শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৪১ pm
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
শিক্ষক সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। কোনও রকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে স্কুলটি। এরই মধ্যে স্কুলটির একজন সহকারী শিক্ষক ডেপুটেশনে থাকায় শিক্ষাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অথচ বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। শিক্ষা বিভাগের তদারকিও নেই বললেই চলে।
এই বিদ্যালয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট সাতজন শিক্ষকের পদ রয়েছে। অনেক আগে থেকেই প্রধান শিক্ষকের পদটি অনেক দিন ধরে শূন্য রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) মোহনপুর উপজেলার মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সরেজমিনে গিয়ে কর্মরত শিক্ষক ও স্থানীয় সাথে বলে জানা গেছে, বর্তমানে ছয় শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন। এর মধ্যে একজন সহকারী শিক্ষক মাতৃকালিন ছুটে রয়েছেন। অপর একজন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনিও ছুটি নিয়েছেন। মোসা. নাজনীন সুলতানা নামের সহকারী শিক্ষক ডেপুটেশন নিয়ে রাজশাহীর হেলানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ কর্মরত রয়েছেন। সহকারী শিক্ষক মোসা. নাজনীন সুলতানা ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে ডেপুটেশনে যান রাজশাহী শহরের দড়িখড়বনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি একটানা আট বছর সেখানেই শিক্ষকতা করেন। গত ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ডেপুটেশন বাতিল হওয়ায় তিনি মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে আবারও ডেপুটেশন যাওয়ায় জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।
গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সহকারী শিক্ষক নাজনীন সুলতানা আবারও ডেপুটেশন নিয়ে রাজশাহীর হেলানাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-১ যোগদান করেন। ইচ্ছামত ডেপুটেশন নিয়ে অন্য স্কুলে গেলেও দেখার যেন কেউ নেই। ছয় শিক্ষকের মধ্যে একজন মাতৃকালিন ছুটি রয়েছেন। একজন ডেপুটেশনে ও অপর একজন শিক্ষক ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে ছুটিতে থাকায় বর্তমানে ওই স্কুলের শিক্ষার কার্যক্রম চরম হুমকির মুখে পড়েছে। ডেপুটেশনে থাকা সহকারী শিক্ষক নাজনীন সুলতানা মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছেন। ডেপুটেশনে থাকার কারণে ওই পদে কোন শিক্ষক যোগদান করতে পারছেন না। গত মঙ্গলবার দুপুরের পর ডেপুটেশনের সহকারী শিক্ষকের ডেপুটেশন বাতিল চেয়ে সমাবেশ করেছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা। সমাবেশ থেকে অভিভাবকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কতৃপক্ষ যদি দ্রুত প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নাজনীন সুলতানার ডেপুটেশন বাতিল না করলে খুব দ্রুত স্কুলে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা ক্ষোভ করে বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে স্কুলের শিক্ষার মান চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তারা কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে ডেপুটেশন থাকা সহকারী শিক্ষক নাজনীন সুলতানার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি রাজশাহী শহরে বদলী চাইলে কতৃপক্ষ আমাকে ডেপুটেশনে দেয়। আমি রাজশাহী শহরে বসবাস করি এখান থেকে মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যেতে প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় দুইশত টাকা। বর্তমানে যে স্কুলটি রয়েছি সেখানে যেতে প্রতিদিন মাত্র ৩০ টাকা খরচ হয়। আপনি বলুন এমন সুযোগ কি ছাড়া যায়।
মৌপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ওয়াসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ডেপুটেশনে থাকা সহকারী শিক্ষক নাজনীন সুলতানার বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে বার বার বলার পরেও কতৃপক্ষ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
মোহনপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রশিদা ইয়াসমিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, শিক্ষা অধিদপ্তর ডেপুটেশনের আদেশ দিয়েছেন তাতে আমার করার কিছুই নেই। একজন শিক্ষক দীর্ঘদিন ডেপুটেশনে থাকার পরেও আবারও ডেপুটেশনে নিয়েছেন এবিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিয়েছেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, ওই শিক্ষক কি আমার শুক্র। কেন তার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, এমন কথা বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। রা/অ