বৃহস্পতিবর, ১৯ েপ্টেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:২৪ pm

সংবাদ শিরোনাম ::
রাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনসুরের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন সেই রুবেল আরও ৭ দিনের রিমান্ডে সিলেবাস সংক্ষিতের দাবিতে রাজশাহীতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শেষে সমাবেশ পবায় উপজেলা প্রশাসনে ও কাটাখালি পৌরসভায় ভোগান্তি চিত্র নায়িকা পরীমণি পালন করলেন ‘বিবাহ বিচ্ছেদ’ দিন এক দফা দাবিতে রাজশাহীতে নার্সদের মিছিল শেষে মানববন্ধন প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : দুধরচকী রাজশাহীতে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ডলার সংকটে বাংলাদেশকে সার দিচ্ছে না সরবরাহকারীরা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ড. ইউনূসের নাগরিক সংবর্ধনা বাতিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে বিচারিক ক্ষমতা পেলো সেনাবাহিনী আন্দোলনের মুখে অবশেষে পদত্যাগ করলেন রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ বাগমারায় অধ্যক্ষ ও সভাপতির অনিয়মের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি গুজব : আসিফ মাহমুদ একদিনের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা রাজশাহী আসছেন আজ বাংলাদেশ ও ভারত ভিসা জটিলতায় চার যৌথ সিনেমা একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির আটক বৈরী আবহাওয়ার অজুহাতে বিদ্যুতের লোডশেডিং, অসহায় মানুষ বাগমারায় সাবেক এমপি এনামুল হক গ্রেফতার বাগমারায় মোমবাতির আগুনে ব্যবসায়ীর দোকান ও বসতবাড়ি পুড়ে ছাঁই
বাক্শ্রবণপ্রতিবন্ধী মেয়েটাই অলিম্পিকে ফুটবল দলের অধিনায়ক

বাক্শ্রবণপ্রতিবন্ধী মেয়েটাই অলিম্পিকে ফুটবল দলের অধিনায়ক

ক্রীড়া ডেস্ক :
১৯০টি দেশের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অ্যাথলেটদের নিয়ে গত মাসে জার্মানির বার্লিনে বসেছিল স্পেশাল অলিম্পিকের আসর। আয়োজনে ৮টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে ২৪টি সোনাসহ ৩৩টি পদক জিতেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মেয়েদের ফুটবলও আছে। আর এই সোনাজয়ী দলের হয়ে গোল দিয়েছে অধিনায়ক স্বর্ণা আক্তার। বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী এই কিশোরীর জীবনসংগ্রামের গল্প শোনালেন রমেশ কুমার।

বাড়িতে ঢোকার মুখেই নুরু মিয়ার সঙ্গে দেখা। স্বর্ণা আক্তারের বাবা তিনি। পরিচয় জেনে সাদরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। বারান্দায় বসে টুকটাক আলাপ শুরু হলো। স্বর্ণাকে নিয়ে আলাপ। মেয়েটা যেদিন জার্মানিতে গেল, সেদিন নাকি নুরু মিয়ার খুব খারাপ লেগেছিল। মেয়েটা দূর দেশে গিয়ে কাউকে কিছু না বলতে পারলে কী করবে, কী খাবে এসব ভেবে ভেবে তাঁর স্ত্রীও সেদিন খুব কেঁদেছিলেন। তবে সেই মন খারাপের লেশমাত্র এখন আর নুরু মিয়ার চোখেমুখে নেই। বরং সোনাজয়ী মেয়ের জন্য তাঁর চোখেমুখে উজ্জ্বল আভা। সমাজের কারণে একসময় যে মেয়েকে বোঝা ভাবতে হচ্ছিল, সেই মেয়ের সাফল্যেই আজ তিনি গর্বিত। ময়মনসিংহের নান্দাইলের বারুইগ্রামের বাড়িতে বসে বলছিলেন, ‘মেয়েটাকে মানুষ করতে গিয়ে পাড়াপ্রতিবেশীর নানা কটুকথা শুনতে হয়। এসব কথায় কষ্ট পেলেও কখনো থামি নাই, মেয়েটাকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে চাইছি। জানি না কতটুকু পারব। তবে এখন খুব গর্ব হচ্ছে।’

