রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:০০ pm
ডেস্ক রির্পোট :
আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য শাসকদের ২৯ বছরের শাসনামলে দেশে কী উন্নয়ন হয়েছে এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তখন কেন হঠাৎ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে, সন্দেহ হয় রে। তিনি বলেছেন, ভোট ডাকাতের মুখে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনে সন্দেহ হয়। আওয়ামী লীগের আন্দোলন সংগ্রামে মানুষ ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। এখন নির্বাচন নিয়ে এত কথা কেন?
শুক্রবার বিকেল ৪টায় গণভবনে যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান ও যুক্তরাজ্য সফরের নানা দিক তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি কথা শুনি। যারা ভোট চুরি ও ডাকাতি করেছে, তাদের কাছ থেকে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা শুনতে হয়। সব জায়গায় এটা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। সামরিক স্বৈরশাসক যখন ছিল, তখন তো আমরা সংগ্রাম করেছি, মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে। আমরা ক্ষমতায় এসে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছি।
জনগণের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই তাদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হয়েছে। এর আগে তো অনেকে ক্ষমতায় ছিল, তারা মানুষকে কী দিয়েছে? মানুষ একবেলাও ঠিকমতো খেতে পারতো না। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলে সব ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ ভোট ও ভাতের অধিকার পেয়েছে। এখন নির্বাচন নিয়ে এত কথা কেন? তারা কি আমাদের এই এগিয়ে যাওয়া চায় না? সন্দেহ হয় রে!
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কারও সঙ্গে কথা হয়নি: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কারও সঙ্গে কথা হয়নি বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, (যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সফরে) কেউ আমাকে এ কথা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যু) জিজ্ঞাসা করেনি। আসলে এ ব্যাপারে কোনো কথাই হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর লিখিত বক্তব্য শেষ হলে প্রশ্নোত্তর পর্বে এক সাংবাদিক জানতে চান, মার্কিন প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক নিয়ে কোনো কথা বলেছেন কিনা? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, না, আমার তো মনে পড়ে না। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী উল্টো জানতে চান এ ধরনের কোনো কথা কোথাও হয়েছে কী না? জবাবে প্রশ্নকারী ওই সাংবাদিক বলেন, এমনটা শোনা গেছে। তখন প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরকম কোনো হয়নি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার-টরকার নিয়ে কেউ কোনো কথা বলেননি। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এক অভিজ্ঞতা ২০০৭-০৮ এ হয়ে গেছে না আমাদের! তারপর আবার কেউ কি চায়? চাইতে পারে? আর এই ব্যবস্থাটা তো বিএনপিই নষ্ট করছে। এই সিস্টেমটা (তত্ত্বাবধায়ক সরকার) তো বিএনপি নষ্ট করে দিয়েছে।
রাস্তায় ঘেউ ঘেউ করলেই বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে ধরে না: সংসদের বাইরের কোনো দলকে বিদেশে বিরোধী দল হিসেবে মনে করা হয় না উল্লেখ করে বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যাদের নির্বাচন করার মতো সাহস নেই, যারা নির্বাচন করে সংসদে আসতে পারে না, তারা আবার বিরোধী দল কিসের? গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংসদ সদস্য হিসেবে বিরোধী দলে যাদের আসন তারাই বিরোধী দল। আর রাস্তায় কে ঘেউ ঘেউ করে বেড়ালো, সেটাতে কিন্তু বিদেশে কখনও বিরোধী দল হিসেবে ধরে না। এটা সবার মনে রাখা উচিত।
বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তিনি বলেন, অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে হবে। বিরোধী দল থাকতে হবে। কিন্তু বিরোধী কে? যাদের সংসদে একটি সিট নেই তাদের বিরোধী দল হিসেব করে তো রাখা যায় না। বলা যায় না। বিএনপিকে আন্দোলনের সুযোগ দেওয়ার প্রতি ইঙ্গিত তরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো ওদের খুলে দিয়েছি, তোমাদের যা খুশি করো। কাজের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় অর্জন করে আসো। তিনি বলেন, এত টেলিভিশন খুলে দিয়েছি। টকশোতে যে যা পারছেন, টক কথা মিষ্টি কথা বলে যাচ্ছেন। খুব বলেন, কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু সারা দিন কথা বলার পর যদি বলেন আমাদের কথা বলতে দেয় না, আর বিএনপির তো মাইক একটা লাগানো থাকে। আর বলেন আমাদের মিটিং মিছিল করতে দেওয়া হয় না। যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, আমাদের সঙ্গে কী আচরণ করতো? আমরা যদি তার একটা কণাও করতাম তাহলে তো ওদের অস্তিত্বই থাকতো না, থাকবে অস্তিত্ব? থাকবে না। তিনি বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়ায় যুদ্ধ, প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেল। পরিবহন খরচ বেড়ে গেলো।
আমরা তো তাও খেয়ে-পরে আছি। যান না, আমেরিকায় যান, ইংল্যান্ডে যান। বিভিন্ন দেশে যান সেখানকার মানুষের কী অবস্থা! ওই একটা টমেটো কয়শ’ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। একটা রুটি কত দিয়ে কিনতে হয়। সেখানে নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে। বেশি জিনিস কিনতে পারবে না। সাম্প্রতিক বিভিন্ন দেশ সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত খাদ্যমন্দা। এটা কেউ বলবে কেউ বলবে না। আমি নিজেই তো কয়েকটা দেশ দেখলাম। সেখানে যে কী অবস্থা আমরা জানি। ওয়াশিংটনে তো বাজার-টাজার করে আমরা রান্না করে খেয়ে আসছি। এক পিস মাছ কিনতে বা দুই টুকরো মুরগি কিনতে কত শত টাকা খরচ হয় সেটা তো আমরা নিজে দেখে আসছি। কিন্তু আমরা মানুষের পাশে আছি। যাতে মানুষের কষ্ট না হয়।
পাঙ্গাশ মাছ খাওয়া নিয়ে কোনো একজনের বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন বলে দিলেন পাঙ্গাশ মাছ খেতে পারেন না। আমি যদি জিজ্ঞাসা করি ২০০৯ বা ১৯৯৬ সালের আগে কে কত পাঙ্গাশ মাছ খেয়েছেন। মানুষ যেখানে আগে নুনভাত খেতে পারতো না, এখন অন্তত পাঙ্গাশ মাছের কথা চিন্তা করে। এই মাছ আগে বরিশাল আর যমুনা নদীতে পাওয়া যেত। সারা দেশে পাওয়া যেত না। গবেষণার মাধ্যমে এটি চাষ হয় এবং সারা দেশে পাওয়া যায়। যেখানে মানুষ নুনভাতের জন্য হাহাকার করতো। ফেন চাইতো, নুনভাত চাইতো, সেখানে মানুষ মাছ মাংস ডিম খাওয়ার জন্য চিন্তা করতে পারে। এইটুকু মানুষের জন্য করতে পারছি, আমি ওইভাবে দেখি। আমাদের যতটুকু সাধ্য ছিল সেটা করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আগে বিদেশে বাংলাদেশ শুনলে সবাই নাক সিটকাতো। এখন আর সিটকায়? বাংলাদেশের নাম শুনলে এখন আলাদা মর্যাদা নিয়ে তাকায়। উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দেখে। এটা বাসাতে হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে বলেই যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে দেশের উন্নতি করি।
