সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৯ am
এম এম মামুন, নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহী মোহনপুর উপজেলার বিদিরপুর বাজার বিভিন্ন ধরনের কাঁচা সবজির জন্য বিখ্যাত। রাজশাহীর ৯টি উপজেলার সবকয়টি উপজেলাতে সবজি উৎপাদন হয়। এর সিংহভাগ বিক্রি হয় এই বাজারে। আর এখান থেকে পাইকাররা সবজি কিনে নিয়ে রাজশাহী নগরীর বাজার এবং ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠাচ্ছেন। আর সেই সবজি মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরে কয়েক হাত ঘুরে কেজিতে দাম বাড়ছে অন্তত ২০ টাকা হারে।
যা দেখে এবং শুনে কৃষকরা অবাক হলেও তাঁদের এখানে কিছুই করার থাকে না। তাঁরা দাম ঠিকমতো না পেলেও কেজি প্রতি অন্তত ২০ টাকা লাভ গুনে নিচ্ছেন মধ্যসত্ত্বভোগীরা। আর সবজি চাষ করে কখনো লাভ তো দূরের কথা কৃষকদের খরচেরও টাকাও উঠে না-এমনটিই বলছিলেন এ হাটে সবজি বিক্রি করতে আসা কৃষকরা।
মোহনপুরের বিদিরপুর ও খড়খড়ি হাট ঘুরে কৃষক এবং পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মণ পটল এখানে পাইকারী বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৯০০ টাকা দরে।
সেই হিসেবে এখানে প্রতিকেজি পটল গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০-২২ টাকা ৫০ পয়সা দরে। অথচ এই পটল বিদিরপুর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে রাজশাহী শহরে বিক্রি হয়েছে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে।বিদিরপুর বাজারে গতকাল করলা বিক্রি হয়েছে ১৮শ থেকে দুই হাজার টাকা মণ দরে। সেই হিসেবে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। কিন্তু সেটি রাজশাহী শহরের বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে। আবার বরবটি বিক্রি হয়েছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা মণ দরে। সেই হিসেবে প্রতিকেজি বরবটি বিক্রি হয়েছে ২৫-৩০ টাকা দরে। সেটি রাজশাহী শহরে বিক্রি করতে দেখা গেছে ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। বিদিরপুর বাজারে প্রতিমণ মুলা বিক্রি করতে দেকা গেছে, ১২-১৬শ টাকা মণ দরে। সেটি আবার রাজশাহী শহরে বিক্রি হয়েছে ৭০-৯০ টাকা কেজি দরে।
বিদিরপুর বাজারে পটল বিক্রি করতে আসা কৃষক আজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা খ্যাতে ফসল ফলাই (উৎপদান করি)। দাম পাই আর না পাই হাটে অ্যাসি বিক্রি করতেই হবি। এখুন একটু দাম প্যাচ্চি। তাই পটল বিক্রি করি কিছুটা লাভ হচ্চে। তার পরে সার বিষের যে দাম সবজি চাষ করে এখুন লাভ বার করা খুব কঠিন। যখন দাম পাবো না, তখুন ক্ষতি হবি। তাও ফসল তো আমাদের করতেই হবি। আমাদের লাভ হইলো না ক্ষতি হইলো, সেডা দেখার তো কেউ নাই। যারা আমারে কাছ থেকে জিনিস কিনি নিয়ে য্যায়ে অন্য যাগাত বিক্রি করতিছে, তাদের লাভ কিন্তু ঠিকিই হচ্চে।’
আরেক কৃষক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘ আমারে কাছ থ্যাকি জিনিস কিনি লিয়ে যাইয়ে রাজশাহী শহরেই কেজিতে কমপক্ষে ২০ টাকা লাভ করে বিক্রি হয়। আর আমি সবজি চাষ করি মাঝে-মাঝেই লস খ্যাচ্ছি। তবে লাভও হয় অনেক সময়। একটু আগাম করতে পারলে সবজিতে ভালো ট্যাকা লাভ হয়। কিন্তু এবার তীব্র গরম আর রোদের কারণে এবার আমরা আগাম সবজি তেমন করতে পারিনি। তাই সবজির দাম একটু চড়া হলেও আমাদের মতো কৃষকদের খুব একটা লাভ হচ্চে না।’
পবার খড়খড়ি বাজারে সবজি কিনতে যাওয়া রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার পাইকারী বাজারের ব্যবসায়ী নাদের আলী বলেন, হাটে এক মণ সবজি কেনার পরে ১০০ টাকা খাজনা দিতে হয়। তার পরে আছে গাড়িভাড়া। এই সবজি সাহেবা বাজারের আড়তে বিক্রি করার পরে সেকানে দিতে হবে কেজিপ্রতি ২ টাকা কমিশন। আবার সেখান থেকে খুচরা ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে যাইয়ে তারা কেজিপ্রতি ৮-১০ টাকা হারে লাভ করে বিক্রি করবে। এই কারণে এ বাজারের সবজি রাজশাহী বাজারে গিয়ে কেজিপ্রতি ২০ টাকা হারে দাম বেড়ে যায়।’
রাজশাহীর তেরোকাদিয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আসগর আলী বলেন, ‘আমি প্রতিদিন প্রাই ২০ কেজি সবজি বিক্রি করি। ভোরে উঠে বাজার তেকে সবজি কিনে নিয়ে এসে সারাদিনে বিক্রি করি। কখনো কখনো বিক্রি হয় না মাল থেকে যায়। পরের দিন বিক্রি করতে গেলে দাম কম পাওয়া যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এর পরে আছে গাড়ি ভাড়া, দোকানে খাজনা। তাই প্রতিকেজি সবজি বিক্রি করি অন্তত ১০ টাকা লাভ না থাকলে আমার সংসার চলবে না। রা/অ