রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৫৪ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে পল্লী বিদ্যুতের দায়িত্ব অবহেলায় আবারো একই পরিবারের এক যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গত ২৬ আগস্ট শনিবার বিকেলে পল্লীবিদ্যুতের পোলে উঠে সংযোগ সংস্কার কাজ করার সময় বিদ্যুৎ স্পর্শে ওই পল্লীবিদ্যুৎ কর্মীর মৃত্যু হয়।
উপজেলা পাঁচন্দর ইউনিয়নের চিমনা গ্রামে পল্লীবিদ্যুতের পোলে এই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। নিহত যুবকের নাম আমিনুল ইসলাম (৩৩)। তিনি তালন্দ ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ড কৃষকলীগের সভাপতি ও দেবিপুর গ্রামের মৃত আহাদ আলী সোনারের পুত্র। এদিকে আমিনুলের মৃত্যুর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
স্থানীয়রা বলছে, পল্লীবিদ্যুৎ এই মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এজিএম এবং ডিজিএম আরো একটু বেশি দায়িত্বশীল হলে এমন ঘটনা এড়ানো সম্ভব ছিল বলে তারা মনে করেন। তারা দায়িত্ব অবহেলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কামনা করেছেন।
এলাকাবাসী ও পল্লীবিদ্যুৎ তানোর অফিসের কর্মচারীরা বলেন, গত প্রায় দু’বছর আগে আমিনুল ইসলামের বড় ভাই পল্লীবিদ্যুতের কাজ করার সময় বিদ্যুৎ স্পর্শে পোলেই মারা যায়। এ ঘটনায় আমিনুলের পরিবার মামলার উদ্যোগ নেয়। তখন মামলা থেকে বাঁচতে পল্লীবিদ্যুৎ আমিনুলকে মৌখিক ভাবে খন্ডকালিন নিয়োগ দিয়ে কর্মী হিসেবে কাজ করাচ্ছেন।
পল্লীবিদ্যুতের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানান, এজিএম এবং ডিজিএম এই ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। কারণ তাদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে প্রতিটি লাইনম্যান একজন করে গ্যাটিস (বহিরাগত) রেখেছেন। আর এসব গ্যাটিস নিয়ন্ত্রণ করেন দালাল ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী জনৈক শরিফুল ইসলাম। যিনি পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে দালালি করেই হয়েছেন কোটিপতি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন পল্লী বিদ্যুতের একজন লাইনম্যান পোলের কাছে থেকে পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে ফোন করে লাইন টানতে বলে আমিনুলকে পোলে উঠে কাজ করতে বলা হয়। এসময় আমিনুল পোলে উঠে তারে স্পর্শ হওয়া মাত্র শক পায় এবং বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করতে থাকে। প্রায় ১০ মিনিট ঝুলে থাকার পর তাকে সেখান থেকে নামানো হয়। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের লাইন টানা হলে এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কাউকে দেখতে হতো না বলে তারা মনে করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রকৌশলী মাহাবুর রহমান মাহাম বলেন, একই পরিবারের দুই সদস্যর একইভাবে মৃত্যুর পেছনে অদৃশ্য কিছু থাকতে পারে। কারণ পল্লীবিদ্যুতের দেবিপুর অফিসে লাইন টানার জন্য একজন লোক থাকে। সে আগে লাইন টানে তারপর এরা পোলে উঠে কাজ করেন। তাহলে একইভাবে এক পরিবারের দু’জন কর্মক্ষম মানুষের এমন মর্মান্তিক মৃত্যু কি বার্তা দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ইউপি সদস্য বলেন, আমিনুলের মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বজনেরা মামলা করতে চেয়েছিল। কিন্তু এক ইউপি চেয়ারম্যান ও ভাইস-চেয়ারম্যান তাদের মামলা করতে না দিয়ে মিমাংসা করাতে বাধ্য করেছেন। যে কারণে পোস্টমর্টেম না করেই লাশ দাফন করা হয়েছে।
এবিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ তানোর জোনের এজিএম কামাল হোসেন বলেন, আমিনুল ইসলাম পল্লীবিদ্যুৎ এর স্টাফ নয়। তিনি কার নির্দেশে কেনো পোলে উঠেছিল সেটা তদন্ত করে দেখা হবে। ইতিমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিনি পল্লী বিদ্যুতের স্টাফ না হলে পোলে উঠার যন্ত্রপাতি তিনি পেলেন কোথায় এই প্রশ্নের কোনো সদোত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গেছেন।
এবিষয়ে পল্লীবিদ্যুৎ তানোর জোনের ডিজিএম জহুরুল ইসলাম বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। তাছাড়া মৃত্যুর ওপর কারো হাত নেই। এরপরও বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে। রা/অ