সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৩৭ pm
নিজস্ব প্রতিবেদক, তানোর :
রাজশাহীর তানোর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ভবন আকন্ঠ দূর্নীতিতে নিমর্জ্জিত হয়ে অনিয়ম-দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় এলজিইডি’র তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে নানামুখী অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী।
গ্রামগঞ্জের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ও স্কুলের ভবন নির্মাণ-সংস্কার কাজে এসব অনিয়ম হচ্ছে। ফলে ভাল মানের কাজ না হওয়ায় কিছুদিন পরপর সংস্কার করতে হচ্ছে। এতে একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদারের পকেট ভারী হলেও সরকারি অর্থের অপচয় হচ্ছে। উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) ভবন চত্ত্বরে গড়ে উঠা টেন পার্সেন্ট সিন্ডিকেট চক্রের এক সদস্যর মাধ্যমে প্রতিটি উন্নয়ন কাজের বরাদ্দ থেকে দশ পার্সেন্ট টাকা আর্থিক সুবিধা নেওয়া হয় বলেও ঠিকাদারদের মাঝে গুঞ্জন রয়েছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের জনৈক জনপ্রতিনিধি তার ঠিকাদার ভাইকে দিয়ে কতিপয় কর্মকর্তার নেপথ্যে মদদে এলজিইডি ভবন ঘিরে গড়ে তুলেছেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। ‘টেন পার্সেন্ট’ নামে পরিচিত সিন্ডিকেট চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো এলজিইডি ভবন। স্থানীয় ঠিকাদার সুত্রগুলো বলছে, তানোর এলজিইডি ভবনে এখন স্বাভাবিক নিয়মে কোন কাজ হয় না। কাজে ক্রটি থাক বা নাই থাক কতিপয় কর্মকর্তাকে চাহিদামত আর্থিক সুবিধা দিতেই হচ্ছে। তা না হলে কথিত অভিযোগে ঠিকাদারদের বিল আটকে দেয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আবার ‘টেন পার্সেন্ট’ সিন্ডিকেট চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের অনুগত ঠিকাদাররা নিম্নমানের কাজ, কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিল উত্তোলন, অর্থ ছাড়ে কমিশন আদায় সবমিলিয়ে এলজিইডি ভবনে এক অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানায়, ‘টেন পার্সেন্ট’ সিন্ডিকেট চক্র এলজিইডি’র প্রায় ৮০ ভাগ উন্নয়ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। উপজেলায় সড়ক ব্রিজ-কালভ্রাট যাই টেন্ডার দেয়া হোক না কেনো টেন পার্সেন্ট সিন্ডিকেট চক্র ব্যতিত সেই টেন্ডারের কার্যাদেশ পাবার অধিকার কারো নেই।
সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা জানান, উপজেলার বাধাইড় ইউপির গোয়ালপাড়া প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে নজিরবিহীন অনিয়ম করা হয়েছে। কলমা ইউপির ধঞ্জয়পুর প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে অনিয়ম ও ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই কার্পেটিং করা হয়েছে। সরনজাই ইউপির কাসাঁরদিঘি এলাকায় প্রায় ৮০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের একদিন পরেই রাস্তা দেবে গেছে ও পিচ উঠে গেছে। কালীগঞ্জহাট ও সরনজাই রাস্তা সংস্কার কাজে সিডিউল মোতাবেক কোনো কাজ হয়নি। যা হয়েছে তা একেবারে নিম্নমাণের। চাঁন্দুড়িয়া ইউপির হাড়দহ প্রায এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণেও ভয়াবহ অনিয়মের চিত্র ফুটে উঠেছে। পাঁচন্দর ইউপির মোহাম্মদপুর ও ইলামদহী খাল পুনঃখননে অনিয়ম। এছাড়াও কলমা ইউপির ঘৃতকাঞ্চন ও হাতিশাইল খাল পুনঃখননে অনিয়ম করা হয়েছে। ডাঙাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিল্লী হাটে মহিলা মার্কেট ইত্যাদি কাজ নানা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন উপকারভোগীরা। তারা আরো বলেন, সরেজমিন তদন্ত করা হলে এসব অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া যাবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে তানোর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী সাইদুর রহমান এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, একেবারে শতভাগ কাজ কোথাও হয় না। তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটু উনিশ-বিশ হতে পারে। নজরে আসলে সেটাও ঠিক করে নেয়া হয়। আর অনিয়ম বা দূর্নীতির কোনো সুযোগ নেই। তবে, এসব প্রকল্পের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য তিনি জানাতে পারেননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজশাহী এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, উপজেলা পরিষদের একটা নিজস্ব ফান্ড আছে। ওই ফান্ডের টাকায় স্কুলের কাজ হয়। এছাড়াও পরিষদ থেকেই টেন্ডার হয়। অতএব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলী সব জানেন। তারাই এসব বিষয় বলতে পারবেন।
কমিশন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কমিশন কে নেয় আর কমিশনের টাকা কে কাকে দেয় সে বিষয়টিও তারা জানেন। এসব বিষয় তার কোনো বক্তব্য নেই। এবিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদার জনৈক বোরহান বলেন, ৪৮ জন সাংবাদিককে খুশি করা হয়েছে। যদি এর পরেও তারা কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বা খবর করে তাহলে সেটা দুঃখজনক। রা/অ