সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:০৫ am
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী নগরবাসীর হয়রানির মধ্যে ফেলে লোডের নামে গ্রাহকের কাছে ফি আদায় করছে নর্দান ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানী লিমিটেড (নেসকা)। গ্রাহকদের নেসকো প্রিপেইড মিটার দেয়ার সময় শুরুতে কোনো ফি নেয়া হয়নি। এখন জোর করেই গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটার লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। কৌশল করে গ্রাহকদের কাছ থেকে ফি আদায় করা হচ্ছে। আর গ্রাহকদের বলা হচ্ছে লোড বাড়ানোর জন্য এই ফি নেয়া হচ্ছে।
বর্তমানে কৌশল হিসাবে গ্রাহকদের বাসা বাড়ির বিদ্যুৎ বারবার লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্রাহকরা বিরক্ত হয়ে নেসকো অফিসে যোগাযোগ করলে তাদের অফিসে ডাকা হচ্ছে। অফিসে ডেকে বলা হচ্ছে লোড বাড়াতে হবে। নইলে সমস্যা সমাধান হবে না। লোড বাড়ানোর কথা বলে স্মার্ট প্রিপেইড মিটারধারী গ্রাহকদের কাছ থেকে ২২০ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
যদিও নেসকো কর্তৃপক্ষ কখনো বলছে, ২২০ টাকা লোড বাড়ানো ফি, আবার কখনো বলছে এটা আবেদন ফি। যদিও নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি স্বীকার করে বলছেন এটি লোড ফি নয়, স্মার্ট প্রিপেইড মিটার দেয়ার সময় আবেদন ফি নেয়া হয়নি, এখন সেটি নেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, রাজশাহী বিভাগের ৬ জেলা রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, বগুড়া, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জের প্রায় পাঁচ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালের জুলাই মাসে নেসকো ৪১৮ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়। ওই বছরের অক্টোবরের মধ্যে প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের অনিহা ও বিভিন্ন অভিযোগের কারণে নেসকো ৬ বিভাগের জেলাসমূহে প্রিপেইড মিটার দিতে পারেনি। ওই বছরে প্রিপেইড মিটার না নেয়ার জন্য গ্রাহকরা মানববন্ধনসহ বিক্ষোভ করে পুরো রাজশাহীজুড়ে। এতে থমকে যায় এই প্রকল্পের কাজ।
সূত্রমতে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত শুধু রাজশাহীতে প্রিপেইড মিটার দেয়া হয়েছে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ হাজারের মত। আর রাজশাহীতে এখনো পোস্টপ্রেইড মিটার রয়েছে এখনো প্রায় দুই লাখের বেশি। প্রিপেইড মিটার দেয়ার সময় গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনো আবেদন ফি নেয়া হয়নি। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ৫ বছর পর এসে নেসকো নতুন কৌশলে গ্রাহকদের কাছ থেকে লোড এডজাস্টের নামে এই ফি ২২০ টাকা আদায় করছে। কোনো ধরনের নোটিশ না দিলেও গ্রাহকদের অফিসে আনার জন্য লোডশেডিং পন্থা বেছে নিয়েছে নেসকো কর্তৃপক্ষ। গত রোববার সকাল থেকে বিদ্যুতের আপডাউন শুরু হয় নগরীর সাগরপাড়া এলাকায়। চারদিকে বিদ্যুৎ রয়েছে কিন্তু প্রিপেইড মিটার যাদের তাদের বাসা বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ নেই। আবার বিদ্যুৎ থাকলেও লাইট মিটমিট করে জ্বলতে দেখা যায়। এমন অবস্থায় নগরীর সাগরপাড়া এলাকার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকরা অফিসে ফোন দিলে তাদের নেসকো অফিসে ডাকা হয়। অফিসে ডেকে গ্রাহকদের জানানো হয়, লোড বাড়াতে হবে। আর লোড বাড়াতে গেলে ২২০ টাকা দিতে হবে। উপর না পেয়ে গ্রাহকরা নেসকোর দাবিকৃত টাকা দিয়ে বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ স্বাভাবিক করেন।
