রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:৪১ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোর পৌর সদরের পূর্বদিকে বিলকুমারী বিল বা শিবনদীর সেই সংযোগ সড়কটিতে বৃষ্টির পানিতে আবারও ধ্বস নেমেছে। নবনির্মিত সংযোগ সড়কটি এভাবে ধ্বসে যাবার ফলে দেড়যুগ ধরে চরম ঝুঁকি নিয়ে তানোর ও মোহনপুর উপজেলাবাসী চলাচল করছেন। অপরদিকে, ব্রীজের পশ্চিম দিকের হেয়ারিংবন্ড সংযোগ সড়কে কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি জমে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
এতে করে ওই সড়কে যাতায়াতে দূর্ঘটনার আশঙ্কার মধ্যে প্রয়োজনের তাগিদে বাধ্য হয়ে মানুষ ও যানবাহন চলাচল করছে। এঅবস্থায় গর্তগুলো মেরামত ও ধ্বসে যাওয়া সংযোগ সড়ক মেরামতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
বুধবার ২০ সেপ্টেম্বর বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, তানোর পৌর সদর গোল্লাপাড়া হাটের জলিল পান স্টোর থেকে শিবনদীর ব্রীজ পর্যন্ত হেয়ারিংবন্ড সংযোগ সড়ক রয়েছে। সড়কটিতে তেমন গর্ত ছিল না। কিন্তু ব্রীজের পূর্বদিকের সংযোগ সড়কে বালু ফেলার কারণে ড্রাম ট্রাক ব্যবহার করা হয়। এই ভারী ড্রাম ট্রাকের চলাচলে সড়কে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে মাটি বের হয়ে পড়ে। এসব গর্তে জমে আছে পানি। ফলে ৩ চাকার ভ্যান অটোরিকশা প্রতিনিয়তই পুতে যাচ্ছে।
এছাড়াও ব্রীজের পূর্বদিকে প্রায় ৫০০ ফিট সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে সরু হয়ে পড়েছে। এটি দুয়েক দিনের মধ্যে মেরামত করা না হলে যে কোন সময় এতোটুকু চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। বিশেষ করে পূর্বদিকের ব্রীজের মুখ সংলগ্ন দু’পাড় ভেঙ্গে একেবারেই সরু হয়ে গেছে। মোটরসাইকেল পর্যন্ত যেতে পারছেন না। ব্রীজের মুখ থেকে প্রায় ৫০০ ফিট সড়কের উত্তর সাইডে আরও ভয়ঙ্কর অবস্থা। আবার দক্ষিণ সাইডও ভাঙ্গছে। পুরো সড়কটি যেন এক বিপদজনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দিন ও রাতে সমান তালে চলে ভ্যান অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল এবং বাই-সাইকেল। সড়কের দু’পারে বিলের পানি থইথই করছে। আর কয়েকদিন বৃষ্টি হলে গাড়ি তো দূরে থাক পায়ে হেটে চলাও কষ্টকর হয়ে পড়বে।
উপজেলার তালন্দ ইউপির লালপুর থেকে শরিফ নামের এক ব্যক্তি আসেন বাঁধে। তিনি বলেন, খাদ্যগুদাম থেকে তুলসী ক্ষেত পর্যন্ত সড়কের অবস্থা মারাত্মক ভয়ঙ্কর হয়ে আছে। মোটরসাইকেলে দু’জন ছিলাম, দূর্ঘটনার ভয়ে একাই মোটরসাইকেল নিয়ে পার হতে হয়েছে ভাঙ্গনের জায়গাগুলোতে। দেশের বৃহত্তর প্রকল্পের কাজ শেষ হয় কিন্তু এ সড়কের কাজ শেষ হয় না কেন বলে আক্ষেপ করেন তিনি। যেন অভিভাবকহীন অবস্থায় ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে সড়কটি।
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্রীজের পূর্বদিকের ২৭৫ ফিট সড়কটি দীর্ঘ সময় ধরে ভেঙে ছিল। গত জুন মাসে বালু ভরাট করা হয় যাতে করে আর না ভাঙ্গে। কিন্তু কাজ শেষ না হতেই এমন ভাবে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে কল্পনাতীত। এ সড়ক নিয়ে আগস্ট মাসের শুরুর দিকে টিভি চ্যালেন ও পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন প্রকাশের পরপর কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার নড়েচড়ে বসেন। এক প্রকার বাধ্য হয়ে ঠিকাদার আব্দুর রশিদ ইট ফেলে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। আগস্ট মাসে মেরামত করা হলে এতো ভাঙ্গন দেখা যেত না। কিন্তু ঠিকাদার ও কর্তৃপক্ষের চরম উদাসিনতা ও অবহেলার কারণে ভাঙ্গনে সড়ক একেবারে সরু হয়ে পড়েছে।
