শনিবর, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, সময় : ০৪:০৭ am
নিজস্ব প্রতিবেদক :রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থীদের মধ্যে নগদ টাকা বেশি আছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মুরশিদ আলমের। নির্বাচনে তিনি হাতপাখা প্রতীকে লড়ছেন। মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস মুরশিদ আলম মহানগরীর একটি কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক। কিন্তু হলফনামায় শিক্ষকতা পেশার কথা গোপন করেছেন তিনি। পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন ধর্মীয় আলোচক ও টিউশনি করেন।
চার মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে বেশি শিক্ষিত জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলনের মুরশিদ আলম। তারা দুজনেই মাস্টার্স পাস। আর আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ইংরেজিতে বিএ (অনার্স) ও এলএলবি পাস। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা নেই। তিনি স্বাক্ষর-জ্ঞানসম্পন্ন।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়রপদে হেভিওয়েট প্রার্থী আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। পাঁচ বছরে মেয়র থাকাকালে লিটনের সম্পদ বেড়েছে প্রায় চারগুণ। কিন্তু নগদ মাত্র সাত লাখ ২ হাজার ২৩৭ টাকা। জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের নগদ আছে তিন লাখ টাকা। জাকের পার্টির প্রার্থী অ্যাডভোকেট লতিফ আনোয়ারের নগদ টাকার পরিমাণ এক লাখ টাকা। নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা প্রার্থীদের নিজ নিজ হলফনামা থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
হলফনামায় দেওয়া তথ্য মোতাবেক হাতপাখার প্রার্থী মুরশিদ আলমের কোনো নির্দিষ্ট পেশা নেই। বাৎসরিক আয় মাত্র তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু নগদ ১২ লাখ টাকার উৎস কী- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাহফিলে বক্তা হিসেবে ধর্মীয় আলোচনা করে এ টাকা আয় করেছেন। আর কাজলা এলাকার মাদ্রাসাতুস সাহাবা নামে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করলেও শুধু মোটরসাইকেলের তেল খরচ পান। কোনো বেতন পান না বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন : বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হচ্ছেন রবিউল
জানা গেছে, ২০১৩ সালে সিটি নির্বাচনের আগে হলফনামায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। পাঁচ বছর পর এখন তার বার্ষিক আয় দুই কোটি ৯৮ লাখ ১০ হাজার টাকা। তিনি মৎস্য চাষ থেকে বছরে দুই কোটি ৪২ লাখ টাকা, কৃষিখাত থেকে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা, বাড়ি ও দোকান ভাড়া থেকে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেয়র হিসেবে ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা সম্মানী আয় দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে মৎস্য চাষ থেকে তার মাত্র ২০ লাখ টাকা, ব্যবসা থেকে ১২ লাখ, কৃষিখাত থেকে এক লাখ ৬০ হাজার, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০০ টাকা, শেয়ার থেকে ২০ লাখ ১০ হাজার এবং অন্যান্য খাত থেকে ১৯ লাখ ৯ হাজার ৭০৮ টাকা আয় ছিল। ২০১৮ সালের তুলনায় এখন লিটনের বার্ষিক আয় ৩ দশমিক ৮০ গুণ বেশি।
