শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:০৩ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের আপত্তিকর কথা বলায় অভিযোগে বিদ্যালয় ঘেরাও করে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছেন এলাকাবাসী। আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) মোহনপুর উপজেলার ধুরইল হাইস্কুলে এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের নাম সোহরাব আলী খান। তার বাড়ি উপজেলার মৌগাছি ইউনিয়নের মৌপাড়া গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল থেকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী বিদ্যালয়টি ঘেরাও করে রাখেন। খবর পেয়ে মোহনপুর থানা থেকে পুলিশ যায়। এ সময় উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুর আড়াইটার দিকে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিথিলা দাস সেখানে যান। এলাকাবাসী তাঁর কাছে এই প্রধান শিক্ষককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। পরে তাঁর উপস্থিতিতে পুলিশ প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে থানায় নিয়ে যায়। বিকেলে সাড়ে ৫টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়নি। তাঁকে গ্রেপ্তারও দেখানো হয়নি।
মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হরিদাস মন্ডল বলেন, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কথা বলা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষক পুলিশের হেফাজতেই আছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রীদের অভিভাবকেরা মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। মামলা হলে সে অনুযায়ী তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
উপজেলার ধুরইল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্রামের সব মানুষ একত্রিত হয়ে বিদ্যালয়টি ঘেরাও করেছিল। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে যায়। পুলিশ সবাইকে দূরে সরানোর চেষ্টা করে। এ সময় এক কিশোর পড়ে গিয়ে আহত হয়। এতে এলাকার লোকজন আরও উত্তেজিত হয়। পরে আমি গিয়ে সবাইকে শান্ত করি। এরপর এসিল্যান্ড সাহেব আসেন। এলাকার লোকজনের দাবির প্রেক্ষিতে তিনি ওই শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘এই শিক্ষকের নাকি একটু সমস্যা আছে। অভিভাবকদের অভিযোগ যে তিনি ছাত্রীদের অশ্লীল-আপত্তিকর কথা বলেন। গ্রামে বিষয়টা নিয়ে আলোচনার পর সবাই একত্রিত হয়ে আজ বিদ্যালয় ঘেরাও করেন। প্রধান শিক্ষককে থানায় নেওয়ার পর ভুক্তভোগীরাও সেখানে গিয়েছেন।’
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে প্রায় ১০ বছর আগে এসেছেন। এর আগে যে স্কুলে ছিলেন সেখানেও এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটা মামলাও হয়েছিল।’
মোহনপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিথিলা দাস বলেন, ওই বিদ্যালয়ে অনেক অভিভাবক উপস্থিত হয়েছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়েছিলেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাও গিয়েছিলেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয়, সেই জন্য বেলা দেড়টার দিকে তিনি গিয়েছিলেন। তিনটার পরে প্রধান শিক্ষককে পুলিশের মাধ্যমে থানায় পাঠিয়ে দিয়ে তিনি এসেছেন।
আটক হওয়ার আগে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা হয়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ থেকে ১০ দিন আগে ষষ্ঠ শ্রেণির একটি মেয়ে ছুটি নিতে গিয়েছিল। তার সঙ্গে আরও দুইটি মেয়ে ছিল। ‘পেরিয়ড’ হওয়ার কারণে ছুটি নিতে গিয়েছিল। তিনি তখন তাকে বয়ঃসন্ধিকালের সমস্যার ব্যাপারে সচেতনতামূলক কথাবার্তা বলেছেন। এ নিয়ে এতদিন কিছু হয়নি।
তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক হওয়ার কারণে প্রতিপক্ষের চার-পাঁচটা লোক তার বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালিয়ে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তারা আমার শিক্ষকদেরও লাঞ্ছিত করেছে। বিদ্যালয়েরও ক্ষয়ক্ষতি করেছে। আমি এর সুবিচার চাই।’
আগের বাকশিমইল উচ্চ বিদ্যালয় থাকার সময়ও তার বিরুদ্ধে একই অভিযোগে মামলার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগটি তখন বিদ্যালয়ে বসে আপস মীমাংসা হয়েছিল। কোনো মামলা হয়নি। রা/অ