শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৪৩ am
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার নেপথ্যে নাটের গুরু সহকারী প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামান সহিদ। প্রধান শিক্ষককে যেকোন উপায়ে হটিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হওয়ার অনেক দিনের খায়েস তাঁর। এজন্য স্কুল ম্যানেজিং কমিটির বর্তমান সভাপতি রুস্তম আলী প্রামানিককে উসকে দিয়ে তার সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিনিয়ত বিদ্যালয়ে একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
স্কুলে যোগদানের পর থেকেই তার খায়েস তিনি হবেন প্রধান শিক্ষক। এজন্য নানা ফন্দিফিকির। কিভাবে প্রধান শিক্ষককে হটানো যায়। সেই জন্য নানা কৌশলে স্কুলের সভাপতি রুস্তম আলী প্রামানিককে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। বিষয়টি স্কুল কমিটির সদস্যরা আঁচ করতে পেরে সভাপতির ব্যাপক অনিয়ম-দূর্নীতি ও সেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে কমিটির সদস্য সচিবসহ ৬ সদস্য একসাথে পদত্যাগ করেছেন।
জানা গেছে, গত ২৩ অক্টোবর স্কুলে ক্লাস চলাকালীন সময়ে হামলার নেপথ্যে নেতৃত্ব প্রদানকারী হিসেবে সভাপতি রুস্তম আলী প্রামানিক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তীর উন্মোচিত হয়েছে। ওইদিন প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে এলাকাবাসীর ব্যানারে মহাসড়কে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে বহিরাগতরা। বিক্ষোভ শেষে তারা বিদ্যালয় চত্বরে আন্দোলন শুরু করলে দুপক্ষের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ঘটে। ওই সময় বিদ্যালয়ের অফিস রুমে অবস্থান করলে নীরব ভূমিকায় ছিলেন সভাপতি রুস্তম আলী ও সহকারী প্রধান শিক্ষক সহিদ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষককে অপসারণ করিয়ে যেকোন বিনিময়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক হতে চান সহকারী প্রধান শিক্ষক সহিদুজ্জামান সহিদ। এজন্য তাঁর এতো নাটোকের উদ্ভট। ওইদিনের সংঘর্ষের পরবর্তী সময়ে পুনরায় চক্রান্তের জাল বুনেন তিনি। তারই মদদে আজিজ নামের কথিত অভিভাবক সদস্যকে দিয়ে আদালতে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের করিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করান।
এছাড়াও সহকারী প্রধান শিক্ষক এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির যোগসাজসে উল্টো প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয়। তাদের এ ধরণের হীন মানষিকতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি নানা ধরণের জটিলতায় পড়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এদিকে, কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে সদস্য সচিবসহ ৬ সদস্য পদত্যাগ করেছেন।
বৃহস্পতিবার ৫ অক্টোবর স্কুলের কমিটি ভেঙে দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড বিদ্যালয় পরিদর্শক বরাবর আবেদন করেছেন প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম। বিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সভাপতির অপসারণসহ নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১১ সদস্য নিয়ে দুই বছর মেয়াদে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি গঠিত হয়। পরিচালনা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন মো. রুস্তম আলী প্রামানিক। স্কুলের কমিটি গঠনের পর থেকে সভাপতি বিভিন্ন সময় বিদ্যালয়ে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটাতে থাকেন।
এছাড়াও তিনি স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ কমিটির সদস্যদের সাথে প্রতিনিয়ত খরাপ আচারণ করেন। এতে করে দিনদিন স্কুলের শিক্ষাকার্যক্রমসহ অন্যান্য কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গত ৪ অক্টোবর স্কুল পরিচালনা কমিটির অভিভাবক সদস্য কিবরিয়া, এনতাজ, হালিম মীর ও ববিতা আখতার। এছাড়াও শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য এমদাদুল হক ও জান্নাতুল নাইম পদত্যাগ করেন।
পদত্যাগকারী অভিভাবক সদস্য এনতাজ আলীসহ কয়েকজন সদস্য বলেন, প্রধান শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সাথে খারাপ আচারণসহ বিভিন্ন অনিয়ম করায় সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা এনে একসাথে ৬ জন সদস্য আমরা পদত্যাগ করেছি।
এবিষয়ে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী প্রামানিক বলেন, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলামকে আবারও সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এজন্য হয় তো তারা জোট বেধে পদত্যাগ করেছেন বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি। এবিষয়ে কেশরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সহিদুজ্জামান সহিদ বলেন, নিয়মের বাহিরে প্রধান শিক্ষক হওয়ার ইচ্ছা তাঁর নেই। স্কুলের বিষয়ে আমাকে অন্যায় ভাবে জড়ানো হচ্ছে বলে এড়িয়ে গেছেন তিনি।
এব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত ৪ অক্টোবর সভাপতির ব্যাপক অনিয়ম ও সেচ্ছাচারিতার কারণে কমিটির ১১ জন সদস্যের মধ্যে আমি সদস্য সচিব ছাড়াও কমিটির ৬ সদস্য পদত্যাগ করেছেন। এতে কমিটির কার্যকারিতা আর থাকে না এবং কমিটি ভেঙে যায়। আজ বৃহস্পতিবার বোর্ডকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। রা/অ