শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৮:৩১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে চলছে ইট তৈরীর বিশাল যজ্ঞ। আব্দুস সোবহান মোল্লা নামের এক ব্যবসায়ী গড়ে তুলেছেন এই ইটভাটা। এখনো উৎপাদিত এএসএম নামের ইট পরিমাপে ছোট তৈরী করা হচ্ছে। ফলে এসব ইট কিনে প্রতারিত হচ্ছে ক্রেতারা। একই অবস্থা উপজেলার অধিকাংশ ভাটার ইটের পরিমাপের।
জানা গেছে, বাগমারা উপজেলায় ছোট বড় ৬৪টি ইটভাটা রয়েছে। কর্তৃপক্ষের নজরদারীর অভাবে ভাটা মালিকরা মানহীন ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী করছেন। সাধারণ ক্রেতাদের অভিযোগ ভাটা মালিকদের কারসাজিতে অতিরিক্ত দামে ইট কিনে তারা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।
এএসএম ভাটার ইট তৈরির একজন কারিগর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাটা মালিকরা আমাদের যে ফর্মা দিচ্ছেন আমরা সে ভাবেই ইট তৈরি করে আসছি। প্রতিটি ইটের ফর্মার দু’দিকে আকারে হাফ ইঞ্চি ছোট করা আছে। এর ফলে এক হাজার ইট তৈরির মাটিতে ৬০ পিস অতিরিক্ত তৈরি হয়।
এএসএম ইটভাটা দেখাশোনা করেন আব্দুস সোবহান মোল্লার ছেলে মকবুল হোসেন। পরিমাপে ছোট ইট তৈরীর বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে মকবুল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি তিনি। উল্টো গলাগালিজ করে তিনি ফোন কেটে দেন।
ইট পরিমাপে ছোট তৈরী করার বিষয়টি অস্বীকার করেন বাগমারা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমানে ইটের বাজারও প্রতিযোগিতার বাজার। কেউ যদি ইট ছোট তৈরী করে তবে তার ইট গ্রহকরা কেন কিনবে। মাপ দেখেই গ্রাহকরা ইট কেনে বলে জানান তিনি।
এদিকে, রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলাতে ১৪টি ইটভাটা চালু রয়েছে। এসব ভাটাতেও ইট তৈরীতে সরকারী নিয়ম অনুসার করা হচ্ছে না।
পুঠিয়া উপজেলা ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দীন বলেন, বিগত দিনে দু-একটি ভাটার ইট সাইজে ছোট তৈরি হতো। গত দুই বছর থেকে সকল ভাটা মালিকরা পরিমাপে কম করে একই মাপের ইট তৈরি করছে।
পুঠিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দীন মন্ডল বলেন, আমরা ইট কাঁচা অবস্থায় সঠিক মাপে তৈরি করি। পোড়ানোর পর সাইজ কি হলো সেটা দেখার বিষয় নয়। ক্রেতারা পছন্দ হলে নিবেন না হলে নয়। আমরা ক্রেতাদের জোর করে দিচ্ছি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ বলেন, ভাটা গুলো ইটের সাইজ ছোট করার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আর এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে ইট তৈরিতে পরিমাপ কম দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। যারা এই কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে অচিরেই মাঠে নামা হবে।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর রাজশাহী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, রাজশাহীতে নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী হচ্ছে। এ সব ইট কিনে ভোক্তারা প্রতারিত হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। তবে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়না।
রাজশাহী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অপূর্ব অধিকারী বলেন, মান সম্পন্ন মাটি দিয়ে সঠিক পরিমাপে ইট তৈরীর জন্য সকল ভাটা মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া আছে। নিম্নমান ও পরিমাপে ছোট ইট তৈরী দন্ডনিয় অপরাধ। এ নিয়ে তাদের কাছে এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি। আজকের তানোর