রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:০২ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে লাখ লাখ টাকার হাজতি বানিজ্যসহ চরম অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। করাগারে থাকা হাজতিদের এক ওয়ার্ড থেকে আরোক ওয়ার্ডে বদলি করে লাখ লাখ টাকা ও সুস্থ হাজতিদের কেন্দ্রীয় করাগারের হাসপাতালে রেখে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য চলছে। আর এসব টাকা কিছু অসাধু কয়েদি ও জেলখানার কিছু কর্মকর্তারা ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন প্রতিমাসে।
সাম্প্রতিক জেল থেকে বের হয়ে আসা গোদাগাড়ীর ইকু, জুনায়েদসহ বেশ কিছু হাজতির কাছ থেকে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার বর্তমানে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। জেলখানার কেস টেবিলের ওয়েটার কয়েদী মানিক, নাসির এবং কারারক্ষী সুবেদার শাহ্ জালাল ও সালামের যোগসাজসে বিভিন্ন হাজতিদের এক ওয়ার্ড থেকে আরেক ওয়ার্ডে বদলি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এরা হাজতিদের কখনও সিভিল থেকে পদ্মা ওয়ার্ডে, যমুনা ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে তাদের ইচ্ছা মতো বদলি করে টাকা দাবি করে থাকে কয়েদিদের কাছে।
এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাজতিদের বদলি করতে টাকা নেয় ১ থেকে ২ হাজার টাকা। আবার ১-২ মাস পরে হাজতিদের থাকা ওয়ার্ড কেটে দিয়ে পুনরায় টাকা নিয়ে নতুন ওয়ার্ডে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। আর এসব টাকা সুবেদার ও বাবুদের মাধ্যমে ভাগ বাটোয়ারা করে থাকে তারা। কারাগারের কেস টেবিলের ওয়েটার কয়েদি মানিক ও নাসির এবং কারারক্ষী সুবেদার শাহ্ জালাল ও সালাম র্দীঘদিন যাবত এভাবেই লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
সাম্প্রতিক এক কারারক্ষীর অর্থ হাতিয়ে নেয়ার একটি অডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। কেন্দ্রীয় কারাগারের চাল অবৈধ ভাবে পাচারকালে মোহনপুর থানা পুলিশ আটক করেছিলো। পরে কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপে ছাড় পায় ট্রলিসহ চালক। এর পাশাপাশি হাসপাতালের কয়েদি অথবা হাজতিদের দেখা করতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হয় অনেক মানুষকে।
অপরদিকে, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতাল নিয়ে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। হাসপাতালের মেডিকেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা টাকা পেলেই সুস্থ হাজতিদের হাসপাতালে বেড দিয়ে দেয়। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালে সুস্থ হাজতিদের জন্য কর্তব্যরত ডাক্তার মনে করলেই বন্দীদের হাসপাতালে রাখার ব্যবস্থা করতে পারেন। অসুস্থ হাজতিদের চিকিৎসার জন্য ২০০ শয্যার হাসপাতাল থাকলেও অধিকাংশ বন্দী টাকার বিনিময়ে হাসপাতালে থাকার সুযোগ পায়। এজন্য তাদের মাসে আগে গুণতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। বর্তমানে সেই টাকার পরিমান বেড়ে হয়েছে ৭ হাজার টাকায়।