শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:২২ am
ডেস্ক রির্পোট :
খেত থেকে পণ্য ঢাকায় আনতে সড়ক মহাসড়কে পথে পথে যানবাহন থামানো হয়। কয়েক ধাপে নানা পেশার মানুষ সেখানে চাঁদাবাজি করে। এই চাঁদাবাজি বন্ধ হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেকখানি কমবে বলে মনে করেন রাজধানীর কাঁচাবাজার পণ্যের ব্যবসায়ীরা।
পুলিশের কাছে অভিযোগ দিয়ে তাঁরা বলছেন, পথের এসব অবৈধ টোলবাজি যদি বন্ধ করতে পারেন তাহলে তাঁরা দামও কমাতে পারবেন।
আজ বৃহস্পতিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হওয়ার কারণ নির্ণয়ে ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপি সদর দপ্তরে সকাল থেকে শুরু হওয়া এই আলোচনা চলে দুপুর পর্যন্ত। আলোচনায় রাজধানীর ১২৮টি বাজারের মধ্যে ৮৬টি বাজার কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির নানা কারণ উল্লেখ করেন।
মিরপুরের মুসলিম বাজারের সাধারণ সম্পাদক খোকন আলী মাতবর পুলিশের ঊর্ধ্বতনদের উদ্দেশে বলেন, ‘কাঁচাবাজার নিয়ে যে ট্রাক ঢাকার উদ্দেশে আসে, সেখানে আপনাদের নজরদারি বাড়ানো উচিত। পথের অবৈধ এই টোলবাজি বন্ধ করতে পারলে দাম অবশ্যই কমানো সম্ভব হবে। না হলে বাড়তেই থাকবে।’
অবশ্য তাঁর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, ‘এই ধরনের চাঁদাবাজি ১০–১৫ বছর আগে হতো। বর্তমানে এসব নেই বললেই চলে। তবে এরপরও পথে যদি কেউ আটকায়, সেটা কোনো বাহিনীর লোক হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান শক্ত। পুলিশ অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
ডিম–মুরগি–আলু–পেঁয়াজ–শাকসবজির দাম বাড়ার পেছনে চাঁদাবাজির পাশাপাশি পুঁজিবিহীন মধ্যস্বত্বভোগীদের অতিরিক্ত লোভের কথাও আলোচনায় এনেছেন ভোক্তা অধিকার নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রতিনিধিরা।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘এক বাজারেই নিত্যপণ্য দুই তিন হাত বদল হয়ে খুচরা বাজারে বিক্রি হয়। সেখানেই দাম দুই গুন বেড়ে যায়।’ উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বগুড়ার স্টোরেজের আলুর দাম ১০ টাকা হলে ঢাকায় পৌঁছাতে সব মিলে খরচ পড়ে প্রতিকেজি ২৫ টাকা। কিন্তু ঢাকায় আসার পরেও দুই–তিন হাত বদল না হয়ে সেই আলু খুচরা ব্যবসায়ীরা পায় না। তখন দাম বেড়ে যায় ৩৭–৪০ টাকা। একই ভাবে ৩২ টাকার শসাও বিক্রি হয় ৮০ টাকায়।’
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ আবার খুচরা দোকানদারদের অসততার অভিযোগ করেন। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে উত্তরা ছয় নম্বর সেক্টর কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বাজারে পণ্যের দামের ডিজিটাল ডিসপ্লের ব্যবস্থা করার প্রস্তাব দেন।
মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার সব সময় আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রতিনিয়ত বাজারের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন, কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না খোঁজ নেন। বাজারে কেউ যেন কোনো ধরনের অপতৎপরতা চালাতে না পারে তা প্রতিরোধ করার উদ্দেশ্যেই কাজ শুরু হয়েছে। যে কোনো সিন্ডিকেট ও যে কোনো অপতৎপরতা সমূলে বিনষ্ট করার জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ তৎপর রয়েছে। যে কোনো সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার সক্ষমতা ঢাকা মহানগর পুলিশের রয়েছে।’
সিন্ডিকেটের পেছনে রাজনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে কি না এবং সেটি ভাঙা সম্ভব কি না—সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে ডিএমপির প্রধান বলেন, ‘সিন্ডিকেটের বিষয়ে কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতা কারও আছে, এটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা আছে। তারা কাজ করছেন।’ ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘সবাই একসঙ্গে কাজ করলে, সবাই সহযোগিতা করলে, অবশ্যই বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।’
যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার সঞ্চালনায় সভায় ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ পুলিশ সদর দপ্তর, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ফায়ার সার্ভিস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও ঢাকার বিভিন্ন থানা এলাকার ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং ডিএমপির সব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) উপস্থিত ছিলেন। সূত্র : আজকের পত্রিকা