রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। নবীন, প্রবীণ ও ত্যাগী নেতাকর্মী সমর্থদের বাদ দিয়ে ব্যবসায়ী, কর্মজীবী ও শিক্ষক দিয়ে চালানো হচ্ছে পুরো তানোর উপজেলা আ.লীগ ও অঙ্গ-সংগঠন। এতে মুলধারার আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। চারিদিকে বইছে আলোচনা সমসালোচনার ঝড়।
মুলত তানোরে উড়ে এসে জুড়ে বসা অতিথি পাখির সংখ্যাই বেশি। এসব উড়ে আসা জুড়ে বসা অতিথি পাখি নেতারা বাগিয়ে নিয়েছেন পদ পদবিও। আর তারা এসব পদ ও পবী পেয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করে দলের মধ্যে কোন্দল ধরিয়ে দিচ্ছেন তারা। এতে কোনঠাসা হয়ে পড়েছে তৃণমূলের ত্যাগী নেতারা। শুধু তাই নয়, এসব অতিথি নেতারা লবিংগ্রবিং তৈরি করে দলকে চরমভাবে বিভক্তের মধ্যে ফেলেছেন বলে মনে করছেন ত্যাগী নেতারা। বর্তমানে রাজশাহীর তানোর আ.লীগের রাজনীতিতে চলছে অনুপ্রবেশকারী ও কুটুম লীগ দারা। এসব কুটুম লীগের মধ্যে রয়েছে উড়ে এসে জুড়ে বসা নেতা। ফলে প্রকৃত আ.লীগের কান্ডারী নবীন, প্রবীণ, ত্যাগী, নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে এখন মূর্তিমান আতঙ্ক এসব নেতারা।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আত্মীয় বা কুটুম লীগের অন্যতম ব্যক্তি আবুল বাসার সুজন। তিনি একজন হাট-ইজারাদার। কুটুম লীগের সুবাদে এমপির সান্নিদ্ধে এসে তিনি এখন তানোর আওয়ামী লীগের মাথা। যদিও সিনিয়র নেতারা বলছেন, এরা সুযোগ সন্ধানী নেতা। যখন যেদিকে বৃষ্টি পড়ে তখন সেদিকে ছাতা ধরে। এরা অতিথি পাখির মত আসে আবার চলে যায়। রাজশাহী-১ (তানোর- গোদাগাড়ী) আসনের এমপি তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়ায় এসব অতিথি পাখিরা পদ-পদবী পেয়ে নিয়োগ বাণিজ্য থেকে শুরু করে দলের কোন্দল সৃষ্টিতে প্রধান ভুমিকা রাখছে।
জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুমতি ছাড়া সম্প্রতি তানোর ও মুন্ডুমালা পৌর ছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা হয়েছে। সম্মেলনে ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে এসব কমিটিতে আনা হয়েছে নতুন মুখ। তানোর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি করা হয়েছে আকচা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসলাম উদ্দিনকে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় দলে অনুপ্রবেশকারী হাট ইজারাদার আবুল বাসার সুজনকে।
অথচ তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হক পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকলেও তাকে কোন কিছুই জানতে দেয়া হয়নি। ফলে আবুল বাসার সুজন ওয়ার্ড কমিটি করতে গিয়েও পাচ্ছেন না তেমন গ্রহণ যোগ্যতা। অভিযোগ রয়েছে, আবুল বাসার সুজন আগে কখনো তানোর পৌর আ.লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। এক সময়ে তিনি বিএনপি করতেন। তিনি রাজশাহী মহানগরীর স্থায়ী বাসিন্দা। আগামীতে তানোর পৌর নির্বাচনে মেয়রপ্রর্থী হবার কারণে চাপড়া মহল্লায় জমি কিনে দালান বাড়ি করেছেন। বর্তমানে আ.লীগের দলে ভিড়ে সুজন ওয়ার্ড কমিটি গঠনে নেতাকর্মীরা তাকে মেনে নিতে পারছেন না। আত্মীয়তার সুবাদে হঠাৎ করেই এমপি ফারুক চৌধুরী সুজনকে দলে নিয়ে এসে দিয়েছেন পদ। আর এই সুযোগে এমন কোনো কাজ নেই যা তিনি করছেন না। দলের মধ্যে কোন্দল সুজনকে নিয়েই। কারণ তার মাথার উপর আশির্বাদ হিসাবে রয়েছে এমপির হাত।
এব্যাপারে তানোর পৌর আ.লীগের সভাপতি ও মেয়র ইমরুল হক বলেন, তারা নিজেদের ইচ্ছে মতো ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন করে কমিটি গঠন করেছে। যা কেন্দ্র ও জেলা কমিটি থেকে কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। এমনকি সম্মেলনে আমি সভাপতি অথচ আমাকে ডাকাও হয়নি। এখন ক্ষমতা এমপি পন্থীদের হাতে তারা দলে যা খুশি তাই করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