কথা বলতে বলতেই বাবার পাশে এসে দাঁড়ায় স্বর্ণা আক্তার। তার মা নাজমা আক্তার আরও আগেই এসে পাশে বসেছেন। স্বর্ণাকে দেখে বোঝার উপায় নেই প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বড় হয়েছে মেয়েটা। চটপটে মেয়েটা বাসায় একজন সাংবাদিক এসেছে বুঝতে পেরেই রুমে ছুটে গেল। তার খেলোয়াড়ি পরিচয়পত্র, সদ্য করা পাসপোর্ট, জার্মানি যাওয়া-আসার বিমান টিকিট ও সোনার পদকটি নিয়ে আবার ফিরে এল। এসব হাতে তাকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, মুখে বুলি থাকলে কত কথাই না গড়গড় করে বলত এই কিশোরী। সেই বাধা ঘোচালেন নুরু মিয়া। দোভাষীর মতো স্বর্ণার সঙ্গে আমার কথা বলিয়ে দিলেন। আমার হয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলেন, খেলায় অংশ নিয়ে কীভাবে জয় ছিনিয়ে আনল স্বর্ণার দল।

স্বর্ণার গলায় ঝোলানো ফিতার মধ্যে বিশেষ অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর পতাকা আছে। সেখান থেকে পতাকা দেখিয়ে দেখিয়ে সে বুঝিয়ে দিল কোন কোন দেশের সঙ্গে তারা লড়েছে। যেমন সৌদি আরবের পতাকা দেখিয়ে আঙুলের কর গুনে গুনে বলল ৯-১ গোলে দলটাকে হারিয়েছে তারা। তারপর হেরেছে ইসরায়েলের কাছে, সেটাও বোঝাল। তবে মজার বিষয় হলো ফাইনালে সেই ইসরায়েলকেই ২-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশ দল। বিজয়ী খেলোয়াড় হিসেবে স্বর্ণাও পেয়েছে সোনা। পদকটি হাতে নিয়ে স্যালুটের কায়দায় সে সামনে তুলে ধরল। মূক মেয়েটির সারা মুখে এক অসাধারণ উজ্জ্বলতা ফুটে উঠল তখন।

স্বর্ণার বয়স তখন দুই বছর :
২০০৬ সালের মাঝামাঝি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন নাজমা আক্তার। পেটের ডানে তীব্র ব্যথা নিয়ে গেলেন চিকিৎসকের কাছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর চিকিৎসক তাঁর গর্ভের সন্তানের সুস্থতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেন। যার বয়স তখন দুই মাস। নাজমা আক্তার চিকিৎসককে বললেন, তাঁর যা-ই হোক, সন্তানটা যেন সুস্থভাবে জন্ম নেয়। এ জন্য দীর্ঘদিন ওষুধ খেতে হলো। তারপর সুস্থ-স্বাভাবিকভাবেই একটা মেয়ে হলো। নুরু মিয়া আর নাজমা আক্তার দম্পতি তাঁদের তৃতীয় সন্তানের নাম রাখলেন স্বর্ণা আক্তার।

ফুটফুটে শিশুর দিকে চেয়ে নাজমার মন ভালো হয়ে গেল, ভুলে গেলেন দীর্ঘ রোগভোগের কষ্ট। কিন্তু মেয়েটা যখন বড় হতে থাকল, কেমন যেন স্বাভাবিক শিশুর মতো সাড়া দিত না। মাস যায়, বছর যায় মেয়ের মুখে কথা ফোটে না, ডাকলে সাড়াও দেয় না। মা-বাবার চিন্তা বাড়ে। দুই বছর বয়সে মেয়েকে নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন। চিকিৎসক জানালেন, স্বর্ণা বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। কথাটা শুনে খুব ভেঙে পড়েন দুজন।

স্বর্ণাকে নিয়ে শুরু হলো নতুন জীবন। ইশারা ভাষায় কথা বলা শিখলেন। ছয় বছর বয়সে স্বর্ণাকে বাড়ির কাছের মিশ্রিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি নান্দাইল শহরের সেবা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়েও ভর্তি করে দেওয়া হলো। সেবায় পড়াশোনার পাশাপাশি নানা খেলাধুলা করার সুযোগও আছে। খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠল স্বর্ণা। স্বর্ণার মতো আরও কয়েকজন আছে। বিদ্যালয়টির শিক্ষক জিয়াউর রহমান আকন্দ ভাবলেন, এদের প্রতিভা বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণ দরকার। জিয়াউর রহমান বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলেন।

তার একটি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি)। ক্রীড়াবিদ তৈরির এই প্রতিষ্ঠান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দিল। স্বর্ণারা আটজন গত চার বছরে বিকেএসপিতে একাধিকবার প্রশিক্ষণ নিয়েছে। বিশেষ অলিম্পিক দল গঠনের সময় আটজনের মধ্যে স্বর্ণা আক্তারকে বেছে নেন নির্বাচকেরা। শুধু তা-ই নয়, তাকেই দেওয়া হয় মেয়েদের ফুটবল দলের অধিনায়কত্ব। দলকে সোনা জিতিয়ে অধিনায়কের মতোই ফিরেছে স্বর্ণা। সূত্র : প্রথমআলো

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.