শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ১১:০৮ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক :
সাবেক যুবলীগ নেতা খায়রুল আলম জেমকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোখলেসুর রহমান।
একাধিক বৈঠকে তিনি সহযোগীদের এ নির্দেশ দেন। কয়েকদিন টার্গেট করার পর এ বছরের ১৯ এপ্রিল জেমের ওপর হামলা চালায় মেয়রের সহযোগীরা। ওই দিনই জেম মারা যান। ৪ দিন পর কিলিং মিশনের লিডার মেসবাউল হক টুটুলসহ পাঁচজন গ্রেফতার হয়।
৩ দিনের রিমান্ড শেষে টুটুল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সম্প্রতি পাওয়া তার জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে, ৩০ মে জেলা জজ আদালতে ৩২ আসামি আত্মসমর্পণ করলেও প্রধান আসামি মেয়র মোখলেসুর আদালতেই উপস্থিত হননি। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গ্যাং লিডার মেসবাউল হক টুটুল জানায়, জেলা কৃষক লীগের সম্মেলন নিয়ে খায়রুল আলম জেমের সঙ্গে আমার গ্যাঞ্জাম (ঝামেলা) শুরু হয়। সম্মেলনে এমপি ওদুদের পক্ষে জেম এবং মেয়র মোখলেসের পক্ষে আমি অবস্থান নেই। সম্মেলনে জেম বোমাবাজি করায় আমি আহত হই। সম্মেলনের পর মেয়রের সঙ্গে আমাদের একাধিক বৈঠক হয়। সেসব বৈঠকে জেমকে পঙ্গু করে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। আমরা কয়েকদিন ধরে টার্গেট করি। ১৯ এপ্রিল জেমের পিছু নেয় ইব্রাহিম। বিকালে একটি হোটেল থেকে জেম বের হলে আমি, রানা, শামীম ও ইব্রাহিম তাকে ঘিরে ধরি। সবার প্রথম হাতুড়ি দিয়ে আমি তার মাথার পেছনে আঘাত করি। রানাও হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চাকু দিয়ে ইব্রাহিম আঘাত করে। পায়ে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করে শামীম। জেম মাটিতে পড়ে গেলে আমরা পাশের গলি দিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসি।
জবানবন্দিতে টুটুল আরও জানায়, জেমের ওপর হামলার পর আমরা কাজীপাড়া দাঁড়াই এবং সেখান থেকে আমি মেয়রকে ফোন করে ঘটনা জানাই। তখন মেয়র বলেন-‘ঠিক আছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। ডিআইজি নুরুল ভাই বিষয়টি দেখবেন। আপাতত তোমরা দূরে কোথাও চলে যাও।’ এরপর আমরা গোদাগাড়ী গিয়ে খবর পাই জেম মারা গেছে। মাইক্রো ভাড়া করে আমরা ১০ জন ঢাকার পথে রওয়ানা হই। ঢাকার গাবতলী গিয়ে নিতাই রানা (ছোট), সাজু, বেলাল ও আজম নেমে যায়। আর আমি রানা, শামীম, মিলন ও ইব্রাহিম কক্সবাজারে যাই। সেখানে হোটেলের একটি রুমে আমি এবং বাকিরা অন্য রুমে ছিল। সেখান থেকে ডিবি পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহফুজুল হক চৌধুরী জানান, তদন্তের স্বার্থে কোনো তথ্য এ মুহূর্তে জানানো সম্ভব নয়। তদন্ত প্রতিবেদন দিতে একটু সময় লাগতে পারে। প্রধান আসামি পৌর মেয়র মোখলেসুর রহমানকে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। পেলে তাকে গ্রেফতার করা হবে।
জেমের বড় ভাই মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে পৌর মেয়র মোখলেসুর ও দুই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ ৪৮ জনকে আসামি করে জেম হত্যা মামলা করেন। এজাহারভুক্ত ৩৪ আসামি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নেয়। ৩০ মে ৩২ জন জেলা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে। তবে প্রধান আসামি পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোখলেসুর হাজির হননি। এরপর থেকে তিনি লাপাত্তা। আদালত ২৬ জনের জামিন বহাল রাখেন এবং ছয়জনকে কারাগারে পাঠান। কারাগারে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন-জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সামিউল হক লিটন, চরবাগডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান শহীদ রানা টিপু, আব্দুল কাদের, আলমগীর হোসেন, জামিল হোসেন ও মাহিন রেজা ওরফে মুমিন।
এ বছর ১৯ এপ্রিল ইফতার কিনে বাড়ি ফেরার পথে জেলা শহরের উদয়ন মোড় এলাকায় শিবগঞ্জ পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা খায়রুল আলম জেম সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। সূত্র : যুগান্তর