শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০০ am
নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুণ্ডুমালা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার (ইউনিয়ন ভূমি-উপসহকারী কর্মকর্তা) রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি জমির বিরোধীয় একপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগকারী কামরুজ্জামান হেনা বলেছেন, তহসিলদার রবিউল ইসলাম তার প্রতিপক্ষ জালাল উদ্দিনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে সম্প্রতি পক্ষপাতমূলক একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে। আর এর জেরে কামরুজ্জামান হেনা পড়েছেন বিপাকে। বৈধ প্রক্রিয়ায় জমি ক্রয় করে ভোগদখল করলেও তার প্রতিপক্ষ তাকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছেন। আর তহসিলদার তার প্রতিপক্ষের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাকে জমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রে জড়িত আছেন।
ভুক্তভোগী কামরুজ্জামান হেনা বলেন, তিনি ও তার অপর দুই সহযোগী গত নভেম্বরে মুণ্ডুমালা বাজারের ১৩ শতক জমি প্রকৃত মালিক জাইদুর রহমানের কাছ থেকে ক্রয় করেন। এরপর জমির দখল বুঝে নিয়ে সেখানে কয়েকটি দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা শুরু করেছেন।
এদিকে জমির প্রকৃত মালিক জাইদুর রহমানের ভাই জালাল উদ্দিন অন্যের কাছে জমি বিক্রির বিষয়টি মানতে না পেরে শুরু থেকেই তাকে দখল না দেওয়াসহ উচ্ছেদে নানা তৎপরতা চালিয়ে আসছেন।
এর ফলে কামরুজ্জামান হেনার ব্যবসার বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে কামরুজ্জামান হেনা ক্রয়কৃত জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নিরাপত্তা চেয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন প্রতিকার পাওয়ার আশায়।
এদিকে এডিএম আদালত থেকে এ বিষয়ে তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রতিবেদন চেয়ে আদেশ দেন। ইউএনও সরেজমিন বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে তদন্তপূর্বক মুণ্ডুমালা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তাকে (তহসিলদার) প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি তহসিলদার রবিউল ইসলাম তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা বরাবর একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন; যাতে জমির মালিকানা ও দখল কামরুজ্জামান হেনার প্রতিপক্ষ জালাল উদ্দিনের হাতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
বিষয়টি অবগত হয়ে কামরুজ্জামান হেনা তহসিলদারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং মিথ্যা প্রতিবেদন প্রত্যাহারের জন্য তাকে অনুরোধ করেন। কিন্তু তাতেও তহসিলদার রবিউল ইসলাম কর্ণপাত করেননি। বরং প্রতিপক্ষের পক্ষে সাফাই দেন। জমি ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য হেনাকে বলেন।
জমির মালিক হেনা আরও বলেন, তারা ১৩ শতক জমি কিনতে প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ করেছেন। দোকান করতে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। রড সিমেন্টের দোকান দিয়েছেন বিপুল টাকা খরচ করে। এখন প্রতিপক্ষ জালাল উদ্দিন তাকে উচ্ছেদ করতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র করছেন।
সন্ত্রাসী দিয়ে তাকে প্রতিনিয়ত হুমকি দেওয়া হচ্ছে তাকে। জায়গা ছেড়ে না গেলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিচ্ছে প্রতিপক্ষ। এজন্য তিনি এডিএম আদালতে মামলা করেছেন নিরাপত্তা চেয়ে। তবে তহসিলদার মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করায় তিনি বিপাকে পড়েছেন।
গত বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, কামরুজ্জামান হেনা ক্রয়কৃত জমিতে দোকান করে রড সিমেন্টের ব্যবসা করছেন।
প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মুণ্ডুমালা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি প্রতিবেদনের বিষয়ে কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নন। ইউএনও সাহেবের নির্দেশে আমি প্রতিবেদন দিয়েছি। উনি যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবেই দিয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য কর্মস্থল ত্যাগকারী তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, তিনি তানোর থেকে বদলি হয়ে গেছেন। তবে প্রতিবেদনটি পড়ে দেখার সময় পাননি। তাই সেই বিষয়ে কিছু তার জানা নেই।
অন্যদিকে কেন কামরুজ্জামান হেনাকে উচ্ছেদের চেষ্টা করা হচ্ছে- জানতে চাইলে প্রতিপক্ষ জালাল উদ্দিনের ছেলে আহম্মদ হোসেন সিজার বলেন, আমার চাচা জমিটা হেনার কাছে বিক্রি করেছেন। আমরাই কিনতে চেয়েছিলাম। আমাদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু আইন অনুযায়ী আমরা জমির অংশীদার। আমরা কিনতে চাইলে আমাদেরই প্রাপ্য সেই জমি। তবে উচ্ছেদের কোনো চেষ্টা করা হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
উল্লেখ্য, মুণ্ডুমালা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধকে পুঁজি করে দুই পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খারিজ থেকে শুরু করে নানা ধরনের কাজগপত্র প্রদানের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। আজকের তানোর