সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:২৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজনীতির কোষা কোষিতে দিন দিন সংঘাতের দিকে এগোচ্ছে রাজনৈতিক দল গুলো। প্রতিহিংসার রাজনীতিতে মেতে উঠেছে বিএনপিসহ তাদের অঙ্গ সংগঠন গুলো। রাজশাহীতে সরকার দলীয় এমপিদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ তুলে ধরে বিএনপি নেতা ও সাবেক সিটি মেয়র মিজানুরহমান মিনু যে বক্তব্য দিয়েছেন তা নিয়ে রাজশাহী এখন উত্তাপ্ত। দু’দলের মধ্যেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। যে কোন সময় লংকাকান্ড লেগে যেতে পারে।
বক্তব্যে মিনু বলেন, ‘রাজশাহীর-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তাকে আমি দেখেছি রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের স্টেজে কর্নেল ফারুকের পাশে অস্ত্র নিয়ে জনগণের দিকে তাক করা। তিনি এখন আওয়ামী লীগের এমপি। এক সময় তিনি মন্ত্রীও (প্রতিমন্ত্রী) ছিলেন। বাগমারার এমপি এনামুল সাহেব, জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ শ্রমিক লীগ কিছুই করতে দেখি নাই। তিনি বগুড়ায় যখন পড়াশোনা করতেন তখন শিবিরের প্রেসিডেন্ট ছিল।
সেও এখন এমপি। তারপর আরে মনসুর তো আমি মনে করতাম বিএনপি করতো। আমাদের মন্ত্রী কবির ভাইয়ের ড্রয়িংরুমে সবসময় বসে থাকতো প্রমোশন আর ট্রান্সফারের জন্য। আমি জেলখানায় ঢুকে দেখি মনসুর জেলখানার ডাক্তার। জেলখানায় হাজতির সাথে কী যে অন্যায় অত্যাচার করেছে। এখন দেখি মনসুরও এমপি। আরেকজন হচ্ছে চারঘাটের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। আরে.. ও আমার সাথে তদবির করতে আসছিল বিএনপি থেকে ভোট করবে। আমি বলেছি ব্যবসা করছ। কর গা। এখানে এসো না। তোমরা ব্যবসা করছো।
ব্যবসা করে দেশকে আগিয়ে নাও। তো ও জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেনি। আসলে আওয়ামী লীগ একটা প্রচীন দল। চ্যালেন আয়ের টকশো তৃতীয় মাত্রায় এসব মন্তব্য করেন বিএনপির এই সিনিয়র নেতা মিজানুর রহমান মিনু। ওই টকশোতে মিনুর সঙ্গে আলোচক ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ দারা। রাজশাহীর চারজন এমপি নিয়ে মিনুর মন্তব্যে একটি ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে।
ক্লিপটি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টির সাথে সাথে ক্ষোভের ও সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে রাজশাহীর রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় চলছে। গত ৬ জুলাই রাজশাহী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে পর্বটি ধারণ করা হয়। তবে সম্প্রচার করা হয় বুধবার দিবাগত রাত একটায়। টেলিভিশনে সম্প্রচারের পর পরই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধমে ছড়িয়ে পড়েছে মিনুর মন্তব্যের ক্লিপটি।
মিনুর মন্তব্য বিষয়ে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক বলেন, ‘আমি ভিডিও ক্লিপটি দেখেছি। উনি (মিনু) কি তাহলে বগুড়া জেলা শিবিরের সভাপতি ছিলেন! তা না হলে আমার কথা বলছেন কেমন করে।’ ছাত্র শিবিরের সভাপতি বলায় মিনুর বিরুদ্ধে তিনি মামলা করবেন বলেও জানান।
বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘যা সত্য তাই বলেছি। এগুলো সবাই জানে।
এরআগে ২০১৯ সালের ১৮ আগস্ট একটি জাতীয় দৈনিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ওয়াকার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলে হোসেন বাদশাও বলেছিলেন রাজশাহী-১ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী একসময় ফ্রীডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে ফারুক চৌধুরী ফ্রীডম পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সে সময় ফ্রীডম পার্টির যে মিছিলটি বের হয়েছিল, তাতে সামনের সারিতে ছিলেন ওমর ফারুক চৌধুরী। বদশা আরও বলেন, প্রথমে ফ্রীডম পার্টি, এরপর ছাত্রদলের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (রাকসু) ক্রীড়া সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করেছিলেন ফারুক চৌধুরী। এরপর বিএনপি হয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। বাদশা এমপির ওই বক্তব্যের জেরে ওই বছরেরই ২১ আগস্ট তার আইনজীবী রাজশাহী জজকোর্টের অ্যাডভোকেট এজাজুল হকের মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ফারুক চৌধুরী। কিন্তু বাদশা লিগ্যাল নোটিশের কোনো জবাব দেননি।
তবে বাদশার এমন বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার ফ্রিডম পার্টি বা ছাত্রদল করার তথ্য সত্য নয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বাবা আজিজুল হক চৌধুরী ও চাচা মকবুল হক চৌধুরীকে তুলে বাবলা বনে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। আমার মামা কামরুজ্জামান হেনা জাতীয় নেতার অন্যতম। তাঁকে জেলখানায় হত্যা করা হয়। আমরাই শহিদ পরিবারের সন্তান। রা/অ