বৃহস্পতিবর, ২১ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৬:৩১ pm
ডেস্ক রির্পোট :
বগুড়ায় বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ব্যবহৃত কাঁদানে গ্যাস (টিয়ার গ্যাস) ও শর্টগানের গুলির শব্দে শহরের ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্তত ৫০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ৩০ জনকে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রায় চার ঘণ্টা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে থাকার পর বিকেলের দিকে ছাত্রীরা হাসপাতাল ছাড়ে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর পৌনে ১টার দিকে শহরের ইয়াকুবিয়া মোড়ে বিদ্যালয়টির পাশেই পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ হয়।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। গুরুতর অসুস্থদের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এ ঘটনায় দুপুর ৩টার দিকে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে হাসপাতালে যান সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম।
সিভিল সার্জন জানান, টিয়ার গ্যাসের পাশাপাশি আতঙ্কের কারণে একসঙ্গে এতো শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সাধারণত অনেক শিক্ষার্থী একসঙ্গে থাকলে কয়েকজন হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে অন্যরাও আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। এখানেও তাই হয়েছে। ভয়ের কিছু নেই।
এর আগে সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিএনপির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার দুপুরে শহরের দক্ষিণের প্রবেশমুখ বনানী এবং উত্তরের প্রবেশমুখ মাটিডালি এলাকা থেকে জিরো পয়েন্ট সাতমাথা অভিমুখে পদযাত্রা বের করা হয়। মাটিডালি থেকে আসা পদযাত্রাটি জিরো পয়েন্টে না গিয়ে শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয়ের দিকে গিয়ে নির্বিঘ্নে চলে যায়। তবে বনানীর দিক থেকে আসা পদযাত্রাটি দুপুর পৌনে ১টার দিকে ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ের দিকে পৌঁছার পর বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ জলেশ্বরীতলার দিকে ঘুরে গেলেও পেছনে থাকা নেতা-কর্মীরা জিরো পয়েন্ট সাতমাথার দিকে যেতে চায়। এতে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বেধে যায়।
এ সময় বিএনপি নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও হাতে থাকা লাঠি নিক্ষেপ করে। তখন পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ এবং রাবার বুলেট ও ব্ল্যাঙ্ক ফায়ার করে। প্রায় ২০ মিনিট ধরে ওই সংঘর্ষ চলে। এ সময় সংঘর্ষস্থল ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে ওই সংঘর্ষ শহরের নবাববাড়ি রোডে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে ও জলেশ্বরীতলা এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়ে।
ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, সংঘর্ষ শুরু হওয়ার পর স্কুল জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর টিয়ার গ্যাসের ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। মূলত আতঙ্ক আর টিয়ারশেলের ধোঁয়ার কারণেই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারও কারও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
অসুস্থ নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী স্নেহা আক্তার জানায়, দুপুরে ক্লাস করছিলাম। হঠাৎ অনেক জোরে জোরে শব্দ হতে থাকে। এরপর ক্লাসের ভেতর ধোঁয়ায় ভরে যায়। তখন চোখ জ্বালা করছিল, নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল। পরে ম্যাডাম এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
সপ্তম শ্রেণির আফিয়ার মা খাদিজা বেগম জানান, বিদ্যালয় থেকে খবর পেয়ে হাসপাতালে যান। মেয়ে টিয়ার শেলের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। গিয়ে দেখি তাকে স্যালাইন দিয়ে রেখেছেন চিকিৎসকরা।
আইনুল হাসান পলাশ নামে এক অভিভাবক জানান, নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত তার মেয়েকে আইসিইউতে নিতে হয়। চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি আতঙ্কের কারণেই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এদিকে জানতে পেরে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের দেখতে যান বগুড়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শফিউল আজম, বিএমএ বগুড়ার সভাপতি ডা. মোস্তফা আলম নান্নু, সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল, স্বাচিপ বগুড়ার সাধারণ সম্পাদক ডা. সামির হোসেন মিশু, ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা রফি নেওয়াজ খান রবিন এবং স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আরিফুর রহমান। পরে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা ও সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ অসুস্থ শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর নেন।
বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. কাজী মিজানুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের অসুস্থতা গুরুতর নয়। তারা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছে। তাদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রা/অ