শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩৯ am
বাংলাদেশে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আসছে। উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারায় অব্যাহতভাবে সরব এ দেশ আর আগের অবস্থানে নেই। উত্তরবঙ্গের ‘মঙ্গা’ আজ দূর হয়েছে, ‘ভাত দে মা, ফেন দে মা’ শত শত ভিখারির সেই অবস্থা আর নেই। বস্তুত এ দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী আজ ক্ষুধা ও অতি দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেয়েছে। উন্নত জীবন ও সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার আশায় দিন গুনছে। একসময়ের “তলাবিহীন ঝুড়ি” বলে পরিচিত আমাদের প্রিয় এ দেশটি এখন “এশিয়ার টাইগার ইকোনমি” এক সম্ভাবনাময় অর্থনীতির দেশ– ‘অ ষধহফ ড়ভ ড়ঢ়ঢ়ড়ৎঃঁহরঃু’। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল দেশের তালিকায় একেবারে প্রথম সারিতে বাংলাদেশের অবস্থান। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশকে একেবারে তলানি থেকে তুলে এনে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করেছেন। একসময়ে যেকোনও সভা বা র্যালিতে অর্ধেকের বেশি উপস্থিতির পরনে ভালো কাপড় ছিল না, পায়ে স্যান্ডেল বা জুতা ছিল না, অধিকাংশ ছেলেমেয়ে খালি পায়ে উপস্থিত হতো। তখন মাটিতে বসে সবাইকে ভাষণ শুনতে হতো, কারণ যথেষ্ট চেয়ার ছিল না। এখন সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। সবার ভালো কাপড়, জুতা এবং সারি সারি বসার চেয়ারে তারা বসেন। বস্তুত শেখ হাসিনা সরকারের ধারাবাহিক শাসন এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করছে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী হয়েছে তার হাত ধরেই।
এ দেশের সংবিধান অনুসারে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সব রকম সুযোগ তিনি সৃষ্টি করেছেন দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য। আর কয়েক মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন একটা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রস্তুতিও শুরু করেছে। দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে অনেকটা ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মতো অসৎ ও অন্যায্য উদ্দেশ্যে সরব হয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রকারী চক্র। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটি অংশ নানাভাবে প্রভাবিত করতে চাইছে বাংলাদেশের নির্বাচন প্রক্রিয়াকে, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে জাতীয় নির্বাচন একান্তভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এখানে বিদেশি কোনও মহলের হস্তক্ষেপ বা আগ বাড়িয়ে বিভিন্ন মতামত, মন্তব্য প্রদান কখনোই কাম্য নয়। তাদের যদি কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে তারা কূটনৈতিক নিয়ম-কানুন মেনে তা পেশ করতে পারেন।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের ৫৭টা দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ২২টি দেশে নির্বাচন হবে। দুঃখজনক ঘটনা হলো, এত দেশে নির্বাচন হলেও অন্য কোনও দেশের নির্বাচন নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। না ইউরোপ, না আমেরিকায়। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ৩টি দেশ তুরস্ক, হাঙ্গেরি ও কম্বোডিয়ায় নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে পশ্চিমা গোষ্ঠী ব্যর্থ হয়। তাদের ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে এখন তাদের সব আগ্রহ, সব মনোযোগ যেন কেবল বাংলাদেশের দিকে।
কেন শুধু বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের এত মাথাব্যথা? তারা কী চায়? তারা কি এ দেশের উন্নয়ন ও গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে চায় না? তারা তো বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী, বাংলাদেশের বন্ধু। তাহলে এ অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা ও জেহাদি পরিস্থিতি সৃষ্টি করে তাদের কি লাভ হবে? তারা কি সন্ত্রাসী ও জেহাদিদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়?
নানাবিধ প্রতিবন্ধকতায় ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে একটি উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেশবাসীকে দেখাচ্ছেন যে শেখ হাসিনা, তাকে কি তারা আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না? জনমনে এমন প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে। অনেকেই মনে করেন তারা সরাসরি শেখ হাসিনার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ইতোমধ্যে তারা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান, হাঙ্গেরির রাষ্ট্রনায়ক অরবান এবং কম্বোডিয়ার সরকারপ্রধান হো সেনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। কিন্তু এসব দেশের বৃহত্তর জনগণ বিদেশিদের উপদেশ উপেক্ষা করে। ফলে তাদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কোনও কোনও বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগীরা খোলামেলা অবস্থান নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। নইলে তারা কেন একের পর এক দফায় দফায় বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে একটি স্বাধীন দেশের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছেন?