এবিষয়ে মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র সাইদুর রহমান জানান, আমাদের ছাড়াই একক ক্ষমতার বলে তারা ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করে চলছে। যা কেন্দ্র ও জেলা কমিটির নেতারা কোন কিছুই অবগত নন। এভাবে কোনদিন কমিটি গঠন হয় না। কিন্তু তাদের হাতে ক্ষমতা আছে বলে তারা যা খুশি তাই করে চলেছে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ দিয়েছি। তারা কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন সেই অপেক্ষায় আমরা আছি।
সূত্রমতে, গত ২০২২ সালের ১৫ জুলাই তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে তৎকালীন সভাপতি গোলাম রাব্বানী ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন সমঝোতায় পদ থেকে সরে দাঁড়ালে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্মেলনের প্রধান অতিথি এসএ কামাল হোসেন মাইনুল ইসলাম স্বপনকে সভাপতি ও আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকারকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দেন। তবে, নতুন ভাবে কমিটিতে সভাপতি হিসেবে আসেন গ্রহণযোগ্যহীন মাইনুল ইসলাম স্বপন। কিন্তু সাধারণ সম্পাদক পদে কলেজ শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকারকে দলের উপযুক্ত ব্যক্তি বলে মেনে নেন সবাই।
এরপর ওই জুলাই মাস থেকেই পর্যায়ক্রমে তৃণমুল আ.লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন শুরু হয়। কমিটি গঠনের লক্ষ্যে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নকে দু’ভাগে বিভক্ত করে দু’জন সভাপতি দু’জন সাধারণ সম্পাদক করে দায়িত্ব দেয়া হয়। যা সম্পূর্ণ দলীয় গঠনতন্ত্র বিরোধী। ইউনিয়ন ও পৌর কমিটিতে অধিকাংশ শিক্ষকদের দায়িত্বে এনে চরম সমালোচিত হন স্থানীয় সাংসদ। ব্যবসায়ী, ইজাদারার ও শিক্ষক নির্ভর হয়ে উঠায় ক্ষুব্ধ হয় তানোর আ.লীগ।
দলীয় সুত্র জানায়, ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। পরে ময়না দলের সকল অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের এক কাতারে নিয়ে তানোরে আ.লীগের গতি বৃদ্ধি করে। এসময় এমপি ফারুক চৌধুরী ময়নাকে মাইনাস ফরমুলায় ধীরে ধীরে খর্ব করে। তার জায়গা দখল করে নিয়ে আসা হয়, অতিথি পাখি আবুল বাসার সুজন। তিনি ত্যাগী নেতাদের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালিয়ে এমপির কান ভারি করে এখন একক ক্ষমতার অধিকারী। সুজন তার অনুসারী হাটের কর্মচারীদের পদ পদবি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতি করে নতুন রুপে দ্বন্দ্ব শুরু করেছেন। এতে ওয়ার্ড পর্যায়ে শোকসভা ও বর্ধিত সভা করেও দলকে এক কাতারে আনতে পারেননি এসব নেতারা। এসব কারণে রাজশাহী-১ আসনে একটি বড় অংশ মনোনায়ন প্রত্যাশী গোলাম রাব্বানী ও আয়েশা আক্তার ডালিয়ার সভায় বেশি অংশ নিচ্ছেন। এতে অতিথি পাখিদের জন্য কর্মী ও ইমেজ সংকটে পড়েছেন খোঁদ এমপি ফারুক চৌধুরী। এমপিকে জনবিচ্ছিন্ন করতে এসব অতিথিরা যথেষ্ট বলে মনে করছেন নেতাকর্মীরা।
দলের সিনিয়র নেতারা বলেন, এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি প্রবীণ ত্যাগী নেতাদের ছিটকে ফেলে অতিথিদের দিয়ে তিনি মাঠ গোছাবেন এটা কোনোদিনই সম্ভব নয়। এই অতিথিরাই এমপির সর্বনাশের মুল কারণ হবে আগামী নির্বাচনে এমনটাই মনে করছেন ত্যাগী নেতারা।
এব্যাপারে তানোর পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আবুল বাসার সুজন বলেন, এমপি ফারুক চৌধুরী মহোদয় আমার নিকট আত্নীয় এটা ঠিক। কিন্তু দলের কিছু নেতাকর্মীরা এমপি ভাইয়ের সঙ্গে বেইমানী করেছেন। এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এমপির নির্দেশে তিনি দলের নেতাকর্মীদের একত্রিত করে গোছানোর চেস্টা করেছেন। তবে, নিয়োগ বাণিজ্য ব্যাপারে তিনি এড়িয়ে গেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম রাব্বানী এমপি ফারুক চৌধুরীকে উদ্দেশ্যে বলেন, রাজশাহী-১ আসনে আমরা শাসক পায়নি। পেয়েছি শোষক। যার কারণে তানোর আওয়ামী লীগের মধ্যে এতো দ্বন্দ্ব। তৃণমূলের ত্যাগী আওয়ামী লীগ নেতারা অতিথি পাখি সুজনের দাপটে রাজনীতির মাঠ ছেড়ে দিয়েছেন। তারা বিকল্প পথ খুঁজতে শুরু করেছেন। তিনি আরও বলেন, তানোর আওয়ামী লীগ এখন চলছে শোষিতদের দিয়ে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনিই এমপি প্রার্থী এটা নিশ্চিত। এবিষয়ে এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও রিসিভ হয়নি। রা/অ