শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৪৬ pm
ডেস্ক রির্পোট : সিআইডি পুলিশের এক নারী পরিদর্শক রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। হোসেনে আরা বেগম পুতুল নামের ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তা বুধবার বিকালে রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনারের কাছে প্রতিকার চেয়ে তিন পাতার অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক হোসনে আরা সিআইডির ঢাকা জোনে পোস্টিং হলেও তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদাতে সংযুক্ত আছেন। তার বাড়ি বরিশালে।
আরএমপি কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেছেন, তিনি এ ধরনের একটি অভিযোগ আসার কথা শুনেছেন; তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার কাছে পৌঁছেনি। অভিযোগ হাতে পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
কমিশনার আরও বলেন, শুনেছি নারী পুলিশ পরিদর্শক আরএমপির দামকুড়া থানার ওসি মাহবুবের স্ত্রী ছিলেন। পরে ছাড়াছাড়ি হয়। অভিযোগ আসলে অবশ্যই তদন্ত হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
অভিযোগে নারী পুলিশ পরিদর্শক বলেন, ২০১৩ সালে বর্তমান দামকুড়া থানার ওসি পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। নির্যাতনের কারণে তিনি মাহবুবের সঙ্গে সংসার করতে পারেননি। ২০১৮ সালে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। এরপর তিনি মাহবুব হুসাইন নামের একজনকে বিয়ে করেন।
নারী পুলিশ কর্মকর্তা অভিযোগে আরও বলেন, নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বোয়ালিয়া থানার ওসি হিসেবে যোগ দিলে আমি তাকে সব ঘটনা জানিয়ে প্রতিকার চাই। তখন ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ সাক্ষাতে ও ফোনে আমাকে বলতে থাকেন, আমাকে তার অনেক ভালো লাগে। তুমি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। তোমার মতো একটা মেয়ে পেলে আর কিছুই লাগে না ইত্যাদি। উল্লেখ্য, আমার আগের স্বামী মাহবুব আলম তখন বোয়ালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হিসেবে ছিলেন।
এ অজুহাতে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলতেন, তুমি রাজশাহীতে থেকে মাহবুবকে ছেড়ে আরেকজনকে বিয়ে করে সুখে সংসার কী করতে পারবা? তুমি বিপদে পড়ে যাবা।
হোসনে আরার অভিযোগে আরও জানা গেছে, পুলিশ পরিদর্শক মাহবুব আলম তার বর্তমান স্বামী মাহবুব হুসাইনকে থানায় ডেকে নিয়ে কয়েকবার হুমকিও দেন। তাকে বলা হয়েছিল আমার আগের স্ত্রীকে বিয়ে করে তুমি ভালো থাকতে পারবা না। বিপদ তোমার হাত বাড়িয়ে আছে।
ওই নারী কর্মকর্তা জানান, গত ১৬ মার্চ গভীর রাতে চন্দ্রিমা থানা এলাকার বাসা থেকে আমার স্বামী মাহবুব হুসাইনকে তুলে নিয়ে যায় বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। খবর পেয়ে তিনি সকালে থানায় ছুটে যান। সেখানে ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ ঘটে এবং তার স্বামীকে কেন পুলিশ এনেছে জানতে চান। তখন নিবারণ তাকে বলেন, সেই তো দৌড়াইয়া আসলা। আগে তো আসলা না। আগে তো ভালো লাগে নাই। আমি কমিশনার সাহেবকে বলে তোমার স্বামীকে ছাড়ার ব্যবস্থা করছি।
এরপর দুপুরে কমিশনার অফিস থেকে ফিরে এসে ওসি নিবারণ আমাকে বলেন, তোমার স্বামী তো জামায়াত করে। তাকে ছাড়া যাবে না। আমাকে কি এখন তোমার ভালো লাগছে? এতো অবহেলা করলা কেন? এখন আমার কিছু করার নাই। পরে তার স্বামীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে একটি মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
নারী পুলিশ পরিদর্শক অভিযোগে আরও বলেন, থানায় আমার স্বামীর সঙ্গে ওই দিন দুপুরে সাক্ষাৎ করি। তিনি আমাকে জানান, রাতে থানায় এনে তাকে বেদম মারধর করেছে থানার এসআই মতিন। মারার সময় তাকে বলা হয়েছে- শালা তোর সাহস কম নয়। তুই মাহবুব স্যারের বউকে বিয়ে করেছিস। তোমার সংসার তছনছ করে দিব। আমি ওই দিন দেখি আমার স্বামীর মুখে ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
নারী পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ তার নোংরা উদ্দেশ্য হাসিল করতে না পেরে আমার আগের স্বামী দামকুড়া থানার ওসি মাহবুবের সঙ্গে মিলে আমার সংসার তছনছ করতেই এমন কাজ করেছে। আমার স্বামীকে জামায়াত অ্যাখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করে হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি পুলিশের একজন সদস্য। আমার প্রতি প্রতিহিংসামূলকভাবে এমন আচরণ করা ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের পরিপন্থি। আমি এর প্রতিকার চাই।
এদিকে নারী পুলিশ কর্মকর্তার এ অভিযোগকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পুলিশ কমিশনারের প্রতি সুপারিশ করেছেন বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি রাজশাহীর অধ্যক্ষ ও অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক।
অন্যদিকে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বোয়ালিয়া থানার ওসি নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, পুলিশ পরিদর্শক হোসনে আরা বেগম পুতুলের সঙ্গে তার এক বা দুইবার দেখা হয়েছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এনেছেন তার পুরোটাই মিথ্যা। তার স্বামীকে জামায়াতের নাশকতা পরিকল্পনার বৈঠক থেকে ধরা হয়েছে। তবে দামকুড়া থানার ওসি মাহবুব আলম এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে অস্বীকার করেন। সূত্র : যুগান্তর। আজকের তানোর