সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৭:৪৫ am
ডেস্ক রির্পোট :
পাঁচ মানদণ্ডে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। এগুলো হলো প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, সক্ষমতা, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, করোনা মহামারির সময়ে ভূমিকা এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। প্রার্থী নির্ধারণে একাধিক জরিপ হয়েছে। আরও জরিপ চলছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সূত্রে এসব জানা গেছে। সূত্র বলেছে, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, জনগণের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারকারীরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। বর্তমান সব সংসদ সদস্যের মনোনয়নও নিশ্চিত নয়। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন আভাস দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, যাঁরা প্রার্থী হবেন তাঁরা যদি বর্তমান এমপি থাকেন, তাঁদের এলাকায় পারফরম্যান্স বিভিন্ন পয়েন্ট সিস্টেমে দেখা হবে। এলাকায় মানুষের সঙ্গে কতটুকু থাকেন, করোনাকালে, সম্মেলন এবং দলে ভূমিকা বিবেচনা করা হবে। এর মাধ্যমে যোগ্য এবং জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দলীয় অনেক এমপির বিরুদ্ধে নেতা-কর্মীদের অসন্তোষ আছে। নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিতর্কিত কর্মকাণ্ডেও জড়িয়েছেন কেউ কেউ।
এমপিদের কারও কারও অবস্থান নিজ নির্বাচনী এলাকায় নড়বড়ে। আগামী নির্বাচন কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে—এই বিবেচনায় নিয়ে যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে। প্রার্থী নির্ধারণে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে জরিপ চলছে। চলতি বছরেই কমপক্ষে দুটি জরিপ শেষ হবে।
দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, প্রার্থীর জনপ্রিয়তা ও সক্ষমতা, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, করোনার সময়ে ভূমিকা এবং মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এই পাঁচ মানদণ্ডে আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে। চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, জনগণের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারকারীরা মনোনয়ন পাবেন না।
বৃহস্পতিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় উপস্থিত একাধিক নেতা জানান, সভায় দলীয় সভাপতি বলেছেন, আগের ভোট হবে না। আগের সব এমপি এবার মনোনয়ন পাবেন না, সে আভাস দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা বলেন, দলীয় সভাপতি ইতিমধ্যে তাঁদের জানিয়েছেন, কাউকে মুখ দেখে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের ভোট এবং প্রার্থীর ভোট বিবেচনা করে মনোনয়ন পাবেন।
দশম সংসদের অর্ধশতাধিক এমপি একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। নবম সংসদের কাছাকাছি সংখ্যক এমপিও বাদ পড়েছিলেন দশম সংসদ নির্বাচনে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে এ সংখ্যা বাড়তে পারে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নির্বাচন সামনে রেখে দেড় বছর ধরে একাধিক জরিপ করা হয়েছে। প্রতি তিন মাস পর পর সেগুলোর ফলাফল দলকে জানানো হয়। গত মার্চ মাসের জরিপে প্রায় ২০০ আসনে আওয়ামী লীগের অবস্থান ভালো দেখা গেছে। সর্বশেষ জরিপে সেটা ১৮০-তে এসেছে। তাঁরা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিংসহ বিভিন্ন কারণে মানুষের মনে কিছুটা ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জরিপের ফলাফলেও এর প্রভাব পড়েছে। তবে ভোটের আগে দ্রব্যমূল্যসহ বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে তাঁরা মনে করেন।
এদিকে, বিভিন্ন মাধ্যমে করা জরিপের ফলাফলের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে। তাঁদের মতে, কিছু প্রতিবেদন দেখলেই বোঝা যায় সুবিধা নিয়ে তৈরি করা। তাই এবার দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংস্থা দিয়েও জরিপ করেছে। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা তাঁর ব্যক্তিগত উইং দিয়েও জরিপ করছেন বলে সূত্র জানায়।
জরিপের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আগামী জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী নির্ধারণে আমাদের জরিপ চলছে। জনপ্রিয়, সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য, দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং করোনা মহামারির সময় ইতিবাচক ভূমিকা যিনি রেখেছেন, তাঁকেই দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হবে।’
জানা গেছে, ঈদের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি বিরোধপূর্ণ জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতি শুক্র কিংবা শনিবার একটি করে জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ জেলা সফরের পাশাপাশি দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক জেলা সফর করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচার সম্পর্কে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে সজাগ করতে বলা হয়েছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের শুধু ঢাকায় না থেকে এলাকামুখী হতে বলেছেন দলীয় সভাপতি। রা/অ