রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:২৩ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর তানোর পৌরসভায় নতুন পাঁকা রাস্তা নির্মাণের এক মাসেই উঠে যাচ্ছে পিচ ও পাথর। এতে লোকসমাজে সমলোচনায় পড়েছেন মেয়র ইমরুল হক। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, চলতি ২০২৩ সালের আগস্ট মাসের শুরুতে শেষ হয় পৌর এলাকার তালন্দ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মোড় হতে সরদারপাড়া পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ। এ কাজে শুধু পুকুর চুরি নয়, যেন সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই এলাকায় মাটির রাস্তাটি পাঁকাকরণের প্রথম দিন থেকেই নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ব্যবহার করা হয়নি বিটুমিন পিচ পাথর ও খোয়া বালু। ফলে রাস্তাটি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সরেজমিন তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা। তবে, রাস্তার পিচপাথর উঠে যাওয়ায় মেয়রের ভাবমূর্তি নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন।
সরেজমিনে দেখা যায়, তানোর সদর থেকে তালন্দ রাস্তার মুল সড়ক হতে বালিকা স্কুল মোড়ে কয়েক হাত রাস্তার পিচপাথর উঠে ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে শুধু এক জায়গায় নয়, পুরো রাস্তার ১০ থেকে ১২ জায়গায় এমন দূরদশার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাস্তাটি মাটির ছিল। আমরা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিজানকে অনেক বার বলেছিলাম। এজন্য তিনি রাস্তাটি পাঁকা করে দেবার আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন বরাদ্দ এসেছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে করতে পারেননি। তারপর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখে পৌর নির্বাচনের ভোট হয়। ভোটে নৌকার প্রার্থী ইমরুল হক উন্নয়নের ফুলঝুরি নিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু তিনি মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর এমন উন্নয়নের চমক দিয়েছেন যা পাঁকা নির্মাণের একমাসেই উঠে যাচ্ছে পিচ ও পাথর। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, বিগত ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে নগর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় তানোর পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আসে।
কিন্তু করোনা ভাইরাসসহ নানা কারণে ওই সময় কাজ করতে পারেননি সাবেক মেয়র মিজান। তবে, ইমরুল হক মেয়র নির্বাচিত হয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। কিন্তু পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার জন্য লাইসেন্স নবায়ন করে দিচ্ছিলে না ইমরুল মেয়র। এজন্য পুরো কাজের উপর বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন বিএনপি নেতা ঠিকাদার ইয়াসিন ও যুবদল নেতা ঠিকাদার আতিকুর রহমান লিটন ছাড়াও নজরুল ইসলাম। তারা সবাই পৌর সদর এলাকার বাসিন্দা। তাদের কে কাজ দেওয়ার শর্তে আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করা হয়। কোন ধরনের দরপত্র আহবান ছাড়াই মেয়র নিজ ক্ষমতা বলে কাজগুলো করিয়ে নিয়েছেন। তবে, কাজের গুনগত মানে সাবেক মেয়র ও বর্তমান মেয়র মিলেমিশে কমিশন খেয়েছেন। এজন্য এ রাস্তার নির্মাণ কাজে শুধু পুকুর নয়, সাগর চুরি করা হয়। ফলে মাস না যেতেই পিচ ও পাথর উঠে যাচ্ছে।
যার কারণে এই নিম্নমানের কাজ নিয়ে লোক সমাজে সমলোচিত হচ্ছে মেয়র। অথচ যে অর্থ বছরের কাজ ওই অর্থ বছরেই করতে না পারলে সরকারি কোষাগারে টাকা ফেরৎ দিতে হয়। কিন্তু মেয়র ইমরুল হক কাজ না করে কিভাবে এতো সময় পর্যন্ত টাকা কোন একাউন্টে রাখলেন এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।
কাজ করা ঠিকাদার ইয়াসিন বলেন, তালন্দ বালিকা স্কুল থেকে তালন্দ সরদার পাড়া, বেলপুকুরিয়া ও গুবিরপাড়া থেকে সিন্দুকাই পর্যন্ত রাস্তাটি আমরা করেছি। তার সহপাঠী ঠিকাদার নজরুল ইসলাম বলছেন কাজ করার পর পিচ ও পাথর উঠতেই পারে তাতে তাদের কি করার আছে বলে এড়িয়ে গেছেন তিন।
এবিষয়ে কেশরহাট পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তানোর পৌরসভায় অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সরদার জাহাঙ্গীরের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেন নি। অবশ্য তিনি নিয়োমিত অফিসও করেন না বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুধু ফাইলপত্র স্বাক্ষরের দিন পাইভেট কার নিয়ে অফিসে আসেন এই প্রকৌশলী।
এব্যাপারে তানোর পৌরসভার মেয়র ইমরুল হক বলেন, কাজ না করলে টাকা ফেরত দিতে হত। এজন্য আপোষ মিমাংসা করে মামলার বাদীদের কিছু কাজ দেয়া হয়েছিল। মেয়র আরও বলেন, যে সময় বরাদ্দ পায় সে সময় রাস্তার কাজের মালামালের দাম ছিল কম। কিন্তু এখন দ্বিগুন দাম। এজন্য ঠিকাদারদের বলা হয়েছিল যেভাবে হোক রাস্তার কাজ করে উঠতে হবে। পিচ-পাথর উঠার বিষয়টি আমার নজরে আছে। প্রয়োজনে ওই ঠিকাদার দিয়েই রাস্তা মেরামত করা হবে। রা/অ