বেশি কথা বললে সব বন্ধ করে দিয়ে বসে থাকবো: সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে শতভাগ বিদ্যুতায়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদ্যুৎ শতভাগ দেই। কমিয়ে ২৮ ভাগে নিয়ে আসবো? সবাই একটু টের পাক যে (বিএনপি সরকারের সময় বিদ্যুতের অবস্থা) কী ছিল। আমরা তো ভুলে যাই। বিদ্যুৎমন্ত্রীকে বলেছিলাম, প্রতিদিন যেন কিছুটা লোডশেডিং দেওয়া হয়। তাহলে মানুষের মনে থাকবে যে, লোডশেডিং আছে। পয়সা দিয়ে তেল কিনে জেনারেটর চালাতে হবে। তখন আক্কেলটা ঠিক হবে যে, এই অবস্থা তো ছিল। এখন তো আমরা করে দিচ্ছি, ভর্তুকি দিচ্ছি। কেন আমি ভর্তুকি দেবো? সবাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও ভর্তুকির সুযোগটা অর্থশালী-বড়লোকরা নিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেখানে একটা স্লট ঠিক করবো। এখন থেকে কত পর্যন্ত সাধারণ মানুষ ব্যবহার করে, তাদের জন্য এক দাম। আর তার থেকে যারা বেশি ব্যবহার করবে তাদের জন্য আলাদা দাম। ইতোমধ্যে আমি নির্দেশ দিয়েছি, ওইভাবে কয়েকটা স্লট করে দেবো। যে বেশি ব্যবহার করবে, তাকে বেশি দামে কিনতে হবে। সেইভাবে একটা ব্যবস্থা করার জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। এটার ওপর কাজ চলছে, এভাবে আমরা করে দেবো।
বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা, কেউ কান দেবেন না: ‘বিএনপি যা বলে তার সবই মিথ্যা’ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না। জি-২০ সম্মেলন থেকে প্রধানমন্ত্রী খালি হাতে ফিরেছেন, বিএনপির এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সরকার প্রধান বলেন, বিএনপির এই অভিযোগের কোনো উত্তর দিতে চাই না। আমি শুধু দেশবাসীকে বলতে চাই- বিএনপির নেতারা একটি মাইক হাতে কীভাবে মিথ্যা কথা বলে সেটা সবাই জেনে নেন। মিথ্যা বলাটা তাদের অভ্যাস আর সব কিছুকে খাটো করে দেখার চেষ্টা, এই বিষয়ে যেন দেশবাসী সচেতন থাকে। তারা যা বলে তার সবই মিথ্যা। মিথ্যা কথায় কেউ কান দেবেন না। মিথ্যা কথায় কেউ বিশ্বাস করবেন না- দেশবাসীর কাছে এটা আমাদের আহ্বান। বিএনপি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তাদের জন্মই হয়েছে অবৈধভাবে। আর টিকে আছে মিথ্যার ওপরে। তাদের শেকড় তো নেই। তারা মিথ্যার ওপর নির্ভর করে। এটাই করবে। এটা তাদের অভ্যাস। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সুশীল সমাজের সমালোচনা করে বলেন, ‘কিছু স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে অনেকে বললেন, মেগা প্রজেক্ট আমরা করেছি। কিন্তু দরিদ্রদের জন্য আমরা নাকি কিছু করিনি। এরকম বক্তব্য শুনলে মনে হয়, তারা বাংলাদেশটাকে দেখেনি। তারা ঘরের ভেতরেই আছেন। আর শুধু টেলিভিশনটাই দেখেন। দিন দুনিয়া তাকিয়ে দেখে না। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দরিদ্র বিমোচনসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন।
ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদের সতর্ক হতে হবে: ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে নিজেদের সতর্ক হতে হবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ডেঙ্গুতে মানুষ মারা যাচ্ছে, এটি খুবই দুঃখজনক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের যতক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সুরক্ষিত হবে না। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে, নিজের চারদিকে পানি জমে থাকে, ময়লা ফেলে রাখে। নাগরিকের নিজেরও দায়িত্ব আছে। তবে আমরা সরকারের পক্ষ থেকে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, এখন মশারি না টানানো ফ্যাশন হয়ে গেছে। নিয়মিত মশারি টানাতে হবে। বাড়ি থেকে গেলে কমোডের ঢাকনা বন্ধ করে যেতে হবে। নিজেদের আশপাশের মানুষকে সচেতন করতে হবে। শুধু কমিটি করে দিলেই কাজ হবে না। এ সময় তিনি তার সরকারের নানান পদক্ষেপ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সংসদ সদস্য ও সরকারের পদস্থ কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। সূত্র : এফএনএস