রবিবর, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৩:৩১ am
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আ.লীগ নেতা আলহাজ্ব এমদাদুল হকের নিকট চাকুরির নামে দেয়া ডোলেশনের টাকা ফেরৎ চাওয়ায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা জামাল উদ্দিনকে চেয়ারম্যান মারধর করে তাকে লাঞ্চিত করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি মঙ্গলবার দুপুরের দিকে উপজেলা পরিষদের পিআইও দপ্তরে ঘটেছে ঘটনাটি।
এঘটনায় ওইদিন বিকেলের দিকে ভারশোঁ ইউপি ছাত্রলীগ নেতা জামাল উদ্দিন বাদি হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে বিবাদী করে মান্দা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। চেয়ারম্যানের এমন ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সেই সাথে উত্তেজনাও বিরাজ করছে।
অভিযোগে জানা গেছে, মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের মজিদপুর ইসলামিয়া ফাযিল মাদ্রাসার কম্পিউটার অপারেটরপদে নিয়োগ পেতে ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনের কাছে বিগত ২০২২ সালের দিকে মাদ্রাসা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করেন। এরই প্রেক্ষিতে ছাত্রলীগ নেতা ৪ লক্ষ টাকা দেন। কিন্ত চেয়ারম্যানের যোগ্যতা না থাকার কারণে কৌশলে তার মেয়ে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবা সিদ্দিকা রুমাকে মাদ্রাসার সভাপতি করা হয়। তিনি সভাপতি হয়ে ছাত্রলীগ নেতার কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নেন। টাকার বিষয়গুলো জানতে পেরে মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হারুন অর রশিদ ও মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি মজিবর রহমানকেও ১ লাখ করে ২ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোল্লা এমদাদুল হক জানান, আমি কোন টাকা নেয়নি এবং জামালকে কোনভাবে লাঞ্চিত বা মারধর করা হয়নি। আপনি মদ সেবন অবস্থায় নাকি মারধর করেছেন জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেন, আমি অসুস্থ মদ সেবনের কোন প্রশ্নই আসে না। ভারশোঁ ইউপির চেয়ারম্যান এসব করিয়ে আমার সম্মানহানি করছেন। আমি মাদ্রাসার কমিটির কেউ নয় কেন টাকা নিব বলে এড়িয়ে যান।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাবুবা সিদ্দিকা রুমা বলেন, আমি কোন টাকা পয়সা নিইনি এবং জামালকে ভালো ভাবে চিনিও না। শুধু জানি এনামের একজন ছেলে ছাত্রলীগ করেন। আপনাকে নাকি কৌশলে আপনার পিতা মাদ্রাসার সভাপতি করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান তাকে সংশ্লিষ্ট বোর্ড থেকে সভাপতি করা হয়েছে।
মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল হারুন অর রশিদ জানান, আমি জামালের কাছ থেকে কোন টাকা আদায় করিনি। আপনি ও সহসভাপতি ১ লাখ টাকা করে ২ লাখ টাকা নিয়েছেন এবং ভারশোঁ ইউপি চেয়ারম্যানের সামনে সেটার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এসব তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার। এখনো নিয়োগ বোর্ড হয়নি। যোগ্যতা মোতাবেক চাকুরি দেওয়া হবে।
মাদ্রাসা কমিটির সহসভাপতি মজিবর রহমান টাকা নেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, প্রতিষ্ঠানের সুনাম নষ্ট করতে এক পক্ষ উঠেপড়ে লেগেছে। নিয়োগ বোর্ড হয়নি। কে চাকুরি পাবে আর কে পাবে না সেটা তো বলা অসম্ভব।
উপজেলার ভারশোঁ ইউপি ছাত্রলীগ সভাপতি জামাল উদ্দিন জানান, আমাকে চাকুরি দিবে বলে ১৫ লাখ টাকা চায়। আমি ধার দেনা ও জমি বন্ধক রেখে বিগত ২০২২ সালের দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ৪ লাখ। আর তার মেয়ে ভাইস চেয়ারম্যান মাদ্রাসা কমিটির সভাপতি রুমাকে ২ লাখ ও প্রিন্সিপালকে ১ লাখ এবং সহসভাপতিকে ১ লাখ করে মোট ৮ লাখ টাকা দিয়েছি। যা ভারশোঁ ইউপি চেয়ারম্যান অবগত আছেন। আমি বিশেষ মারফতে জানতে পারি ওইপদে প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়ে অন্যজনকে নিয়োগ দিবেন। এজন্য গত মঙ্গলবার উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে টাকা চাইতে গেলে লাঞ্চিত ও মারধর করেছেন তিনি। আর মদ সেবন অবস্থায় আমার কথা শোনা মাত্রই উত্তেজিত হয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন। আমি ইউপি ছাত্রলীগের সভাপতি। আমাকে যেভাবে লাঞ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান তা বলা লজ্জাকর।
উপজেলার ভারশোঁ ইউপি চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, টাকা লেনদেন আমার সামনে হয়েছে। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই সিসি ক্যামের চেক করলেই ধরা পড়বে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শামিম জানান, থানায় অভিযোগ পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, দলীয়ভাবে কোন অভিযোগ পায়নি। এমন পাওয়া গেলে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে।
উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক নাহিদ মুর্শেদ জানান, ঘটনা সম্পর্কে তিনি অজানা। বাহিরে ছিলাম আজ এলাকায় এসেছি। দলীয়ভাবে কোন অভিযোগ হলে দলের ফোরামে সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এবিষয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লায়লা আঞ্জুমান বানু বলেন, ঘটনা সম্পর্কে তিনিও অজানা। পরিষদ দপ্তরে লাঞ্চিত বা মারধর করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, এমন ঘটনা সম্পর্কে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে জানান ইউএনও। রা/অ