রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:৪৫ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় দেওয়া ঋণের বড় অঙ্কের টাকাই তুলতে পারেনি রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ব্যবসার নামে ব্যাংক থেকে প্রায় ৬২ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। কিন্তু ঋণ নিয়ে ওই টাকা আর ফেরত দেয়নি তারা। টাকা আদায়ে মামলা করেই দায়িত্ব সেরেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। শর্ত ভেঙে ঋণ দেওয়া কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
স্থায়ী আমানতের বিপরীতে সুদ প্রদানের ক্ষেত্রেও নিয়ম লঙ্ঘন করেছে ব্যাংকটির কয়েকটি শাখা। নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত সুদ প্রদান করায় ব্যাংককে গচ্চা দিতে হয়েছে ১৯ কোটি টাকা। এ ছাড়া ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ঋণ তুলে আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ব্যাংকের কতিপয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু তাই-ই নয়, গ্রাহকের টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে পকেটে ভরেছেন অনেকেই। ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিটে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়েছে।
তবে রাকাবের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রহিম বলেন, ‘কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে যদি ঋণখেলাপি হয় বা ঋণ জালিয়াতি হয়, তা হলে তা দুঃখজনক। অনেক সময় অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া হয়। অনিয়ম করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। এছাড়া ঋণখেলাপি বা আদায়ের বিষয়টি ব্যাংকের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে অনাদায়ী ঋণগুলো আদায়ের। ধীরে ধীরে কমে এসেছে অনাদায়ীর পরিমাণও। যারা ঋণ পরিশোধ করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, ব্যাংকটিকে দাঁড় করানোর। এ জন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
অডিট রিপোর্টে দেখা গেছে, রাকাবের বগুড়া শাখা হতে ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা প্রকল্প ঋণ প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে বগুড়ার নুনগোলার হাজারদীঘি এলাকার আজমেরী হিমাগার লিমিটেডকে ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে সুদে ৪ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির ৩০১ দশমিক ২৫ শতক জমি ও মেশিনারিজ বন্ধক রাখা হয়। মঞ্জুরিপত্রে ১২ (২) নম্বর শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পটি সম্পন্ন করতে ব্যাংক ঋণ ও কোম্পানির ইক্যুইটি ব্যয় করার পর যদি অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের পুরোটাই কোম্পানির পরিচালকরা বহন করবেন। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই শর্ত লঙ্ঘন করে আরও অতিরিক্ত এক কোটি ৩২ লাখ ৪৭ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করে। ফলে মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। তবে প্রকল্পটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় এবং ঋণ আদায়ে মনিটরিংয়ে দুর্বলতার জন্য মন্দ ঋণে পরিণত হয়। পরে মামলা হলে আদালতের আদেশে সমস্ত প্রকল্প মেশিনারিজ এবং সহায়ক সম্পত্তি নিলামে বিক্রি করে মাত্র আট কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা করা হয়। কিন্তু সুদাসলে ব্যাংকের পাওনা ছিল ২৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। সম্পত্তি নিলামের পরও ব্যাংকের পাওনা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এই ঋণ প্রদানকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম উল্লেখ করে বাকি টাকা আদায়ের সুপারিশ করা হয়েছে রিপোর্টে।
মঞ্জুরিপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে প্রকল্পের অনুকূলে ঋণ প্রদান করা হয় নওগাঁ শাখা থেকেও। ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে এক কোটি ৪৬ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়। অডিট রিপোর্টে দেখা যায়, সুলতানপুর মৌজায় ১ দশমিক ৩৬২৩ একর জমির ওপর অবিস্থত মিলঘর গোডাউন, অফিস, চারকোল গোডাউন, ব্রয়লার শেড ও মেশিনারিজ সহায়ক জামানত হিসেবে গ্রহণ একই জমিতে প্রণীত নকশা দেখিয়ে প্রকল্প স্থাপনে মেসার্স গোল্ডমুন ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যান্ড অটো ফিড মিল নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। নিরীক্ষা দল ২০২১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রকল্প স্থানে জরাজীর্ণ গোডাউন, দুটি মোটর, দুটি হলার, তুষ ও কুঁড়ার বস্তা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। ফিড মিলের স্থানের কোনো নমুনাও দেখতে পায়নি তারা। এই ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ হলেও গ্রাহক কোনো অর্থই পরিশোধ করেননি। এখন সুদাসলে ওই ঋণের পরিমাণ এক কোটি ৪৬ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সে সময় প্রকল্প প্রস্তাব যাচাই করেই ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। তবে টাকা আদায়ের জন্য বর্তমানে মামলা চলমান।