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫৭টি দেশের কোনোটাতেই তারা দফায় দফায় কোনও নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাননি। তাছাড়া বাকি ২২টিতে দফায় দফায় প্রাক পর্যবেক্ষক পাঠানোর খবর পাইনি। অথচ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের পর্যবেক্ষক দলের যেন ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দফায় দফায় তারা প্রাক পর্যবেক্ষণ পাঠাচ্ছেন। তাদের রাষ্ট্রদূতগণ কূটনৈতিক শিষ্টাচার, ভিয়েনা কনভেনশনের রীতিনীতি ভেঙে দলবেঁধে সরাসরি বক্তব্য দিচ্ছেন গণমাধ্যমে বিভিন্ন দলের পক্ষে। তাদের মুখপাত্র প্রত্যেক সপ্তাহেই কিছু একটা বক্তব্য দিচ্ছেন বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে। তবে ১৯৭৫ সালে যখন সামরিক সরকার হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে ক্ষমতা নেয় অথবা ২০০৬ সালে যখন অনির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন তো ওইসব অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে দলবেঁধে কিছু বলতে দেখিনি। তবে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে তাদের এত হাঁকডাক কেন?
শেখ হাসিনা সরকার দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এ দেশের জাতীয় সংবিধান অনুযায়ী একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। পৃথিবীর সব দেশে যা হয়, বাংলাদেশেও তা-ই হচ্ছে। বিশ্বের কোনও দেশে কি ক্ষমতায় থাকা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে তৃতীয় কোনও পক্ষের হাতে নির্বাচনের ভার তুলে দেয়? আমেরিকা বা ইউরোপের কোনও দেশে কি এমন ব্যবস্থা আছে? নেই। বিশ্বজুড়ে যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারাই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করে। বাংলাদেশও তা-ই করছে। তাহলে এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামের এই অবৈধ, অসাংবিধানিক সরকারের দাবি আসছে কোত্থেকে? আমেরিকা ইউরোপই বা কেন বিরোধী পক্ষের এমন দাবির বিপক্ষে দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা করছে না? শেখ হাসিনা বারবার বলছেন, তিনি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিয়ে জনগণের রায় প্রতিফলিত করার ব্যবস্থা করতে চান। এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারকে তিনি সম্মান করেন। সবাই যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, নিজেদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে, তার সব রকম ব্যবস্থা তিনি করেছেন। তাহলে তারা আর কী চায়?
বাংলাদেশ একসময় নিম্ন আয়ের দেশ ছিল। দেশ তখন বহির্বিশ্বের সহায়তা ছাড়া চলতে পারতো না।
পরমুখাপেক্ষিতার সেই সময় কূটনৈতিক এমন অযাচিত কর্মকাণ্ডকে সহ্য করা হতো নিতান্ত বাধ্য হয়ে। এখন সবাইকে বুঝতে হবে, সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। দেশের সক্ষমতা বেড়েছে, এখন বাংলাদেশ মধ্য আয়ের দেশ হচ্ছে। এখন আর এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করা যায় না। প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব স্বাধীন সত্তা আছে। দেশের নির্বাচন কীভাবে হবে- সেটা একান্তই সেই দেশের নিজস্ব ব্যাপার। দেশের জনগণ ও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা থাকা প্রয়োজন। তাছাড়া আমেরিকা যে বাংলাদেশ নিয়ে এত আগ্রহ দেখায়, তাদের নিজেদেরই তো সমস্যার শেষ নাই। তাদের দেশের ৭৭% ভাগ লোক মনে করেন আমেরিকার নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ঘাটতি আছে। বর্তমানে তাদের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি করার অভিযোগ এসেছে। বস্তুত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অনেক সমস্যা রয়েছে।
শরণার্থী সমস্যাসহ কিছু দিন আগে ট্রাম্প ও বর্তমানে বাইডেন প্রশাসনের বিভিন্ন নীতির কারণে বিশ্বমানবতার সমালোচনার তিরে বিদ্ধ এখন যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকার মানবাধিকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। যখন তখন নিরীহ লোক হয় স্কুলে, নয়তো মলে, বা ক্লাবে এমনকি স্বাধীনতা উদযাপনের র্যালিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাচ্ছে। মরার মিছিলে অনেক বাঙালির রক্তও যোগ হয়েছে। কাজেই এমন একটি দেশের কর্মকর্তারা অন্য দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করার আগে নিজেদের অবস্থান উন্নত করলে খুশি হবো। খোদ আমেরিকায় প্রতি বছরে হাজার খানেক লোক বিনা বিচারে মারা যায়।
