শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:১৬ pm
রবিউল ইসলাম মিনাল (নিজস্ব প্রতিবেদক) গোদাগাড়ী :
বরেন্দ্র অঞ্চল হিসাবে খ্যাত রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় সমলয় পদ্ধতিতে আউশ পাকাধান কাটা শুরু হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন। এ অঞ্চলের কৃষকরা মনে করছেন এটা তাদের জন্য আশির্বাদ হয় এসেছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টারের সাহায্যে ধান কেটে কৃষকেরা ফসল ঘরে তুলছেন। এতে শ্রমিক-সংকটসহ নানা প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। কমেছে ধানের উৎপাদন খরচও।
এই পদ্ধতিতে শ্রমিক-সংকট ও নানা প্রতিবন্ধকতা দূর হওয়ার পাশাপাশি অল্প সময়ে ধান কাটা মাড়াই এক সঙ্গে হয়ে যাওয়া ও শ্রমিকের অনুপাতে খরচ কম হওয়ায় কৃষকদের ভোগান্তি দুর হচ্ছে এবং কমছে উৎপাদন খরচ। যার ফলে এ অঞ্চলের কৃষকরা কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ধান কাটতে পেরে মহাখুশি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এই মৌসুমে উপজেলায় আউশ ধান চাষ হয়েছিল ১৭ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমিতে। গত বছর চাষ হয়েছিল ১৪ হাজার ৯৭৫ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এবার আউশ ধান চাষ হয়েছিল ২ হাজার ৫৭০ হেক্টর বেশি।
কৃষি অফিস বলছে, এখন পর্যন্ত এ উপজেলায় শতকরা ৯২ ভাগ ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনে ধান কাটায় দ্রুত ধান কাটা হয়েছে। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে আরো সময় লাগতো। আবার এ মেশিন এর সুফল পাচ্ছে কৃষকেরা। কম সময়ে অল্প খরচে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারছে। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমে যাচ্ছে।
মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, যে সকল ক্ষেতে ধানের গাছ খাড়া হয়ে আছে সেই ধান কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে কাটতে সময় লাগছে বিঘা প্রতি ৩০ মিনিট। আর যে ধানের গাছ মাটিতে পড়ে গেছে সেই ধান কাটতে বিঘা প্রতি সময় লাগছে একঘন্টা।
মাঠে কথা হয় কৃষক মাসুদের সাথে। তিনি বলেন, এবার আমার ৮ বিঘা ধানের আবাদ ছিল। দুর্যোগ আবহাওয়ার কারণে পাকাধান কেটে ঘরে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। শ্রমিকদের সাথে ধান কাটার জন্য কথা বললে তারা বলে এখন সিরিয়াল নেই। শ্রমিক পাচ্ছিলাম না। এলাকায় কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন আসায় মেশিন দিয়ে ধান কেটেছি। আর ৩ দিন থেকে ৪ দিন ধান কাটতে না পারলে বৃষ্টির পানিতে আমার ক্ষেতের পাকাধান সব নষ্ট হয়ে যেত।
তিনি আরো বলেন, শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা মাড়াই করালে বিঘা প্রতি শ্রমিকদের মজুরি বাবদ সাড়ে ৫ মণ ধান লাগতো। কিন্তু কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটাতে বিঘা প্রতি খরচ লেগেছে ১ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। যা বিঘা প্রতি খরচ পড়েছে আড়াই মণ ধান। এতে করে শ্রমিক ভোগান্তি কমেছে, খরচও লেগেছে কম।
কথা হয় আরেকজন কৃষক মোজাম্মেলের সাথে। তিনি বলেন, ৫ বিঘা জমিতে আউশ ধানের আবাদ করে ছিলাম। হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কেটেছি। বিঘা প্রতি খরচ নিয়েছে ২ হাজার টাকা করে। তাতে আমার অনেক লাভ হয়েছে। মেশিনে ধান কাটা মাড়াই ও উড়ানোর কাজ এক সাথে হয়ে যাচ্ছে। কাদা জমি থেকে গাড়ি বা ট্রলি নিয়ে ভাল রাস্তায় ধান আনা কষ্টকর হয়ে যেত। কিন্তু কাদা জমি থেকে হারভেস্টার মেশিনই ভাল রাস্তায় মাড়াই করা ধান এনে বস্তায় ঢেলে দিচ্ছে। এ ধান আর উড়ানো লাগছে না। সহজেই ধান বহন করে ঘরে তোলা যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, কৃষকেরা শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিল। হারভেস্টার মেশিন এ এলাকায় আসায় শ্রমিকদের জিম্মি থেকে কৃষকরা মুক্তি পাচ্ছে।
গোদাগাড়ী উপজেলা কৃষি অফিসার মরিয়ম আহমেদ বলেন, কৃষিতে যান্ত্রিক সুবিধার বিকল্প নাই। যান্ত্রিক সুবিধা বৃদ্ধি করতে হবে। এই বৈরী আবহাওয়ায় কাদা জমিতে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। এতে করে সময় কম লাগছে ও উৎপাদন খরচ কমার পাশাপাশি ধান চাষে লাভবান হচ্ছে কৃষকরা বলে জানান এই কর্মকর্তা। রা/অ