সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:২৯ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোরে বিএনপির উভয় গ্রুপের ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের জের ধরে দুই দফা মারপিট ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় ৪ নেতকর্মী আহত হয়েছেন। শনিবার রাতে পৌরসদরের গাইনপাড়া মহল্লায় অসুস্থ পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামের বাড়িতে আর রোববার সকালে উপজেলার কামারগাঁ ইউপির মাদারীপুর বাজারে ঘটেছে ঘটনাটি।
এমন মারপিটের সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এঘটনায় উভয় গ্রুপের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি শনিবার উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, প্রয়াত মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোটভাই অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও বেগম জিয়ার সামরিক সচিব শরিফ উদ্দিন। একই সময় তালন্দ ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে দেবীপুর মোড়ে ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন- তানোর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান হান্নান এবং তানোর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির অন্যতম সদস্য মিজানুর রহমান মিজান।
এবিষয়ে তানোর কৃষক দলের সদস্য সচিব মালেক মন্ডল জানান, মুন্ডুমালায় সভা শেষ করে তানোর পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালামকে দেখতে তার বাড়িতে যান যুবদল নেতা শরিফ উদ্দিন ছাড়াও বেশ কয়েক নেতাকর্মী। সেখানে যাবার পথেই দেবীপুর মোড়ে মিজানুরের লোকজন আজেবাজে কথা বলে। কোন কর্ণপাত না করে চলে আসেন মালেক ও তাঁর কর্মী সমর্থকরা। পরে অসুস্থ সালামের বাড়িতে থাকা অবস্থায় মিজানের কিছু লোকজন উসকানি মূলক কথা বলা শুরু করে। এহেন সময় একপর্যায়ে হাতাহাতি ও ধাওয়া দেওয়া হয়। এসব কারণে রোববার সকালের দিকে মাদারীপুর বাজারে আমাদের গ্রুপের মতি, মাসুদ, রুবেল ও সেলিমকে মেরেছে মিজান গ্রুপের লোকজন। তিনি আরো বলেন, মিজানের কিছু সহচর আছে তারা ক্ষমতাসিনদের সাথে আতাঁত করে বিটিম হিসেবে কাজ করছে। এখন প্রায় দিন সভা সমাবেশ হবে। কার কত জোর দেখা যাবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত রমজান মাসের আগ থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রয়াত মন্ত্রীর সহধর্মীনি আভা হককে রাজনীতি মাঠে থাকতে বলা হয়। কিন্ত তাকে রাজনীতির মাঠে তো দূরের কথা বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হয়নি। এসব কারনেই বিএনপি একাধিক ভাগে বিভক্ত।
নাম প্রকাশে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা জানান, আমরাও শুনেছি এসব ঘটনা। যার কারণে কেউ আভা হককে প্রার্থী হিসেবে চাচ্ছেন, আবার সিনিয়ররা ছাড়াও বৃহত্তর বিএনপি অবশরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। কিন্তু কেন্দ্র যাকে প্রার্থী করবেন তার হয়ে সবাইকে কাজ করতে হবে বলে সাব জানিয়ে দিয়েছেন শরিফ উদ্দিন। তবে, সাবেক মেয়র মিজান নিজের আধিপত্য বা তিনি উপজেলার কর্নধর হতে চান। এভাবে রাজনীতি করা উচিত নয়। বিএনপির মুল লক্ষ্য সরকার পতন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেদিকে, তানোর বিএনপি নেই, আছে আধিপত্য ধরে রাখতে।
ওই নেতা আরও বলেন, ফারুক চৌধুরী এমপি আছেন বলেই মানুষ অনেক শান্তিতে আছে। যদি বিএনপি ক্ষমতায় আসে আর এই আসনে বিএনপি থেকে এমপি হয় তাহলে মিজান বাহিনীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়বে। তিনি যে এতো জনপ্রিয় তাহলে পৌরসভা ভোটে নিজ কেন্দ্রসহ প্রায় কেন্দ্রে পরাজিত হলেন কিভাবে। মাস্তানি দাঙ্গাবাজি করে জনপ্রিয়তা অর্জন হয় না বলে জানান ওই নেতা। ২০১৬ সালে পৌরসভা নির্বাচনে প্রয়াত তানোর বিএনপির কর্ণধর এমরান আলী মোল্লা বেঁচে ছিল বলে ১৩ ভোটে মেয়র হয়েছিল মিজান। কিন্তু এমরান চেয়ারম্যান মরে যাবার পর মিজান বিপুল ভোটে পরাজিত হন। তার বাড়ি পৌরসদরে গুবিরপাড়া হমল্লায় হলে নিজ গ্রামেও তো তার বিরুদ্ধে অনেকে।
উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক মাসুদ করিম জানান, পৌর বা ওয়ার্ড কমিটিকে না বলে শরিফ উদ্দিন সালামকে দেখতে আসেন। আমরাও যায়। সেখানে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন, যুবদল নেতা কাশেম, লিটন, আতিক, ছাত্রদল নেতা বজলুর ও সাবেক চেয়ারম্যান মফিজসহ কয়েকজন তাড়ানি দেয়। তারা জমি দিয়ে পালিয়ে যায়।
কৃষকদলের নেতা মালেক আরও জানান, মিজানের খালাতো ভাই তোফা গলাবাজি করছিল। আমাদের লোকজন উত্তেজিত হলে মিজান ছাড়াও কয়েকজন পালিয়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরিফ তানোর-গোদাগাড়ীর বিএনপির নেতা। আর তার সাথে পাল্লা দিচ্ছে মিজান। তিনি আরো জানান, মিজানের লোকজন মুখে কাপড় বেধেঁ সোনাও ছিনতাই করেছে। একথা সবাই জানে।
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব শরিফ মুন্সি জানান, মাদারীপুর বাজারে মারামারি হয়নি। তবে, কথা কাটাকাটি হয়েছে। তানোর থানার এএসআই মজনু জানান, মারামারি হয়নি কথা কাটাকাটি হয়েছে। পরে সবাইকে ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তানোর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আখেরুজ্জামান হান্নান বলেন, দেবীপুরে মিটিং শেষে বাড়িতে চলে গেছেন তিনি। তবে নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি ঠিক নয়। আভা হক ও শরিফ উদ্দিনে মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরেই নাকি এমন লগিং গ্রুপিং হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব তাদের পারিবারিক বিষয় এটা নিয়ে আমার কোন কথা নেই। সাবেক মেয়র জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এসব বাদ দাও সন্ধ্যার পরে সাক্ষাতে কথা হবে বলে এরিয়ে গেছেন তিনি।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি জেনেছি। তবে নিজেদের মধ্যে এসব করা সঠিক নয়। আমি তানোর বিএনপিকে বলতে চায় কেন্দ্রীয় নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে হবে। দলের সিদ্ধান্তে সরকার পতন এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবীতে যে আন্দোলন চলছে। সেটা জোরতাল ভাবে করতে হলে সকল ভেদাভেদ ভূলে এক হয়ে কাজ করতে হবে। আর আগামী ৮ জুলাই তানোরে বিশাল ঈদপূর্ণমিলনী অনুষ্ঠান করার জন্য সবাইকে এক হতে হবে। যারা দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য একক চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে জেলা বিএনপি ব্যবস্থা নেবে। রা/অ