সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৫:৩২ am
ডেস্ক রির্পোট :
দীর্ঘ ১০ বছর ঝিমিয়ে থাকার পর হঠাৎ করেই দেশব্যাপি সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করেঠে জামায়াতে ইসলাম। ঢাকার মতিঝিলে ২০১৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি তারা সর্বশেষ বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। এর পর সরকারের নানামুখি চাপ ও নির্বাচন কমিশন থেকে নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তাদের মাঠে নামতে দেখা যায়নি।
তবে গত ১০ জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এ সমাবেশের অনুমতি পায় তারা। সেখানে তারা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতা ও আলেমদের মুক্তি এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে সমাবেশ। এর পর থেকেই পুলিশ ও সরকারের নমনীয় আচরণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিয়ে সংসদীয় আসন গুলোতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা পোস্টার-ফেন্টুন লাগাতে দেখা গেছে।
জামায়াতে ইসলামীর ঘাটি হিসেবে পরিচিত রাজশাহী। জামায়াতী ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের বাড়ীও রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার মহিশালবাড়ী সাগরপাড়া গ্রামে। তিনি রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য দুই উপজেলায় বিভিন্ন বাজার, মোড়েসহ বৈদ্যুতিক পোল ও গাছে গাছে পোস্টার সাটিয়েছেন। ঈদ পরবর্তি সময়ে বিভিন্ন এলাকায় ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় ও সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে দেখা গেছে। বৃষ্টির মধ্যেও গোদাগাড়ীর গ্রাম্য এলাকায় কাঁদাপানি উপেক্ষা করে নির্বাচনী মাঠ চুষে বেড়িয়েছেন।
দীর্ঘ ১০ বছর পর হঠাৎ করেই জামায়াতে ইসলামের তৎপরতা শুরু হওয়ায় আলোচনা শুরু হয়েছে। দলীয় নেতারা বলছেন, মুজিবুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে এই আসন থেকে নির্বাচন করবেন। তাঁরা জামায়াতের দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়েই নির্বাচন করতে পারবেন। এ ছাড়া কেন্দ্র যে সিদ্ধান্ত দেয়, সেই অনুযায়ী তাঁরা ভোট করবেন।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে তিনি জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর আর নির্বাচন করেননি। তানোর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় তিনি সভা করেছেন। এসব সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান বক্তব্যও দিয়েছেন।
গোদাগাড়ী- তানোর গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের পোস্টার ও ফেস্টুন লাগানো হয়েছে। তানোরের গোল্লাপাড়া বাজারে প্রায় প্রতিটি বিদ্যুতের খুঁটিতে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। এই বাজারে আওয়ামী লীগের উপজেলা কার্যালয় রয়েছে। এই কার্যালয়ের সাইনবোর্ডের ঠিক নিচেই জামায়াতের পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। একইভাবে তানোর থানার পাশেও পোস্টার সাঁটানো রয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামেও পোস্টার চোখে পড়েছে।একই চিত্র দেখা গেছে গোদাগাড়ী উপজেলাতেও।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মুজিবুর রহমান প্রায় ২০টি সভা করেছেন। ৩ জুলাই বিল্লি বাজারে মঞ্চ করে সভা হয়। সেখানে দলের পাঁচ শতাধিক নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে গোদাগাড়ী উপজেলা জামায়াতের আমির নুমায়ুন আলী বলেন, তাঁরা তানোরের মতো সভা করার পরিবেশ এখনো করতে পারেননি। তবে উপজেলায় ৫ হাজার পোস্টার ও ৭০০–৮০০ ফেস্টুন লাগিয়েছেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা পশ্চিম জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারী ড. ওবাইদুল্লাহ বলেন, আগামী নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হলে আমাদের দল নির্বাচন করার চিন্তা ভাবনা করছেন। রাজশাহী-১ আসন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির মুজিবুর রহমান আমাদের দলীয় প্রার্থী হচ্ছেন। তিনি ইতিমধ্যে তানোরে পাঁচ-ছয়টি ও গোদাগাড়ীতে ১৪টির মতো নির্বাচনী সভা করেছেন।
ড. ওবাইদুল্লাহ আরো বলেন, দীর্ঘদিন পর নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ ও সভা করায় জনগণ ও নেতাকর্মীদের মাঝে অনেক উচ্ছাস দেখা গেছে। জনগণ মুখিয়ে আছে আমাদের দিকে। অপরদিকে দলীয় নেতাকর্মীরা দলের নির্দেশে সকল ধরনের নির্দেশনা মানতে প্রস্তুত আছে বলে জানান।
হঠাৎ করেই মাঠে তৎপরতা এক্ষেত্রে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে কোন চাপ আছে কিনা ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সরকারের সাথে আমাদের কোন ধরনের আলোচনা হয়নি। বিএনপির সাথে জোট থাকবে কিনা সেটা হাইকমান্ডের বিষয়। পুলিশ সব সময় আমাদের চাপের মধ্যে রাখে এর মধ্যেই আমরা আমাদের কার্যক্রম চালিয় যাচ্ছি বলে জানান।
এদিকে, রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিমিয় করেছেন ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) জামায়াতে ইসলামীর সুরা সদস্য আশরাফুল আলম ইমন। পাইলটের সাথে একটি ছবি ভাইরাল হলে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়।
ঈমন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। তার বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা ফারুক হোসেন হত্যা ও রাইফেল কেড়ে নিয়ে পুলিশ পেটানোসহ ৪২টি মামলা ছিল। তিনি রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারেন। এ টার্গেট নিয়ে তিনি ঈদের পর রাজশাহী এসে বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে জানা গেছে। সূত্র : পদ্মাটাইমস