শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৩৯ pm
দেশে বেকারের সংখ্যা অনেক বেশি। দৃশ্যমান পরিস্থিতি থেকে বলা যায়, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ার হার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এবং বিদেশি অনুদান কমে যাওয়ায় এনজিওগুলোতে চাকরিচ্যুত হচ্ছে অনেকে। আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পৃষ্ঠপোষকতা ও নিরাপত্তা না থাকায় পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে অনেক শিক্ষিত তরুণ।
ফলে বিশাল আকারে সংকট ঘনীভূত হচ্ছে তরুণসমাজের মধ্যে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এ সময় অর্থনীতি, সমাজনীতি, রাজনীতিসহ রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। বর্তমানে উন্নত দেশে তরুণ-তরুণীরা তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ক্যারিয়ার এবং উদ্যোক্তা হওয়ার দিকে ঝুঁকছে। ঠিক বিপরীত চিত্র দেখা যায় আমাদের বাংলাদেশে। এখানে তরুণ প্রজন্ম হাতেগোনা কয়েকটি সরকারি চাকরির পেছনে আদা জল খেয়ে ছুটছে। অসংখ্য বিসিএস ক্যাডার রয়েছেন যারা ক্যাডার হতে চাননি। তাদের স্বপ্ন ছিল গবেষক হওয়া, চাঁদ কিংবা মঙ্গল গ্রহের রহস্য উন্মোচন করা।
মরণব্যাধি ক্যানসারের চিকিৎসা আবিষ্কার করা। কিন্তু যখন তারা বুঝতে পেরেছেন তাদের সেই স্বপ্ন আসলে দুঃস্বপ্ন, তখনই তারা বাধ্য হয়ে বাংলা, ইংরেজি এবং সাধারণ জ্ঞান মুখস্থ করে রাতের পর রাত বিসিএসের জন্য পড়াশোনা করেছেন। বর্তমানে ক্যারিয়ার নিয়ে অনিশ্চয়তায় শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম দলে দলে আত্মহত্যা করছে। আমরা ক্যারিয়ার গড়তে চাই আমাদের আলোকিত ও স্বপ্নিল ভবিষ্যতের জন্য, কিন্তু ক্যারিয়ারই ভাবনাই আমাদের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দেয়। তাহলে আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কোথায়? এবং দেশে চাকরির অভাব নাকি দক্ষতার অভাব? প্রশ্ন থেকেই যায় আমাদের মনে। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো ততটা স্মার্ট হতে পারেনি।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা এখনো আন্তর্জাতিক মানের না হয়েও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি এবং করপোরেট সেক্টরে জব করতে আমাদের ঠিকই আন্তর্জাতিক মানের হতে হচ্ছে। এর একটি বড় কারণ আমরা বাস্তবধর্মী প্রায়োগিক শিক্ষার দিকে নজর না দিয়ে বরং শিক্ষার্থীদের মস্তিষ্কে চাপিয়ে দিচ্ছি অহেতুক এবং অপ্রয়োজনীয় গাঁটবাধা মুখস্থবিদ্যা। এর ফলাফল এই যে, কিউএস, টাইমস হায়ার এডুকেশন কিংবা অন্যান্য আন্তর্জাতিক জরিপে নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দেশের বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ে থাকে অথচ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠাঁই মেলে না। এজন্যই হয়তো আমাদের দেশে বিল গেটস, জ্যাক মা কিংবা ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তির জন্ম হয় না।
তাছাড়া আমাদের দেশে উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণের সুব্যবস্থা নেই। ফলে ভিটেমাটি বিক্রি করে অনেকে উদ্যোক্তা হলেও হঠাৎ বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায়। তবে এই চ্যালেঞ্জ যদি সফল করা যায় তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ চমক দেখাবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে তরুণ প্রজন্ম ১৯৭১ সালে পরাধীন দেশে শত্রুর বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছে সে তরুণ প্রজন্ম স্বাধীন দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা পেলে অভূতপূর্ব সাফল্যের মাইলফলক তৈরি করবে। তাই কারিগরি শিক্ষার দিকে আমাদের জোর দিতে হবে। দক্ষ জনবল তৈরি করে রপ্তানি করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশে অবস্থানরত মেধাবীদের নিজ দেশে সুযোগ দিয়ে তাঁদের অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন কাজের ক্ষেত্র সৃষ্টি করা যেতে পারে। যেমনটি করছে ভারত ও চীন।
দেশে বিনিয়োগের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা গেলে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না থাকলে বিদেশে অবস্থানরত আমাদের বিত্তবান সমাজ নিজ দেশের মাটিতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে সরকারি চাকরির পাশাপাশি বেসরকারি খাতে উৎসাহিত করতে হবে। আগ্রহী তরুণ ও মেধাবীদের আত্মনির্ভরশীল কর্মে ও টেকসই উন্নয়নে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা একান্তই জরুরি। আমাদের সম্ভাবনাময় খাতগুলো যাতে ধ্বংস না হয় সে ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে, দেশপ্রেম জাগ্রত করতে হবে। তা না হলে বেকারত্ব আরো ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করবে। ফলে উপযুক্ত কর্মসংস্থানের দিকে আমাদের নজর বাড়াতে হবে। রা/অ