শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৯:০৮ am

সংবাদ শিরোনাম ::
মুক্তিযোদ্ধার ভাস্কর্য কোথাও বসাতে না পেরে বিক্রি করলেন ভাঙারির দোকানে রাজনৈতিক দলকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা নেই : আনন্দবাজারকে জামায়াতের আমির আগামী তিন মৌসুমের জন্য আইপিএলে যে ১৩ ক্রিকেটারের নাম দিল বিসিবি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েও কাজ থামিয়ে রাখেননি অভিনেত্রী হিনা খান নগরীতে সন্ত্রাসি কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে ১১ জন গ্রেপ্তার তানোরে সার বিতরণে অনিয়ম ও পাঁচার রোধে হট্টগোল মারপিট দুর্গাপুরে হোজা নদী পুন:খনন ও দখলমুক্ত দাবিতে ইউএনও’কে স্মারকলিপি রাজশাহীতে সমন্বয়ক পেটানোর ব্যাখ্যা দিল মহানগর ছাত্রদল আঘাতের দাগে সম্পর্কের রূপান্তর ! রাজু আহমেদ তানোরে শিক্ষক সমিতিকে নিজ পকেটে রাখতে মরিয়া বিএনপি নেতা মিজান অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে চান জেড আই খান পান্না নগরীতে বিএনপি নেতাকে ছুরিকাঘাত আগামী ২৯ নভেম্বর খুলছে রাজশাহী সুগার মিল জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের স্মরণে স্মরণসভা রাজশাহীতে যুবলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ১১ বাগমারা জাতীয় পার্টির সভাপতি আবু তালেবের ইন্তেকাল তানোরে মসজিদের এসি অফিসার্স ক্লাবে, ইমামের অর্থ আত্নসাৎ প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তানোরে বিএনপির কর্মীসভা নগরীতে ছাত্রলীগ নেতাসহ বিভিন্ন অপরাধে ৮ জন গ্রেপ্তার লীজকৃত পুকুর দখল, মালিককে বুঝিয়ে দিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ
তাকবীরে তাশরীকের গুরুত্ব : দুধরচকী

তাকবীরে তাশরীকের গুরুত্ব : দুধরচকী

হজ ও কোরবানির মাস জিলহজ এলেই তাকবিরে তাশরিক পড়ার গুরুত্ব বেড়ে যায়। অথচ বছরজুড়েই মুমিন মুসলমান তাকবিরে তাশরিক পড়েন। তবে হজ ও কোরবানির মাসে নির্ধারিত ৫ দিন ২৩ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের পর তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব বা আবশ্যক। তাকবিরে তাশরিক আবশ্যক হওয়ার সূচনার ঘটনাও চমৎকার। এর গুরুত্ব, তাৎপর্য এবং ফজিলতও অনেক বেশি। তাকবিরে তাশরিক কীভাবে শুরু হয়েছিল?

তাকবিরে তাশরিক হলো মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও প্রশংসার ঘোষণা। আর কোরবানি হলো আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের আরো বেশি প্রিয় হওয়ার মাধ্যম। কোরবানি ও তাকবিরে তাশরিক এক সুতোয় গাঁথা। কোরবানির সঙ্গে তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

আরবি জিলহজ মাসে হজ সম্পাদন করতে হয় আবার এ মাসে হজের নির্ধারিত দিনগুলোর প্রথম দিন ফজর নামাজ থেকে শুরু করে হজের শেষ দিন সূর্যাস্তের আগ অর্থাৎ আসর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত নামাজে আদায় করতে হয়। আর এ সময়ের মধ্যে ১০-১২ জিলহজের মধ্যে আল্লাহর জন্য কোরবানি করতে হয়।

৫ দিন তাকবির পড়তে হয় আর এর মধ্যে ৩ দিন কোরবানি করা যায়। হজ, তাকবির ও কোরবানির মধ্যে রয়েছে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের এক নিবিড় সম্পর্ক। হজ ও কোরবানি যেমন ঐতিহাসিক তাৎপর্যমণ্ডিত তেমনি তাকবিরে তাশরিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্যের দাবি রাখে।

হজ কোরবানি ও তাকবিরে তাশরিকে সুসম্পর্ক :
হজের মাস ও দিনক্ষণে তাকবিরে তাশরিক ও কোরবানি আদায় করতে হয়। যে দিন থেকে হজ শুরু হয় সেদিন থেকেই তাকবিরে তাশরিক শুরু করতে হয়। আবার সর্বশেষ যেদিন যে সময় মিনা ত্যাগ করতে হয়, সে সময়ই তাকবিরে তাশরিক পড়া শেষ করতে হয়। আর এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে হজরত ইবরাহিম ও ইসমাইল আলাইহিস সালামের স্মৃতি বিজড়িত ঘটনা ও ইতিহাস।