একটি দেশের নির্বাচনের চেয়ে নিজ দেশের আলোচিত বিষয়ে মার্কিন নীতি ও উৎকর্ষতা অর্জন এখন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আমেরিকার সবচেয়ে নীরব ভূমিকা দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রে। আরব বিশ্ব সবসময়ই কোনও না কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের আলোচনার বাইরে থেকে যায়। বিশ্বজুড়ে ৮০টির মতো দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে। অথচ এসবের অর্ধেকের বেশি দেশে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা নেই। তাদের নির্বাচন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র কোনও ইস্যুতেই আমেরিকার সুস্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায় না। এর কারণ কী? তাদের সব আগ্রহ যেন বাংলাদেশকে নিয়ে। চুন থেকে পান খসলেই তারা এ দেশে মানবাধিকার গেলো গেলো বলে রব তোলেন। বাংলাদেশে যাদের কারণে সন্ত্রাসী তৎপরতা কমেছে তারা তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন জারি করেন। মানবাধিকার হরণ, গণতন্ত্র বিপন্নতার কথা বলে বিশ্বব্যাপী প্রচার শুরু করেন। তারা কি চায় না আমাদের দেশে উন্নয়ন অব্যাহত থাকুক? তারা কি চায় বাংলাদেশ তাদের পীড়াপীড়িতে চৈনিক বলয়ে চলে যাক, বা আফগানিস্তান হোক?
তবে বিদেশি বন্ধুদের বস্তুনিষ্ঠ উপদেশ, সমালোচনা অবশ্যই আমরা গ্রহণ করি। ডিএসএ (উঝঅ) আইনের উদাহরণ। যেসব বিষয়ে অভিযোগ ছিল এবং অপব্যবহারের সুযোগ ছিল সেগুলো আমরা বাদ দিয়েছি। মূলত বাংলাদেশের নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদি প্রসঙ্গে আমেরিকা-ইউরোপের বক্তব্য ও অবস্থান একপেশে। তারা বাংলাদেশ নিয়ে যতটা চিন্তিত, অন্য কোনও দেশ নিয়ে ততটা নয়। বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনজাতির ওপর এখনও নির্বিচারে নিপীড়ন চলছে।
বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া সে দেশের ১২ লাখ শরণার্থীকে তারা ফিরিয়ে নিচ্ছে না। সম্প্রতি বিরোধী দলের সভা-সমিতির ওপর বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করেছে মিয়ানমারের সেনা। এ ধরনের দৃশ্য প্যালেসটাইনে হরহামেশা লেগেই আছে। নিরীহ লোক প্রতিদিন মারা যাচ্ছে। কিন্তু সেসব সরকার নিয়ে আমেরিকা চুপ।
আসলে বাংলাদেশকে নিশানা করার পেছনে আমেরিকার অন্য স্বার্থ আছে। কোনও কোনও চৈনিক ও রাশিয়ানপন্থি বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যারা একসময় ওই সমস্ত দেশে পড়াশোনা করেছেন বা ওইসব দেশের অনুসারী ছিলেন তারা চাচ্ছেন, বাংলাদেশ চীনের দিকে ধাবিত হোক। যারা চীনের অনুসারী, বিএনপির বড় সব নেতা যারা চৈনিকপন্থি, তাদের সাথে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের অনেক দহরম-মহরম। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তারা কেন বাংলাদেশকে চীনের দিকে জোর করে ধাবিত করছেন। আমেরিকা ভূ-কূটনৈতিক সমীকরণে চীনের উপস্থিতি মানতে পারছে না। এমনকি এ জন্য তারা আমেরিকা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ কয়েকটি দেশকে নিয়ে সামরিক জোট কোয়াড তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দিয়ে সুসম্পর্ক রাখতে চায়। কোনও দেশের সাথে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। দেশের স্বার্থে, সব দেশই আমাদের বন্ধু। সেটা চীন যেমন, আমেরিকাও তেমন। তবে আমেরিকার সাথে আমাদের সুসম্পর্ক একটু বেশি এজন্য যে ওই দেশে আমাদের অনেক লোকজন লেখাপড়া করেছেন, ওই দেশের অর্থনীতির সাথে অনেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন এবং আছেন, ওই দেশের সাহায্যে আমাদের অনেক এনজিও চলে। তাছাড়া তাদের ইংরেজি ভাষা আমাদের জন্য সহজে যোগাযোগের মাধ্যম, সেজন্যে তাদের সাথে সম্পর্ক অনেক দিনের।
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ক্ষেত্রেও আমাদের একই অবস্থান।
