সমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০১:৫৪ pm
আব্দুস সবুর, তানোর :
দেশ স্বাধীনের পর থেকে তীল পরিমানও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। পায়নি চলাচলের রাস্তা। জমির আইল দিয়েই চলতে হচ্ছে তাদের। যেন তারা দেশের নাগরিক নয়। আবার পাড়ার ভিতর দিয়ে যে রাস্তা আছে, তাও বর্ষা মৌসুমে ডুবে যায়। ঘর থেকে বের হতে পারে না কেউ। কাদা মাটির রাস্তা গিলছে পুকুর। জরুরি রোগীকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনের সময় হাসপাতালে নিতে পারা যায় না।
যেকোন নির্বাচন এলে মিথ্যে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরির চমক থাকে প্রার্থীদের। তাদের চকমপ্রদে সহজ সরল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসাধারণ ভোটও দেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য নির্বাচিত হওয়ার পর আর খোঁজ রাখে না কেউ। এমন বেহাল অবস্থার মধ্যে যুগযুগ ধরে অবহেলিত ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম মানবেতর ভাবে বসবাস করছেন রাজশাহীর তানোর পৌরসভার সিন্দুকাই গ্রামের পশ্চিমে ও তালন্দ ইউনিয়নের কালনা গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জনসাধারণ। ফলে তাদের দাবি একটাই চলাচলের জন্য এইচবিবি বা হেরিংবন্ড রাস্তা দ্রুত সময়ের মধ্যে করে দেওয়া হোক।
জানা গেছে, এ উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রচুর বসবাস। মহিলা পুরুষরা যুগযুগ ধরে কৃষি কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। বিগত ২০০৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত টানা প্রায় ১৫ বছর সরকারে আছেন আওয়ামী লীগ। তারপরও কোন নজর নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের। যেন তাদের শুধু ভোটের প্রয়োজন। ভোট হয়ে গেলে পাঁচ বছরের মধ্যে কোন জনপ্রতিনিধির নাগাল পাই না কেউ। উপজেলার রাস্তা ঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। শুধু হয়নি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পল্লীতে।
কালনা গ্রামের বাসিন্দা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, শুনিল, জেঠ্যা, অনিল ও ফটকিসহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে কোন উন্নয়ন হয়নি। মাটির রাস্তার দুপাশে পুকুর। প্রটেকশন ওয়ালের অভাবে অর্ধেক রাস্তা পুকুরে গেছে। আর দুয়েক বছর পর রাস্তাও থাকবে না। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় তারপরও যদি উন্নয়ন না হয় এর চেয়ে দু:জনক কি হতে পারে। আমরা সরকারের কাছে সাহায্য চায়না, আমরা রাস্তার উন্নয়ন চাই।
উপজেলার তালন্দ ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা নাজিমুদ্দিন বাবু বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় একাধিকবার কালনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাড়ার রাস্তার বিষয়ে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। শুধু আশ্বাস পেয়েছি, বরাদ্দ পায়নি। এদিকে, পৌর সদর ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সিন্দুকাই গ্রামের পশ্চিমে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাড়ার চলাচলের কোন রাস্তা নেই। জমির আইল দিয়ে যুগযুগ ধরে চলাচল করতে হচ্ছে তাদের।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নরেন, অনিল ও যোসেফসহ অনেকে জানান, প্রয়াত মেয়র ফিরোজ সরকার ভ্যান যাওয়ার মত রাস্তা করে দিয়েছিলেন। পরে জমির মালিকরা কেটে আইল বানিয়ে ফেলেছে। এখন আইল দিয়েই চলতে হচ্ছে। বর্তমান মেয়র বলেছিল নির্বাচিত হলে রাস্তা করে দেব। কিন্ত মেয়র হওয়ার পর আর দেখা নেই।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আলেনুর নামের এক মহিলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সে কর্মরত তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কেউ অসুস্থ হলে কয়েকজন মিলে কাঁধে করে রাস্তায় নিতে হয়। এসময়েও যদি চলাচলের রাস্তা না থাকে তাহলে কিসের এতো উন্নয়নের কথা বলেন সংশ্লিষ্টরা। আমাদের বাব দাদা থেকে শুরু করে চৌদ্দ পুরুষ মহিলারা নৌকায় ভোট দিয়ে আসছি এবং আমরাই প্রকৃত আওয়ামী লীগ। এতো দীর্ঘ সময় ধরে আ’লীগ সরকার দেশ পরিচালনা করছেন, এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এবং মেয়র নৌকার তাহলে কেন রাস্তা হয় না। সরকারের কাছে সাহায্য চায় না, শুধু চলাচলের রাস্তা চায়।
তানোর উপজেলা প্রকৌশলী সাইদুর রহমান বলেন, উপজেলার কালনা আদিবাসীপাড়ার রাস্তা ও প্রটেকশন ওয়ালের বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেছেন। জুন মাসের পরে প্রথম বরাদ্দ হবে, ওই বরাদ্দে রাস্তা ও প্রটেকশন ওয়াল হতে পারে। আর সিন্দুকাই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়া পৌরসভার মধ্যে। এখানে আমাদের তেমন কিছু করণীয় থাকে না। তারপরও এমপি স্যারকে বলে ব্যবস্থা করা হবে বলে এই প্রকৌশলী।
তানোর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না বলেন, জুনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে কালনা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লীর রাস্তা ও প্রটেকশন ওয়াল। আর সিন্দুকাই পল্লীর জনসাধারণ যাতে চলাচলের রাস্তা পায় সে বিষয়ে একান্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে। তা/অ