শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১০:৪৪ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : অবশেষে বন্ধ হতে চলেছে রাজশাহীর কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নেই শিক্ষার্থী ভর্তি, নেই কর্মচারিদের বেতন। টানা এক বছর বন্ধ থাকায় কমেছে এসব স্কুলের নাম ডাক। দীর্ঘ সময় পর আশা নিয়ে খোলা হলেও শিক্ষার্থী সংকটের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
কারণ হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলতি বছরের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও শিক্ষার্থী ভর্তির সাড়া মিলছে না। করোনার প্রভাবে আয়ের পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত অভিভাবকরা এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। ফলে শিক্ষার্থী ভর্তি না থাকার কারণে অচিরেই রাজশাহীর কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো আগামী মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যাবে বলে ধারণা করছি।
এ বিষয়ে মহানগরীর বিভিন্ন কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ বিরতির পর স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চালালেও সাড়া মিলছে না। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে সন্তানদের ভর্তির ব্যাপারে অভিভাবকরা একপ্রকার অনিহা প্রকাশ করছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীর অভিভাবকরাই সরকারী স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করিয়েছেন। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে চলতি বছরে শিক্ষার্থী ভর্তি নেই বললেই চলে। যতটুকু শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে তা দিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো সম্ভব না বলে মনে করছেন কিন্ডারগার্টেন স্কুল কতৃপক্ষ। আর এতে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যে তার স্কুল বন্ধ ঘোষণা করার।
জানা গেছে, রাজশাহীতে এসোসিয়শেন ভুক্ত ৩৫০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। অ্যাসোসিয়েশন ভুক্ত এছাড়াও রাজশাহীর আনাচে কানাচে গত ২০১৯ সালের অন্তত আরো ৫০টি প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে। করোনার কারণে গত বছরের মার্চ মাসে সরকারী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বন্ধ হয়ে যায় এসব কিন্ডাপরগার্টেন স্কুল। বিশেষ করে নতুনভাবে গড়ে তোলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই গত বছরের নভেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠান খুলেন। বিশেষ করে করোনার কারণে শতাধিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সরিয়ে নেওয়া হয় সাইনবোর্ড। আর বাকি স্কুলগুলো গত ডিসেম্বর থেকে খুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু তারপরেও ভর্তি নেই বললেই চলে।
তারা বলেন, হঠাৎ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর অভিভাবকরা একপ্রকার দ্বিধাদ্বন্দের মধ্যে পড়েছেন। তারা সন্তানদের আদৌ কিন্ডারগার্টেন স্কুলোতে ভর্তি করাবেন কি-না তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। শেষ মেষ অভিভাবকরা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে তাদের সন্তানদের ভর্তি না করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির সিদ্ধান্ত নেন। কারণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সুযোগ সুবিধা বেশি। নিরাপত্তার বিষয়টিও রয়েছে। বিশেষ করে সরকারী স্কুলে ভর্তি করানোর পর ফি বই, বেতন নেই, ফি টিফিন, আবার মেধা ভিত্তিতে মাসিক বেতন পর্যন্ত দেয়া হয়। সব দিক থেকে বিবেচনা করে এখন অভিভাবকরা আর বেসরকারী কিন্ডারগার্টেন স্কুলোতে তাদের সন্তানদের ভর্তি করতে চাচ্ছেন না। যার কারণে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তি নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মার্চ মাস পর্যন্ত দেখার পর অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ শিক্ষার্থী ভর্তি না হলে শিক্ষকদের বেতন হবে না, হবে না ঘর ভাড়া। মালিক পক্ষ মনে করেছিলেন এবার আশানুরূপ শিক্ষার্থী ভর্তি হলে বিগত দিনের লোকসান কিছুটা হলেও উঠবে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো। শিক্ষার্থী ভর্তির পরিমাণ বেশি হওয়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থী সংকটে পড়েছে এসব স্কুল। অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের বিগত দিনের বাড়ি ভাড়া, শিক্ষক কর্মচারিদের মোটা অংকের বেতন বকেয়া পড়ে আছে। এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালাতে হলে বাড়ি ভাড়া ও শিক্ষক কর্মচারিদের বেতন পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু শিক্ষার্থী ভর্তির যে হার তাতে এই মোটা অংকের টাকা মালিকদের পক্ষে পরিশোধ করতে পারবে না। এ কারণে প্রতিষ্ঠানের মালিকগণ বলছেন, এ অবস্থার উত্তরণ মার্চ মাসের মধ্যেও না হওয়ার শঙ্কা থেকে আগামী মাসেই অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভাবছে সকলেই।
বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন স্কুল মালিকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর চাহিদা পূরণ না হলেও মোটামোটিভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। কিন্তু এবার এই চিত্র পুরোটাই উল্টো। গত ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত নামিদামি কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতেই কোটা পূরণ হয়নি।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহী মহানগর কমিটির সভাপতি রফিক আলম বলেন, বকেয়া বেতন পরিশোধের আশঙ্কায় অভিভাবকরা যোগাযোগ করছেন না। আর দুই একজন ভর্তি হলেও বকেয়া পরিশোধের ধাক্কা থেকে রেহায় পেতে প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন করছে।
তিনি বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্দোলন করা হয়েছে। এ বিষয়ে গত বছরের ১২ মে মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। সরকার চাইলে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বাচিয়ে রাখতে পারতো। প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আছে। তাদের চিন্তা ছিল এবার শিক্ষার্থী ভর্তি হলে সেই ঋণ কিছুটা হলেও মাথা থেকে নামবে। কিন্তু এখন সেই ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে গেছে। স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠান চালানো কারোই পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোনো রাস্তা দেখছে না মালিকরা।
তিনি আরো বলেন, মহামারি করোনায় লকডাউন চলমান অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের আওতায় রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাধ্যমে একবার শিক্ষক-কর্মচারীদের মাঝে ৫ কেজি চাউল ও ২ কেজি করে আলু প্রদান করা হয়েছিল। তবে আত্মসম্মানের জায়গা থেকে অনেক শিক্ষকই তা নেননি। কিন্তু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যাবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। মহামারি করোনার ছোবলে সর্বশান্ত হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ অভিভাবকরা সন্তানদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখা নিয়ে ভাবনার পরিবর্তে কী খেয়ে বেঁচে থাকবেন তা চিন্তায় রয়েছে। আজকের তানোর