সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১২:৩৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
শহিদ মিনারে জুতা পায়ে উঠে বক্তব্য দিয়েছেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন। বুধবার বিকালে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙা কলেজ মাঠের শহিদ মিনারে এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সামাজিক সুরক্ষার আওতায় ভাতাভোগীদের সঙ্গে মতিবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তিনি। এ সময় এমপি আয়েনের সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, দলীয় নেতাকর্মী এবং সরকারি কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। তাদের পায়েও ছিল জুতা ও স্যান্ডেল।
এ ঘটনায় রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতকর্মীদের মধ্যে চলছে সমালোচনার ঝড়। শুরু হয়েছে তোলপাড়। ইতোমধ্যে এমপি আয়েনের শহিদ মিনারে বক্তব্যের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের একজন এমপির এ কর্মকাণ্ডে সচেতনমহলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন, শহিদ মিনারে যেকোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেতেই পারে; কিন্তু এমপি আয়েনের নেতাকর্মীদের নিয়ে জুতা পায়ে শহিদ মিনারে ওঠা অত্যন্ত দুঃখজনক। এটি মেনে নেওয়া যায় না। এর মাধ্যমে এমপি আয়েন মহান ভাষা আন্দোলন এবং স্বাধীনতাযুদ্ধে শহিদদের প্রতি চরম অসম্মান জানিয়েছেন। এমপি আয়েনের পরিবার চেতনায় আওয়ামী লীগ নয়। কারণ তার বাবা মহান মুক্তিযুদ্ধে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন বলে তারা মন্তব্য করেছেন।
এদিকে এ মতিবিনিময় সভার আয়োজন করে পবা উপজেলার হরিপুর, দামকুড়া ও হড়গ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ। সভাকে কেন্দ্র করে কাশিয়াডাঙা কলেজ মাঠের শহিদ মিনারে মঞ্চ তৈরি করা হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল।
বক্তব্য দেন হড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, দামকুড়ার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রমুখ। তাছাড়াও পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ আহসান রাসেলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।
জুতা পায়ে শহিদ মিনারে উঠার বিষয়টি স্বীকার করেছেন মতবিনিময় সভার সভাপতি হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল। তিনি বলেন, শহিদ মিনারে জুতা-স্যান্ডেল পায়ে উঠা ঠিক হয়নি। এটি ভুল হয়ে গেছে। আমরা বুঝতে পারিনি। বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবার কাছে অনুরোধ করছি।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক উপপ্রচার বিষয়ক সম্পাদক এবং এমপি আয়েনের নিজ এলাকা মোহনপুরের ঘাসিগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন বকুল। তিনি বলেন, এমপি আয়েনের বাবা হবিবুর রহমান মণ্ডল ছিলেন স্বাধীনতাবিরোধী। তিনি ছিলেন শান্তি কমিটির সদস্য। এ কারণে এমপি আয়েনের পক্ষে জুতা পায়ে শহিদ মিনারে উঠাটা স্বাভাবিক। এ ধরনের গর্হিত কাজের জন্য এমপি আয়েনের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলের হাইকমান্ডের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। রা/অ
এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, জনপ্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে শহিদ মিনারে জুতা পায়ে উঠে এমপি আয়েন গর্হিত কাজ করেছেন। এটি ঠিক হয়নি। এর মাধ্যমে এমপি আয়েন ভাষা শহিদদের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
সভায় উপস্থিত পবা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হাসান রাসেলকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, সভায় আয়োজক ছিল তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ। মঞ্চ যেখানে তৈরি করা হয়েছিল সেটি শহিদ মিনার ছিল কিনা- সেটি আমার জানা নেই। আমি মাত্র দুই মাস আগে পবায় জয়েন করেছি। তাই এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
অভিযোগের ব্যাপারে এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, আমি অনুষ্ঠানে পরে গিয়েছি। তখন বৃষ্টি হচ্ছিল। আমার আগে অনেকেই জুতা-স্যান্ডেল পায়ে মঞ্চে উঠেছেন। মঞ্চ শহিদ মিনারের ওপর তৈরি করা হয়েছে- এটি আমি তাৎক্ষণিকভাবে বুঝতে পারিনি। চারিদিক ঘেরা ছিল। খেয়াল করিনি। জুতা পায়ে শহিদ মিনারে উঠা আমার ভুল হয়েছে। রা/অ