একইভাবে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত লঙ্ঘন করে প্রকল্প প্রদান ও ঋণের কিস্তি আদায় না হওয়া সত্ত্বেও পুনরায় সিসি (প্লেজ) ও সিসি (হাইপো) ঋণ প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ঋণগুলো মন্দ ঋণে পরিণত হওয়ায় এখন ব্যাংকের অনাদায়ী ২২ কোটি ৭৮ লাখ ৭৩ হাজার টাকা। বগুড়ার শেরপুর শাখা হতে মেসার্স এগ্রো আর্ট ইন্ডাস্ট্রিজের নামে ২০১৪ সালে আট কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শর্ত ভঙ্গ করে আবারও ওই প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত তিন কোটি ঋণ প্রদান করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় ঋণটি খেলাপি হয়। এরপরও সিসি (প্লেজ) ও সিসি (হাইপো) ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ দেওয়ার সময় প্রাথমিক জামানত হিসেবে ২১২ দশমিক ৫ শতক প্রকল্প জমি ও প্রকল্পের মেশিনারিজ বন্ধক রাখা হয়। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের মৌজা অনুযায়ী ওই জমির মূল্য দাঁড়ায় ২১ লাখ ৭২ হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু মঞ্জুরিপত্রে জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৮৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ জামানতি সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ করে এই ঋণ দেওয়া হয়েছে। শর্ত ভঙ্গ করে প্রথম দফায় সিসি (প্লেজ) ঋণ হিসেবে ছয় কোটি ৬০ লাখ টাকা, দ্বিতীয় দফায় সিসি (হাইপো) হিসেবে ৬৭ লাখ টাকা এবং তৃতীয় দফায় সিসি (প্লেজ) হিসেবে সাত কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী ভাড়ায় সংরক্ষিত আলুর জন্য কোনো ঋণ প্রদান করা যাবে না। কিন্তু এই শর্তও ভঙ্গ করে প্রতিষ্ঠানটিকে ঋণ প্রদান করা হয়। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অনাদায়ীর পরিমাণ দাঁড়ায় আট কোটি ৫৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা।
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া শাখা থেকে মেসার্স সাদাত কোল্ড স্টোরেজ প্রাউভেট লিমিটেডকে ১৯৯৬ সালে ১৩ শতাংশ সুদে দুই কোটি ৯৩ লাখ ৮ হাজার টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানটি ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেনি। এরপর ১৫ শতাংশ সুদে আরও এক কোটি টাকা সিসি (প্লেজ) ঋণ প্রদান করা হয়। দুটি ঋণের টাকাই পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ২০২১ সাল পর্যন্ত তাদের কাছে ব্যাংকের পাওনা ১৪ কোটি ১৮ লাখ ৭৯ হাজার টাকা। যদিও নিরীক্ষার জবাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি মেনে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদনক্রমে ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ঋণ আদায় না হওয়ায় মামলা করা হয়েছে।
অডিটে আরও ধরা পড়েছে, কর্মকর্তাদের কর্তব্যে অবহেলার কারণে প্রদত্ত প্রকল্প ঋণের দুই কোটি সাত লাখ ৪৫ হাজার টাকা অনাদায়ী রয়েছে। রাকাবের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ২০০৬ সালে মেসার্স রাফা অটোমেটিক অ্যারোম্যাটিক রাইস মিলকে ৯০ লাখ টাকা ঋণ প্রদান করা হয়। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পর কোনো শর্তই মানেনি প্রতিষ্ঠানটি। এমনকি জোনাল ব্যবস্থাপকের তদারকির অভাবে ঋণের টাকা আদায়ও হয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সুদাসলে ব্যাকের পাওনা দাঁড়ায় দুই কোটি সাত লাখ ৪৫ টাকায়। ২০১৪ সালে রংপুর শাখা হতে শাহ আমানত স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজকে সাড়ে ১৫ শতাংশ সুদে নিয়ম ভেঙে চার কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়। ওই টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। ২০২১ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সুদাসলে ব্যাংকের অনাদায়ীর পরিমাণ ছয় কোটি ৪৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ঘটনাটিকেও গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে নিরীক্ষা প্রতিবেদনে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা চলমান।