ওইসংযোগ সড়কে ভ্যানে করে চটপটি, ফুচকা ও পেয়ারা আমড়া বিক্রেতারা বলেন, আমরা ভয়ে ব্রীজের পূর্ব দিকের সংযোগ সড়কে যায় না। কারণ ভাঙ্গনের জায়গায় ভ্যানের চাকা পুতে গেলে সব মালামাল পড়ে নষ্ট হয়ে যাবে। আশ্বিন মাসের শুরু থেকে ভারি মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। একারণে ভাঙ্গন হতেই আছে। আর দুয়েক দিন বৃষ্টি হলে সড়ক ভেঙ্গে এমন সরু হবে পায়ে হাটা ছাড়া উপায় থাকবে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এই দুই উপজেলার সেতু বন্ধনের জন্য বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে শিবনদীর উপর ব্রীজ নির্মিত হয়। প্রায় সেই সময়ে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ব্রীজ নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সরকারের শুরু থেকে সংযোগ সড়কের কাজ আরাম্ভ করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের সামগ্রি দিয়ে কাজ করার কারণে প্রতি মাসে ভাঙ্গতেই থাকে সংযোগ সড়ক। এপার ভাঙ্গন রোদ হলে আবার ওপার ভাঙ্গন শুরু হয়। প্রায় দেড় যুগ ধরে সংযোগ সড়কের কাজ চলমান থাকলেও রহস্যজনক কারণে কোনভাবেই ভাঙ্গন রোদ হচ্ছে না। বিশেষ করে ব্রীজ থেকে পূর্বদিকে ২৭৫ ফিট রাস্তা ও ব্লকের জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা আবারও বরাদ্দ দেয়া হয়। সড়কটির শুরুতেই বালু দিয়ে ভরাট করা হলেও পানি এবং রোলার না মারার কারণে কাজ চলা অবস্থায় ভাঙ্গন শুরু হলে ঠিকাদার রশিদ পালিয়ে যান। সড়কটিতে দফায় দফায় প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারপরও ভাঙ্গন রোধা করা যাচ্ছে না। যে পরিমান সড়কে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তাতে করে সড়ক চকচকে হওয়ার কথা।
এবিষয়ে ঠিকাদার আব্দুর রশিদ বলেন, কর্তৃপক্ষ আমাকে যেভাবে কাজ করতে বলেছে আমি সেই ভাবেই কাজ করেছি। তারপরও ভাঙ্গন রোদ হয়নি। পূর্বদিকের সড়কটিতে যে পরিমান বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, তাতে লোকসান গুনতে হয়েছে। আমি বলেছিলাম, পূর্বদিকে আর একটি ব্রীজ করলে ভাঙ্গন হবে না। কিন্তু জেলা প্রকৌশলীরা আমার কথায় কর্নপাত করেননি। এখন বিল বা নদী ভর্তি পানি। কোনভাবেই কাজ করা যাবে না। আর করলেও টিকবে না বলে জানান এই ঠিকাদার।
নাম প্রকাশে স্থানীয় ঠিকাদাররা জানান, নদীর মধ্যে রাস্তা ব্রীজ সেতু ও সড়ক টিকসই হচ্ছে। আর এ সড়ক কেন হবে না। আসলে সব কিছুতে এতো অনিয়ম-দূর্নীতি করলে তো ভাঙ্গন দূর হওয়ার পরিবর্তে আরো বিলিন হবে। বিলে যে পরিমান পানি আছে জোরে ঢেউ হলে সড়কের থাকবে না বিলিন হয়ে পড়বে।
এব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, যাতায়াতের মত অবস্থা না থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়াও বিলের পানি কমলে পরিক্ষা-নীরিক্ষা করে আবারও কাজ আরাম্ভ করা হবে, যাতে করে আর ভাঙ্গন না হয়। মজবুত টিকসই করার জন্য যা যা করনীয় সেটাই করা হবে বলে জানান এই প্রকৌশলী।