বিশ্বজুড়ে মার্কিন স্বার্থবিরোধী হওয়ার কারণে অথবা গণতন্ত্রের প্রয়োজনের কথা বলে কিংবা কর্তৃত্ববাদী সরকার থাকলে সেসব দেশের ‘সরকার পতনে’ ঐতিহাসিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার নজির রয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে চিলি, ইরান, পানামা বা ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর কথা। এসব দেশের ক্ষেত্রে মার্কিন সংশ্লিষ্টতা বা কলকাঠি নাড়ার মাত্রা অনেকটাই সরাসরি ছিল। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতেও নির্বাচন এলে মারামারি হয়, খোদ আমেরিকাতেও হয়েছে। এগুলো নিয়ে তাদের উদ্বেগ নেই। তারা কেবল উদ্বিগ্ন বাংলাদেশকে নিয়ে। এই একপেশে উদ্বেগ তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ তৈরি করে।
বৈশ্বিক রাজনীতিতে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বর্তমানে একে অপরের মুখোমুখি। গ্লোবাল ওয়ার অন টেরর, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে বিশ্বের রাষ্ট্রগুলো দুই দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। অনেকেই বৈশ্বিক এই পরিস্থিতিকে দ্বিতীয় স্নায়ুযুদ্ধ বলছেন। পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্রগুলো অনেক সময় একে অপরের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় না, তাতে যেকোনও পক্ষের যুদ্ধে জয়ের লোভে সর্বোচ্চ শক্তি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সম্ভাবনা থাকে। অন্য দেশ তাদের হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। একে বলে ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধকে অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদ ‘প্রক্সি’ যুদ্ধ বলে মনে করেন, যেখানে ইউক্রেন আমেরিকা ও তার মিত্রদের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছে রাশিয়াকে প্রতিহত করার জন্য। একইভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কারণ এখানে তার ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ জড়িত। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত অবস্থান, এখানকার মূল্যবান সম্পদ, উন্মুক্ত বাণিজ্যপথ, বাজার, নিরাপত্তা এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা। পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মতো দেশে সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টা, বাংলাদেশের মতো দেশে মানবিক উদ্বেগ এবং চীনের মতো দেশের অর্থনৈতিক উদ্বেগ। এসব কারণেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্তের প্রতি ঝুঁকেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সমৃদ্ধি বজায় রাখতে বাংলাদেশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই বাংলাদেশ ও অন্য সব রাষ্ট্র যারা ভূ-রাজনীতিতে এখন গুরুত্বপূর্ণ, তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও নির্বাচনে অযাচিতভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। কিন্তু এটা ঠিক নয়। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভারত আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিয়েছে। তারা এই এলাকাকে চিনে ও জানে। সুতরাং তাদের সুপারিশ গ্রহণ করলে সবার মঙ্গল হবে।
স্বাধীন, সার্বভৌম দেশ হিসেবে এ দেশের নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার দায়িত্ব বাংলাদেশের। বাংলাদেশ সেটাই করবে। গত পাঁচ পাঁচটি মেয়র নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকার এ দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে সমুন্নত করতে সবসময় কাজ করে যাচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে সব পক্ষের জন্য। কাজেই বিশ্বের কোনও ক্ষমতাধর রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠানের কোনও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না বাংলাদেশ। কোনও অসৎ ষড়যন্ত্র, অন্যায্য চাওয়া পূরণ করা হবে না। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
লেখক :ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক; বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ; সদস্য, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি); পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল); সভাপতি, এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম, বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি); সহ-সভাপতি, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, আমরাই ডিজিটাল বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। সূত্র : বাংলাট্রিবিউন