অডিট রিপোর্টে আরও দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট হতে জমার রসিদে আদায়কৃত অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা না করে এবং জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ প্রদানের নামে এক কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরের অডিটে এই দুর্নীতি ধরা পড়েছে। রাকাব নীলফামারীর জেলার বড়ভিটা শাখার তৎকালীন কর্মকর্তা বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে জমার রসিদে আদায় করা অর্থ ব্যাংক হিসাবে জমা করেননি। ক্যাশিয়ার ও সুপারভাইজার দায়িত্ব পালনকালে শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল আলম একক স্বাক্ষরে বিভিন্ন তারিখে জমা রসিদে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা নেন। কিন্তু ওই টাকা ব্যাংকে জমা না করে আত্মসাৎ করেছেন। বড়ভিটা বণিক কল্যাণ সমিতির (সঞ্চয়ী হিসাব নং ৫২) হিসাবে ৩টি জমা রসিদ মূলে তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল আলম একক স্বাক্ষর ও সিলে সাড়ে ২৯ লাখ টাকা নিয়ে অত্মসাৎ করেন। শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল আলমের নামে ইস্যুকৃত চেকের (নং ৫৩০০৪৬৫) মাধ্যমে বড়ভিটা বণিক কল্যাণ সমিতির হিসাব হতে ৬ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়। আর এ কাজে শাখা ব্যবস্থাপককে সহায়তা করেন তৎকালীন ক্যাশ কর্মকর্তা এরশাদ আলী। একইভাবে রবিউল আলম বড়ভিটা প্রগতি সমিতির সঞ্চয়ী হিসাবে একটি জমা রসিদ মূলে একক স্বাক্ষর ও সিলে ৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা, মাসুদ করিম ডালুর ফার্মার ক্রেডিট ঋণ হিসাব নম্বরে ৪টি রসিদে ৩৪ লাখ ৩ হাজার টাকা, কামরুজ্জামান মিন্টু নামে ফার্মার ক্রেডিট ঋণের এক লাখ ৩০ হাজার টাকা একক স্বাক্ষর ও সীলে গ্রহণ করেন। এভাবে রবিউল আলম ৩৫ লাখ ৯৭ হাজার ৮০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ঋণ প্রদানেও জালিয়াতি করেন তিনি। ব্যাংকের নিয়ম-নীতি অনুসরণ না করে ভুয়া পরিচয়পত্র ও ওয়ারিশ সনদসহ নানা কাগজপত্র জালিয়াতির মাধ্যমে ৭৬ লাখ ২৯ হাজার টাকা ঋণ প্রদান দেখিয়েছেন। একক স্বাক্ষর ও সিলে জমা নেওয়া এবং ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যাংকের এক কোটি ১২ লাখ ২৭ হাজার টাকা রবিউল আলম আত্মসাৎ করেছেন বলে অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
রাকাবের প্রধান কার্যালয়েও ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। অডিটে ধরা পড়েছে, ব্যাংকের সিরাজগঞ্জের বেলকুচি শাখায় কর্মরত ৫ এবং অবসরে থাকা ৩ কর্মকর্তা মিলে পাসওয়ার্ড উন্মুক্ত করে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি, ভুয়া ব্যক্তির চেকে পে-অর্ডার প্রদান, স্বাক্ষর নকল ও চেক জালিয়াতি, ভাউচারবিহীন লেনদেন, জালিয়াতির মাধ্যমে লোন লিমিট বৃদ্ধি, চেকের মাধ্যমে টাকা ডেবিট এবং ভেরিফাইয়ের মাধ্যমে এই অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। অডিট রিপোর্টে এ ধরনের ঘটনাকে ‘গুরুতর অপরাধ’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। যদিও বিভাগীয় শৃঙ্খলা কমিটির ২০১৯ সালের ২৪ অক্টোবর তারিখের ৯৫তম সভার কার্যবিবরণীতে প্রাথমিক পর্যায়ে অভিযুক্ত ১৩ কর্মকর্তার মধ্যে ৫ জনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। কিন্তু দায়-দায়িত্ব নির্ধারিত হলেও আত্মসাৎকৃত টাকা অনাদায়ী রয়ে গেছে।
রাকাবের সিরাজগঞ্জ জেলার তামাই শাখাতে ভুয়া ওয়ারিশ সার্টিফিকেট ও জমির জাল কাগজপত্র নিয়ে ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকা শস্য ঋণ প্রদান করা হয়েছে। ২০২১ সালের ৮ জুন অনুষ্ঠিত বিভাগীয় শৃঙ্খলা কমিটির ৯৯তম সভায় এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করে ক্ষতির টাকা আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু নিরীক্ষাকালীন পর্যন্ত টাকা আদায় হয়নি।
স্থায়ী আমানতের বিপরীতে সুদ প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুতর অনিয়ম করেছে ব্যাংকটি। রাকাবের প্রধান কার্যালয়, স্থানীয় মুখ্য কার্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাখা, সৈয়দপুর শাখা ও কুড়িগ্রাম শাখায় ২০১৯-২০২০ এবং ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আমানতের বিপরীতে অতিরিক্ত হারে সুদ প্রদান করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের গচ্চা গেছে ১৯ কোটি ৮ লাখ ৬২ হাজার টাকা। যদিও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, স্থায়ী আমানতে অতিরিক্ত সুদ প্রদান করা হয়নি। কিন্তু তাদের এই বক্তব্য গ্রহণ করেনি অডিট টিম। তারা বিভিন্ন সময়ের জারি করা চিঠির রেফারেন্স দিয়ে ব্যাংকের জবাব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এ ঘটনাকে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম বলে উল্লেখ করেছে। একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের কাছ থেকে এই টাকা আদায়েরও সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এ বিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলের জন্য বিশেষায়িত ব্যাংক রাকাব। এ অঞ্চলের কৃষকের জন্য ব্যাংকটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকটি দখলে নিয়েছে কথিত ব্যবসায়ীরা। যখন যারা ক্ষমতায় এসছে তাদের লোকজনই লুটপাটের চেষ্টা করেছে। ভুয়া ঋণ নিয়ে ব্যাংকটিকে দেউলিয়া করার চেষ্টা হয়েছে। অনেকেই বছরের পর বছর ধরে ঋণ পরিশোধ করছেন না। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের খবর আমরা জানি না। কৃষকের ব্যাংকে কৃষকদের জন্যই সকল সুযোগ-সুবিধা থাকতে হবে। বাণিজ্যিকীকরণ হতে দেওয়া যাবে না।’ সূত্র : আমাদের সময়