বৃহস্পতিবর, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:০৫ pm
ডেস্ক রির্পোট :
আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চুরি ও দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়ছেন। আর দেশের মানুষ দরিদ্র থেকে দরিদ্র হচ্ছে, খেতে পায় না।’
শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিক শ্রেণি অতীতে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। এবারও শ্রমিকরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারকে পদত্যাগ করাতে সক্ষম হব, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হব।’
শনিবার বিকালে রাজধানীর মতিঝিলে এক ‘শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশনে’ মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মিথ্যাচার করেছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ভয়েস অব আমেরিকার সঙ্গে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) কিছু কথা বলেছেন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির মামলা নেই। যে কথা তারা বলে ২ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, তা এখন ৮ কোটির উপরে চলে গেছে, ব্যাংকে জমা আছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়া যাতে রাজনীতি করতে না পারেন, তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে।’
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সংকটজনক অবস্থার জন্য সরকারকে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখে তাকে চিকিৎসার সুযোগ না দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে।’
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা, ৪৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সরকার একটা ভয়াবহ দানবের সরকার, লুটেরা সরকার, বর্গিদের মতো সরকার। এরা সম্পদ বিদেশে পাচার করে বাড়িঘর বানাচ্ছে। আর দেশের মানুষ অসহায় ও অভুক্ত থাকছে। তারা এরকম একটা ভয়াবহ রাষ্ট্র তৈরি করেছে। এটাকে রাষ্ট্র বলা যায় না, এ দেশ আওয়ামী লীগের নির্যাতনকারী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, এই রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে, এর কাঠামো পরিবর্তন করতে হবে। ৩১ দফা দিয়েছি। আমরা সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে একদফার আন্দোলন করছি। গণতন্ত্র হরণকারী, মানুষ হত্যাকারী এই শেখ হাসিনার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং জনগণের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে।’
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের সামনে সড়কে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ও সম্মিলিক শ্রমিক পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ‘দ্রব্যমূল্য, মজুরি কমিশন, জাতীয় বেতন স্কেল, ন্যূনতম মজুরি, শ্রম পরিস্থিতি ও সরকার পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ কনভেনশন হয়। এতে ২০টি সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। এটি দ্বিতীয় শ্রমিক-কর্মচারীদের কনভেনশন। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে হাজারো নেতাকর্মী এতে অংশ নেন। এর আগে নব্বই দশকে সরকার পতন আন্দোলনের সময় প্রথম কনভেনশন হয়েছিল।
এতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, ‘অনেকে আলটিমেটাম দিচ্ছেন, আমাদেরকে রাস্তায় নামতে দেবেন না। আমরা কিন্তু এখনো আলটিমেটাম দেইনি। যখন দেব তখন পরিস্থিতি কি হবে জানি না। তবে আপনারা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। জনগণ ধরলে কেউ রক্ষা পাবেন না।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘এই সরকার ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। কেন ক্ষমতা ছাড়বেন? কারণ আপনারা রাতের অন্ধকারে জোর করে ক্ষমতা দখল করেছেন। তাই আপনাদের ক্ষমতা ছাড়তে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সরকার নড়বড় করছে। দেশে-বিদেশে কোথাও তারা জায়গা পাচ্ছে না। সবাই মিলে আমরা জোরে একটা ধাক্কা দিলে সরকারের পতন হবে।’
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সরকারের পতন সুনিশ্চত। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামতে হবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকার ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে। এটা আর মেনে নেওয়া হবে না। রাজপথের আন্দোলন জোরদার করে তাদের পতন ঘটাতে হবে।’
জাতীয় গণফ্রন্টের সভাপতি টিপু বিশ্বাস বলেন, ‘এই রাষ্ট্র স্বাধীন হলেও এটি একটি শোষণের যন্ত্র। এই রাষ্ট্রের শোষকরা শ্রমিকদের শোষণ করে। সেজন্য এই রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ভেঙে চুরমার করে নতুন রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি করতে হবে।’
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘লুটেরা নয়, শ্রমিক-কর্মচারী-মেহনতি মানুষের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে শ্রমিক ভাইয়েরা ঐক্যবদ্ধ হোন। এই কনভেনশনের উদ্দেশ্য হচ্ছে সব শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি করে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন ঘটানো। আসুন সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাই।’
শ্রমিক-কর্মচারী কনভেনশন আয়োজন কমিটির সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের মোস্তাফিজুল করীম মজুমদার ও মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় কনভেনশনে আরও বক্তব্য দেন-জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুর, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের ফয়জুল হাকিম লালা, জাতীয় শ্রমিক জোটের মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের আশরাফ আলী আকন্দ, শ্রমিক ফেডারেশনের শাহ মো. আবু জাফর, বিএনপির মজিবুর রহমান সারোয়ার, আবদুস সালাম আজাদ, হুমায়ুন কবির খান, ফিরোজ-উজ জামান মোল্লা, আমিনুল হক, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসাইন, সুমন ভূঁইয়া, শাহ আলম রাজা, সম্মিলিত শ্রমিক পরিষদের এএম ফয়েজ হোসেন প্রমুখ। এছাড়া শ্রমিক ফেডারেশন, সরকারি কর্মচারী সমন্বয় পরিষদ, চতুর্থ শ্রেণি সরকারি কর্মচারী সমিতি, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক জোট, শ্রমিক অধিকার পরিষদ, বিপ্লবী শ্রমিক সংহতি, বহুমুখী শ্রমজীবী ও হকার সমিতি, শ্রমিক আন্দোলন, শ্রমিক কল্যাণ মজলিস, জাতীয় শ্রমিক পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার শ্রমিক আন্দোলন, ঢাকা জেলা সিএনজি অটোরিকশা ও মিশুক চালক ইউনিয়ন, সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক আন্দোলন, প্রবাসী শ্রমিক কল্যাণ পরিষদ, শ্রমজীবী পরিষদ, ভাসানী শ্রমিক পরিষদসহ আরও কিছু শ্রমিক সংগঠনের নেতারা সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। সূত্র : যুগান্তর