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে হাসপাতালে থাকার নিয়ম কোন কয়েদি ও হাজতি যদি অসুস্থ হয় তাহলেই হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেয়ার নিয়ম জেল কোড অনুসারে। কিন্তুু কারাগারের হাসপাতালে সুস্থ হাজতিদের মাসিক কন্টাকে রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে হাসপাতালের কর্মরত ডাক্তারসহ অন্যানরা। একজন সুস্থ হাজতিকে ১ মাস হাসপাতালে রেখে ৭ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে হাসপাতালের ডাক্তার। এছাড়াও কোন প্রেস্কিপশন ছাড়া এক প্যকেট সিগারের দিলে দেয়া হয় ঘুমের ঔষধ। এ ভাবে লাখ লাখ টাকার বানিজ্য চলছে কেন্দ্রী কারাগারের হাসপাতালে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকার রফিক নামের এক কয়েদি জানান, আমি ১ মাস হাসপাতালে ছিলাম ৭ হাজার টাকা দিয়েছি। আমার ১ মাস পুরণ হতে আরো ৭ দিন বাঁকি ছিলো কিন্তুু জামিন হয়ে গেছে। হাসপাতালে থাকরার জন্য ফার্মাসিস্ট এর সাথে কন্ট্রাক করে বাইরে থেকে টাকা দেয়ার পরে আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। জেল মেডিকেলের রাইটার হিসাবে আছে কয়েদি চন্দনসহ আরো কয়েক জন। তাদের এক প্যকেট ডারবি সিগারেট দিলে তারা ঘুমের ঔষধ মাইলাম ২-৩ টা করে দিয়ে থাকে। সে টা খেয়ে একটু ঘুম ভালো হয় এ জন্য চাহিদাও রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, জেল খানা থেকে কয়েদি অথবা হাজতিদের পরিবারের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার নিয়ম আছে ৭ দিনের মধ্যে ১ দিন। কিন্তুু ১ হাজার টাকা দিলে ৭ দিনের মধ্যে ৩ দিন কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয়। এভাবে মোবাইল অপারেটর এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। জেল থেকে ফোনে কথা বলা এমন সুযোগের কারনে জেলে থাকা র্শীষ মাদক কারবারিরা বাইরের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করছে।
জেল হাজতে নিরাপদে থেকে তারা বাইরে মাদক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করছে এমন অভিযোগ রয়েছে। সাম্প্রতিক, রাজশাহীর বাঘা উপজেলা র্শীষ মাদক কারবারি চপল ও ভারতের মাদক ব্যবসায়ী গ্রেপ্তার হয়ে জেল হাজতে ছিলেন। চপলের জামিন হলেও ভারতের ওই নাগরীকের জামিন হয়নি। চপল জেলে থাকা অবস্থা তার ভাই সিদ্দিকের সাথে কথা ফোনে কথা বলে মাদক কারবার নিয়ন্ত্রন করতেন।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে হাজতিদের খাবারে মান খুব নিম্নমানের। হাজতিদের সকালে রুটি ও গুড়, সবজি দেয়া হয়। রুটি সেদ্ধ হয় অর্ধেক আর অর্ধেক থেকে যায় কাঁচা। দুপুরের খাবার সকাল ১১ টার দিকে ডাল, সবজি ও ভাত দেয়া হয় মাঝে মাঝে মাছ ও মাংশো দেয়া হয়। আর হাজতিদের রাতে খাবার দুপুর ৩ টার দিকে দেয়া হয় এবং ৬ টার মধ্যে খেয়ে নিতে হয়। না হলে খাবার নষ্ট হয়ে যায়। কখনও ভাতের সাথে একপিচ ছোট ভাজা মাছ, কোন সময় একপিচ মাংশো, কোন সময় বয়লার মুরগির মাংশো ও সাথে সবজি, পাতলা ডাল দেয়া হয়। হাজতি ও কয়েদিদের নামে যে পরিমান খাবার বরাদ্দ থাকে সরকারি ভাবে সেই পরিমান খাবার মানসম্মত দেয়া হয়না তাদের বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল জলিলের মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এব্যাপারে কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। তবে এমন কর্মকান্ডে জড়িতোদের বিষয় তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। কোন কায়েদি বা হাজতি যদি জেল কোর্ডের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেন্দ্রীয় কারাগারের হাসপাতালের সহকারি সার্জন আরেফিন সাব্বিরের সাথে তার মুঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি তাকে।
সুস্থ কয়েদি হাসপাতালে রেখে এক মাস ৭ হাজার টাকা করে নেয়ার বিষয় কেন্দ্রীয় কারাগারের ডাক্তার মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি হাসপাতালে আর নেই। আমার বদলি হয়েছে কারা প্রশিক্ষন একাডেমিতে। যারা ওই হারাম টাকা খায়, তাদের কে বলেন। আমি কোন হারাম টাকা খাই না। সূত্র : পদ্মাটাইস