শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:২৪ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রামের উলিপুরে চাঞ্চল্যকর এক গৃহবধূ হত্যা মামলায় ইলিয়াস মিয়া (৪২) নামের এক যুবককে কয়েক দিনের ব্যবধানে দুইবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ থানায় নেওয়ার ঘটনায় স্ট্রোক করে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই যুবকের মা মর্জিনা বেগম (৬৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
মর্জিনা বেগম উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের ইসলামপাড়া এলাকার আহম্মদ আলীর স্ত্রী।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট উপজেলার পান্ডুল ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামে পিতার বাড়িতে শয়ন কক্ষে রিংকি বেগম (১৮) নামে সদ্যবিবাহিত এক গৃহবধূর গলাকাটা ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ তথ্য উদঘাটন করতে সন্দেহভাজন একাধিক ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইলিয়াস আলীকে থানায় দ্বিতীয়বারের মতো নেওয়া হয়।
ইলিয়াস আলীর মামাতো ভাই নূর আলম ও পরিবারের লোকজন বলেন, বুধবার রাত ১০টার দিকে পান্ডুল বাজার থেকে নিহত মর্জিনা বেগমের ছেলে ইলিয়াস আলীকে ডেকে উলিপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় আমিও (নুর আলম) তার সাথে যাই। পুলিশ রাত সাড়ে ৩টার দিকে নুর আলমকে একাই বাড়ি পাঠিয়ে দেন এবং সকালে এসে উলিপুর থানা থেকে ইলিয়াসকে নিয়ে যেতে বলেন।
বৃহস্পতিবার সকালে নুর আলম ও শফিকুল ইসলাম (ইলিয়াসের বোন জামাই) থানায় যান। এ সময় ইলিয়াসকে তাদের দুজনের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে বাসায় তার মা মর্জিনাসহ সবাই সারা রাত দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ছেলের চিন্তায় বৃহস্পতিবার সকালে মা মর্জিনা বেগম জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুর ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসক ইয়ামিন জানান, মর্জিনা বেগম নামের ওই রোগীর ব্রেন স্ট্রোক হয়েছিল। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে আমরা সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেই। তারপর সিটি স্ক্যান করে হাসপাতালে আনার কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় ওই রোগীর।
এ বিষয়ে ইলিয়াস মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে হলে তিনি বলেন, আমাকে দুই দিন থানায় ডেকে নেওয়া হয়। প্রথম দিন গত শুক্রবার দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে আমাকে বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ডেকে নিয়ে রাতভর থানা পুলিশ দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা আমাকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। তবে আমি বারবার বলেছি ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত নই। আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ, নিহত রিংকি সম্পর্কে আমার ভাতিজি হয়।
মায়ের মৃত্যুর ব্যাপারে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, এ ঘটনার বিচার কার কাছে চাইব।
পান্ডুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, একাধিকবার ইলিয়াস মিয়াকে থানায় ডেকে নেওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বুধবারের ঘটনাটিও সেরকম ছিল।
তিনি আরও বলেন, ইলিয়াস মিয়ার মায়ের আগে থেকেই হাইপ্রেসার ছিল। বাড়ির বড় ছেলেকে বারবার থানায় ডেকে নেওয়ায় মা মর্জিনা দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং স্ট্রোক করে বৃহস্পতিবার মৃত্যুবরণ করেন।
উলিপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মর্তুজা বলেন, ইলিয়াস মিয়াকে দুইবার থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছিল। চাঞ্চল্যকর রিংকি হত্যাকাণ্ড মামলার তদন্তের স্বার্থেই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সারা রাত থানায় রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার অনুসন্ধান করার জন্য নানা দিক বিবেচনা ও রাতভর বৃষ্টি হওয়ার কারণেই মূলত তাকে থাকতে হয়েছে। সূত্র : যুগান্তর