এরপর রাতে নগরীর আলুপট্টি ও কুমারপাড়া এলাকায় চলে নেসকোর ভেলকিবাজি খেলা। সারারাত ভর এই এলাকার প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের সাথে বিদ্যুৎ নিয়ে খেলা চলে। একটি ৫ তলা ভবন এক তলায় বিদ্যুৎ থাকলে দোতলায় নেই। আবার দোতলায় আছে তো চারতলায় নেই। এমন অবস্থায় এই এলাকার লোকজন সোমবার সকালে নেসকোর অফিসে ফোন দেয়। ফোন দেয়ার পর গ্রাহকদের ডাকা হয় অফিসে। গ্রাহকরা অফিসে এলে দাবি করা হয় মিটার প্রতি ২২০ টাকা। উপায় না পেয়ে তারা টাকা দিয়ে মিটার চালু করেন। এরপর মঙ্গলবারও চলে একই কায়দায় নগরীর বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ নিয়ে চলে নেসকো অফিসের তালবাহানা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন ও রাতে নেসকোর লোকজন এলাকা ভিত্তিক ট্রান্সমিটারে অবস্থান করছেন। তারা মুলত লাইন লুজ কানেক্টশন করছেন। আবার অফিস থেকে সরাসরি লোডশেডিং করা হচ্ছে শুধু মাত্র গ্রাহকদের বিরক্ত ও ভোগান্তির জন্য। লোডশেডিং করলে গ্রাহকরা নেসকো অফিসে যোগযোগ করবে। এই সুযোগে তাদের কাছ থেকে লোড বাড়ানোর নামে ফি আদায় করা যাবে। মুলত এ উদ্দেশ্যে নিয়ে প্রতিরাত এলাকা ভাগ করে স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের সাথে লোডশেডিং লোডশেডিং খেলা খেলছে নেসকো কর্তৃপক্ষ। কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়ে এমন ভোগান্তিতে ফেলানোর জন্য গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছে।
নেসকোর হিসাব অনুযায়ী রাজশাহী নগরীতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজারের মত স্মার্ট প্রিপেইড মিটার রয়েছে। এসব স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের গ্রাহকদের কাছ থেকে যদি আবেদন ফি বা লোড বাড়ানোর অযুহাতে ২২০ টাকা নেয়া হয়, তাহলে এই টাকার পরিমান দাড়ায় প্রায় ১০ লাখ। এই বিশাল পরিমান টাকা নেসকো লোড বাড়ানো বা ফ্রি বাবদ আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে।
বিষয়টি নিয়ে নেসকোর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, একজন গ্রাহক পোস্টপ্রেইড মিটার নিলে তাকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে আবেদন করতে হয়। কিন্তু স্মার্ট প্রিপেইড মিটার দেয়ার সময় আমরা কোনো আবেদন ফি নেইনি। যার কারণে এখন সেটি নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, মিটার প্রতি ২২০ টাকা ধরা হয়েছে। এটি খুব বেশি নয়।
তিনি আরো বলেন, গ্রাহকদের এব্যাপারে অনেক আগে এসএমএস দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো সাড়া দেয়নি। যার কারণে এখন এই লোডশেডিং পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। কারণ বাসায় বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে ফোন দিবেন। তখন তাকে অফিসে ডেকে বিষয়টি বুঝিয়ে ফি নেয়া হবে। গ্রাহকদের হয়রানি করে কেনো ফি বা লোড বাড়ানোর কৌশল নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা চেয়েছিলাম গ্রাহকরা নিজে থেকে অফিসে এসে লোড বাড়িয়ে নিয়ে যাক। কিন্তু গ্রাহকদের এসএমএস দিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, প্রথম দিকে পোস্টপ্রেইড মিটার দেয়ার সময় বিদ্যুৎ ব্যবহারে বোনো কেবির হিসাব ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি দেখা গেছে, এক কেবি লোড নিয়ে একজন গ্রাহক দুই তিন কেবি বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন। মূলত সেটি রোধ করার জন্য এই নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে লোডশেডিংয়ের পরিমান একটু বেশি হয়ে গেছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি খুব বেশি নয়, অল্প অল্প এলাকায় লোডশেডিং করে গ্রাহকদের অফিসে ডেকে লোড বাড়ানো বা আবেদন ফি নেয়ার। তবে গ্রাহকদের অভিযোগ, অফিসে এসে তারা জানতে পারে মিটারের লোড বাড়ানোর জন্য এসএমএস দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর ফরম পূরণ করে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছেন অনেকেই। এরপর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার ডিজিট মিটারে প্রবেশ করাতে বলা হচ্ছে। নেসকোর সকল শর্ত পূরণ ও টাকা জমা দিলেও মিটার চালু করতে পারছেন না অনেকেই। নেসকো অফিসে বললেও কর্ণপাত করা হচ্ছে না এমন অভিযোগ করেন অনেকেই।
নেকসোর প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ বলেন, আমাদের সফটওয়ারের কিছু সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত এটি ঠিক হয়ে যাবে। রা/অ