কোরবানির ইতিহাস সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা কুরআনে ঘোষণা করেন-

فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعۡیَ قَالَ یٰبُنَیَّ اِنِّیۡۤ اَرٰی فِی الۡمَنَامِ اَنِّیۡۤ اَذۡبَحُکَ فَانۡظُرۡ مَاذَا تَرٰی ؕ قَالَ یٰۤاَبَتِ افۡعَلۡ مَا تُؤۡمَرُ ۫ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ شَآءَ اللّٰهُ مِنَ الصّٰبِرِیۡنَ

‘এরপর সে (ইসমাইল) যখন পিতার সঙ্গে চলাফেরা করার বয়সে উপনীত হল, তখন ইবরাহিম তাকে বলল, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখি যে, তোমাকে জবেহ করছি; এখন তোমার অভিমত কি? সে বলল, পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যধারণকারীর দলভূক্ত পাবেন।’ (সুরা সাফফাত : আয়াত ১০২)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তার সন্তান কোরবানির নির্দেশ দেন। এ নির্দেশের কথা সন্তানকে জানালে সে-ও তা মেনে নেন। অতঃপর হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম সন্তান ইসমাইলকে জবেহ করার প্রস্তুতি নিলে আল্লাহ তাআলা তার কোরবানিকে কবুল করে নিলেন।

তাকবিরে তাশরিকের সূচনা :
হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম যখন শিশুপুত্র ইসমাইলকে কোরবানির নির্দেশ পালনে জবেহ করার জন্য মাটিতে শোয়ালেন, তখন আল্লাহ তাআলা হজরত জিবরিল আলাইহিস সালামকে বেহেশত থেকে দুম্বা নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন।

হজরত ইসমাইলকে জবেহ করার আগে হজরত জিবরিল আলাইহিস সালাম যাতে দুম্বা নিয়ে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের ছুরির নিচে দুম্বা পৌঁছাতে পারেন, সে জন্য আকাশেই আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করতে থাকেন-

اَللهُ اَكْبَر – اَللهُ اَكْبَر (আল্লাহু আকবার; আল্লাহু আকবার) আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান।

হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাকবিরের আওয়াজ শুনে কাপড় দ্বারা আবৃত চোখ খুলে দেখলেন হজরত জিবরিল আলাইহি সালাম আনিত দুম্বা ইসমাইল আলাইহিস সালামের পরিবর্তে কোরবানি হয়ে যায়। তখন তিনি তাওহিদের কালেমা ও তার শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে বলেন-

لَا اِلَهَ اِلَّا اللهُ اَللهُ اَكْبَر (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার) অর্থাৎ আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই; আপনিই শ্রেষ্ঠ।

পিতার মুখে তাওহিদের এ অমূল্যবাণী শুনতে পেয়ে হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালামও মহান আল্লাহর প্রশংসা করে বলেন-

اَللهُ اَكْبَر وَ لِلهِ الْحَمْد (আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ) আল্লাহ মহান, সব প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য।’

ঐতিহাসিক তাৎপর্য ও গুরুত্ব :
এ তাকবিরে তাশরিক হজ পালনকারী, কোরবানি দাতাসহ মুসলিম উম্মাহর জন্য উল্লেখিত ৫ দিন তথা ২৩ ওয়াক্ত নামাজ শেষে পাঠ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক। তা শুধুই তাকবির নয় বরং তাকবিরে তাশরিক-

মহান আল্লাহর প্রেমের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শুকরিয়া আদায়ের তাসবিহ। যা একজন প্রধান ফেরেশতা, একজন দায়িত্বশীল নবি ও ভবিষ্যৎ নবির কণ্ঠ থেকে আগত তাসবিহ-এর সমষ্টি।

এ প্রশংসা বাক্য আল্লাহ তাআলার এতই পছন্দনীয় হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর জন্য কেয়ামত পর্যন্ত উল্লেখিত ৫দিন (৯জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত) ফরজ নামাজের পর তা পাঠ করা ওয়াজিব বা আবশ্যক।

সুতরাং মুসলিম উম্মাহর সব প্রাপ্ত বয়স্ক নারী-পুরুষ, মুকিম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী এবং জামায়াতে কিংবা একাকি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর প্রত্যেকের ওপর একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করা ওয়াজিব। আর তিনবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ফজিলত পূর্ণ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকবিরে তাশরিকের ইতিহাস জানার পর উল্লেখিত দিনগুলোতে শুকরিয়া হিসেবে এ ওয়াজিব কাজ ‘তাকবির’ আদায় করে তার একান্ত নৈকট্য অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক:- বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী ছাহেব। সূত্র : [email protected]

স্যোসাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

ads




© All rights reserved © 2021 ajkertanore.com
Developed by- .:: SHUMANBD ::.