা করুক, নির্বাচন হবে।’ তিনি আরও বলেন, ঢাকাসহ পাঁচটি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ব্যালট বাক্স যাওয়া শুরু হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের মধ্যে সব ব্যালট বাক্স আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে পৌঁছে যাবে।
এদিকে সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে ৩০ অক্টোবর বৈঠক ডেকেছে ইসি। সভায় যোগ দিতে ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সপাল স্টাফ অফিসার, মহাপুলিশ পরিদর্শক, বিজিবি, র্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার, ভিডিপিসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
এ ছাড়া নির্বাচনের প্রস্তুতির ১১টি বিষয় নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে ১ নভেম্বর বৈঠক করবে ইসি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর নির্বাহী পরিচালক বা উপযুক্ত কর্মকর্তা, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের (সমন্বয় ও সংস্কার) সচিবকে বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নির্বাচনের প্রস্তুতি আগে আগেই সম্পন্ন রাখা হয়েছে। কারণ ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো সহিংসতার ঘটনা ঘটলে নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই নির্বাচনী প্রস্তুতিতে কোনো ঘাটতি রাখতে চায় না কমিশন। আগে থেকেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রাখছে ইসি সচিবালয়।
সম্প্রতি ইসি কর্মকর্তারা শঙ্কা প্রকাশ করে নির্বাচনকালীন মাঠপর্যায়ের অফিসগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন। এসব অফিসে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ রাখার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগে আলাদা আরেকটি চিঠি দিয়েছে কমিশন।
৩০০ আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন; সাংবাদিক নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিক নীতিমালা, ভোটকেন্দ্রের চূড়ান্ত খসড়া করে ফেলেছে কমিশন। আর তাদের যেসব কাজ চলমান রয়েছে, তার মধ্যে আছে আসনভিত্তিক ভোটার তালিকা, নির্বাচনী অ্যাপ, আইনি সংস্কার, দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার (প্রিসাইডিং, সহকারী প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসার) প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে। সূত্র : আজকের পত্রিকা