সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:২১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন আনন্দ কুমার সাহা। সুদসহ সেই ঋণ পরে পরিশোধ করতে না পারার কারণে তার বন্ধকি জমি নিলামে বিক্রি করে দেয় ব্যাংক। ১ কোটি ৬০ লাখ টাকায় এ জমি কিনে নেন সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তি।
এখন সেই জমি আবার আনন্দ কুমার সাহার হয়ে দখলে নেমেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) এক কাউন্সিলর। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও সাবেক যুবদল নেতা শহিদুল ইসলাম পচার বিরুদ্ধে উঠেছে এ অভিযোগ।
ভুক্তভোগী সেলিম রেজার অভিযোগ, বুধবার সকালে কাউন্সিলর পচা প্রায় ৭০ থেকে ৮০ জনের বাহিনী নিয়ে ওই জমিতে থাকা তার সাইনবোর্ড গুঁড়িয়ে দেন। এ নিয়ে উত্তেজনা দেখা দিলে শাহমখদুম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। থানা থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরের এ জমিটি দখল করতে যাওয়ায় পুলিশ স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর পচাকে ভর্ৎসনা করেছে।
যোগাযোগ করা হলে কাউন্সিলর পচা জমির সাইনবোর্ড গুঁড়িয়ে দিতে নিজেসহ লোকজন নিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর পবাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা আনন্দ কুমার সাহা ২০১৭ সালে সিটি ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এজন্য তিনি নিজের নামের তিন স্থানে মোট ০.২১৪৫ একর (১৩ কাঠা) জমি ব্যাংকে বন্ধক রাখেন। কিন্তু তিনি ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি। সুদসহ এই ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
আনন্দ কুমার ঋণখেলাপি হয়ে যাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর বন্ধকি জমি বিক্রি করতে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
এরপর ২২ ডিসেম্বর প্রকাশ্য নিলামে অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জমিগুলো কিনে নেন। নিলামের পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সেলিম রেজাকে জমি বুঝিয়ে দেয়।
ব্যবসায়ী সেলিম রেজা জানান, তিনি জমি কেনার পর নিজের নামে নামজারি করে নেন। খাজনাও পরিশোধ করেন। এরপর আনন্দ কুমার সাহা হাইকোর্টে গিয়ে একটি রিট করেন যে, তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করতে চান এবং জমি ফেরত চান। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি রিটের শুনানিতে নিলাম বিজ্ঞপ্তিটির শুনানির ওপর হাইকোর্ট তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা দেন এবং আনন্দ সাহাকে চলতি বছরের ৩০ মে’র মধ্যে আগের ২ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং নিলাম পরবর্তী সময়ের সুদসহ সমুদয় পাওনা ব্যাংকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট জানিয়ে দেন, আনন্দ সাহা এ সময়ের মধ্যে পাওনা পরিশোধে ব্যর্থ হলে এ আদেশ খারিজ হবে এবং তাকে ৫ লাখ টাকা হাইকোর্টে জরিমানা দিতে হবে; কিন্তু এখনো ব্যাংকে টাকা পরিশোধ করতে পারেননি আনন্দ সাহা।
সেলিম রেজা বলছেন, ব্যাংকে টাকা পরিশোধ না করেই কাউন্সিলরকে নিয়ে জমি দখলে নেমেছেন আনন্দ কুমার সাহা। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকেন বলে সব সময় জমির দেখভালও করতে পারেন না। এ সুযোগে বুধবার তার নিলাম নেওয়া জমির সাইনবোর্ড গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জমিতে গেলে সমস্যা হবে বলে বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এজন্য তিনি থানায় একটি জিডি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে রাসিক কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম পচা বলেন, আমার এলাকায় জমিটা নিয়ে গণ্ডগোল আছে। জমিটা দখল হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি গিয়েছিলাম। জমির মালিক আনন্দ কুমার সাহার লোকজনই সাইনবোর্ড ভেঙে দিয়েছেন।
তিনি দাবি করেন, যৌক্তিক কারণ আছে বলেই তিনি আনন্দ কুমার সাহার পক্ষে সেখানে গিয়েছিলেন।
যোগাযোগ করা হলে আনন্দ কুমার সাহা দাবি করেন, তিনি ব্যাংকে ঋণের টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন। সুদের টাকা এখনো বাকি আছে। ঋণের টাকা দিয়েছেন বলেই জমি ‘উদ্ধার’ করতে গিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, আমার জমি আমি দখলে নেব না তো কে নেবে?
শাহমখদুম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, জমিটা নিয়ে সকালে একপক্ষ গেলে একটু উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। এখন পরিস্থিতি শান্ত।
তিনি বলেন, আনন্দ কুমার সাহা ঋণ পরিশোধ না করার কারণে ব্যাংক তার বন্ধকি জমি নিলাম করে দিয়েছে। আবার তিনি হাইকোর্টে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ঋণ পরিশোধ করলে বা না করলে হাইকোর্ট আবার একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। সেই পর্যন্ত দুইপক্ষকে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। রা/অ