২০১৮ সালে লিটনের অস্থাবর সম্পদ ছিল এক কোটি ৭৫ লাখ ১৩ হাজার ৫০৮ টাকার। এরমধ্যে নগদ মাত্র ৩০ হাজার টাকা, ব্যাংকে এক কোটি ৩৮ লাখ ৫৩ হাজার ৪০৮ টাকা এবং ৩৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার একটি জিপগাড়ি ছিল। এছাড়া উপহার পাওয়া ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ছিল তার। আর এখন অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে চার কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকার। এর মধ্যে হাতে আছে নগদ মাত্র সাত লাখ ২ হাজার ২৩৭ টাকা। তবে আছে ব্যাংকে দুই কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৮০০ টাকা, ৪০ লাখ ৮৫ হাজার টাকার শেয়ার, ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকার জিপ ও প্রাইভেটকার, ১৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ২৫ লাখ টাকার ইলেট্রনিক্স সামগ্রী। এবার ৬ লাখ টাকা দামের একটি শটগান ও একটি পিস্তলও কিনেছেন লিটন।
এবার লিটনের জমিও বেড়েছে। এখন ৪ দশমিক ৬৩ একর কৃষি জমির মালিক তিনি। মহানগরীর উপশহরে আছে একটি তিনতলা বাড়ি, ঢাকার বনানীতে দুটি অ্যাপার্টমেন্ট এবং ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার মৎস্য খামার। ২০১৮ সালে লিটনের কৃষিজমি ছিল মাত্র ১ দশমিক ৬৩ একর। এখনকার মতো তখনও রাজশাহীতে তিনতলা বাড়ি ও ঢাকায় দুটি অ্যাপার্টমেন্ট ছিল। পাঁচ বছরে ৩ একর জমি ও মৎস্য খামার হয়েছে লিটনের। ২০১৮ সালে লিটনের কোনো ঋণ ছিল না। এখন অবশ্য গাড়ি কিনতে গিয়ে পূবালী ব্যাংকে ২০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭ টাকা ঋণ হয়েছে তার। লিটন তার পেশা হিসেবে আইনজীবী লিখলেও এ খাত থেকে তার কোনো আয় নেই। তার নামে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। ১৯৯৬ সালে দুটি মামলা হলেও তা প্রত্যাহার হয়েছে।
আরও পড়ুন : নিয়ম মেনে চলছেন লিটন-স্বপন, আইন ভেঙে মাঠে মুরশিদ
নিজের সম্পদ বাড়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘আমি বৈধভাবেই সম্পদ উপার্জন করেছি। সম্পদ বিবরণীতে আয়ের উৎসও উল্লেখ করা আছে। আমি ট্যাক্স দিই। আর আমার স্ত্রী ব্যবসা করেন। তিনি ভারত থেকে পাথর আমদানির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। মাছেও ব্যবসা আছে। তিনিও ট্যাক্স দেন। কাজেই আমাদের অবৈধ কোনো সম্পদ বা টাকা নেই।
জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপনের পেশা ব্যবসা। তিনি স্বাক্ষর-জ্ঞানসম্পন্ন। সিজন্যাল পণ্য ক্রয়-বিক্রয় করেন তিনি। তার বাৎসরিক আয় মাত্র তিন লাখ টাকা। নগদ হাতেও আছে তিন লাখ টাকা আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জমা আছে ৫০ হাজার টাকা। নিজের আছে ১০ ভরি স্বর্ণ। ইলেকট্রনিক ও আসবাবপত্র আছে ৮০ হাজার টাকার। কৃষিজমি আছে সাড়ে চার বিঘা আর অকৃষি জমির পরিমাণ ১২ শতক। স্ত্রী ও পরিবারের অন্য কারো নামে কোনো সম্পদ নেই।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়রপ্রার্থী মুরশিদ আলম কামিল পাস। তার পেশা ধর্মীয় আলোচক ও টিউশনি। তার বাৎসরিক আয় তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা। তবে মুরশিদের হাতে নগদ আছে ১২ লাখ টাকা। নিজের আছে ১০ ভরি স্বর্ণ ও একটি মোটরসাইকেল। এছাড়া তেমন কোনো সম্পদ নেই।
আরেক মেয়রপ্রার্থী জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার এলএলএম পাস। পেশায় আইনজীবী। তার পেশা থেকে বাৎসরিক আয় তিন লাখ টাকা। হাতে আছে নগদ এক লাখ টাকা। ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও আসবাবপত্র আছে ৫০ হাজার টাকার। এছাড়া অন্য কোনো ধরনের সম্পদ নেই লতিফের। সূত্র : আমাদের সময়